কর্মপ্রার্থীদের কর্মলাভ কিছু বিলম্ব হবে। প্রেম-ভালোবাসায় সাফল্য লাভ ঘটবে। বিবাহযোগ আছে। উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় থেকে ... বিশদ
বিয়ে একটি সামাজিক বন্ধন। এখনও এই সময়ে দাঁড়িয়ে বিয়ের আগে পাত্র-পাত্রী নির্বাচনে আমরা কুষ্ঠি বিচার করি। যাতে তাদের বিবাহিত-জীবন সুখের হয়। যদি পাত্র-পাত্রীর মধ্যে কুষ্ঠি বিচার করে অর্থাৎ জন্মছকে মিল হয় ঠিকমতো তাহলে আমাদের অভিভাবকরা মনে করেন রাজযোটক। কিন্তু কুষ্ঠি বিচারের চেয়ে রক্তের বিচার কতটা জরুরি সে সম্বন্ধে অনেকেই ওয়াকিবহাল নন। অথচ সুস্থ জীবনযাপনের জন্য বিয়ের আগে রক্ত পরীক্ষা করার বিশেষ প্রয়োজন, তবেই থ্যালাসেমিয়ার মতো আরও অনেক দুরারোগ্য ব্যাধি রোধ করা সম্ভব।
কাগজের বিয়ে বা রেজিস্ট্রি করে বিয়ে-র কোনও গুরুত্ব দিতে চান না লোহা-লক্কড়ের ব্যবসায়ী রাধাকান্তবাবু। তিনি চান কুষ্ঠিতে কুষ্ঠিতে মিল হলে তবেই ছাঁদনাতলার বিয়ে। জয় রাধাকান্তবাবুর একমাত্র ছেলে। উচ্চমধ্যবিত্ত পরিবার তাদের। তবে শিক্ষাদীক্ষা নেই বললেই চলে। তার ছেলে জয়ের ব্যক্তিত্বের বিকাশ সেভাবে হয় না। সে বিভিন্ন ধারাবাহিকে অভিনয় করে। তার বাবা অত্যন্ত ডমিনেটিং। তাদের বাড়ির চাকর বঙ্কার সঙ্গে তার খুব ভাব। সেও ছোটবাবুকে খুব ভালোবাসে। রাধাকান্তবাবু উচ্ছের রস খেয়ে দিন শুরু করেন। পর্ণা শিক্ষকের মেয়ে। পর্ণাকে সে ভালোবাসে। দীর্ঘদিন প্রেম করার পর বিয়ের জন্য চাপ দেয় পর্ণা জয়কে। জয় তো বাবার ভয়ে তটস্থ থাকে। সে কিছুতেই বাবার সামনে নিজের বিয়ের কথা বলতে পারে না। তখন পর্ণা তাকে ভয় দেখায়। বলে তুমি সবকিছু লিখে বাবাকে জানাও। এদিকে বঙ্কা বাবুর সামনেই সেকথা বলে। জয়ের মা আগে থেকেই সবকিছু জানত। সে রাধাকান্তবাবুকে বলে এখন আর বলে কিছু লাভ নেই। রাধাকান্তবাবু কুষ্ঠি বিচার করার জন্য বললে তার স্ত্রী বলে তুমি চঞ্চলানন্দের কাছে কুষ্ঠি বিচার করো। তবেই হবে বিয়ে। বিয়ের জন্য পাত্রীর বাড়িতে তার বাবা-মা’র সঙ্গে কথা বলতে যায় তারা।
পাত্রীর বাড়িতে পাকা কথা বলতে গেলে পর্ণার বাবা সবকিছু দিতে রাজি হয়। কিন্তু তিনি বলেন, আমাদের ডাক্তার প্রেসক্রিপশনে কয়েকটি রক্ত পরীক্ষার কথা লিখেছেন। আমি চাই বিয়ের আগে সেগুলি যেন করা হয়। এই শুনে রাধাকান্তবাবু বলেন, আমার ছেলের রক্ত নিয়ে পরীক্ষা করা হবে? কেন সে কি দুশ্চরিত্র? তার কি কোনও দোষ আছে? তখন রাধকান্তবাবু রেগে গিয়ে বলেন এ বিয়ে ক্যানসেল। হবে না বিয়ে। এদিকে জয় বলে আমি হীরের আংটি পরিয়ে দিয়েছি পর্ণাকে এখন আর বিয়ে ক্যানসেল করা যাবে না। শেষে পর্ণাকে বিয়ে করেই বাড়ি নিয়ে আসে জয়। তখন তার বাবা ফলিডল খায়। কিন্তু মা বলেন, কুষ্ঠি ও রক্ত পরীক্ষা দুটোতেই মিল রয়েছে দু’জনের তাহলে বিয়ে না মেনে নেওয়ার কী আছে?
ডাঃ অমিতাভ ভট্টাচার্যের রচনা ও নির্দেশনায় নাটকটিতে অভিনয় করেন তিনি নিজেই। রাধাকান্তরূপী অমিতাভবাবুকে খুব সুন্দর মানায়। হাসি মজার ছলে একটা ছোট বার্তা দেওয়ার মধ্যেও বেশ অভিনবত্ব রয়েছে। অন্যান্য চরিত্রে মধুবালা, ধৃতিকণা ভট্টাচার্য, পর্ণার সাবলীল, স্বতঃস্ফূর্ত অভিনয়ে লক্ষ্মী চক্রবর্তী প্রাণ পায়। জয় আর জে নায়ার ইসলামকে মন্দ লাগে না। অন্যান্য চরিত্রে সন্দীপ রায় (স্বামী চঞ্চলানন্দ), সুকান্ত মুখোপাধ্যায় (বটকৃষ্ণ), ত্রিলোকনাথ থান্ডার, সুব্রত সরকার, অর্পিতা দাস, আকাশ পাল যথাযথ।
নারকেলডাঙা নর্থ পাঞ্চালী নিবেদিত সলিল চৌধুরির ছোট ছড়া অবলম্বনে নাটক ‘কর্ণ কুন্তী কিস্সা’ মঞ্চস্থ হল। নাট্যশিল্পী, কবি সাহিত্যিক, গায়ক এরা আগাগোড়াই বঞ্চিত। যতদিন যায় বঞ্চনার পরিমাণ বাড়তে থাকে। তাই নাট্য-কর্মীরা ঠিক করেন রাজ্যের সংস্কৃতি মন্ত্রীর সামনে তাদের এই বঞ্চনার কথা নাট্যকলার মাধ্যমে তুলে ধরবেন। সেইমতো শুরু হয় নন্দনের বৃক্ষতলে নাট্য পরিবেশনা, যা দেখে মন্ত্রী কিছুটা হতচকিত হয়ে পড়েন। কারণ নাট্যকর্মীদের দাবি ছিল ন্যায্য। কর্মক্ষেত্রে তাদের কোনও কোটা থাকবে না কেন? খেলোয়াড় বন্ধুদের কোটা থাকা সত্ত্বেও তারা কেন বঞ্চিত হবে? এখানেই মন্ত্রী মহাশয় অছিলায় অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করেন। কিন্তু নাট্যবন্ধুরা কিছুতেই তাঁর পিছু ছাড়েন না। ওদিকে জগা মন্ত্রীর রোজকারের দাড়ি কামানোর নাপিত লক্ষ করেন মন্ত্রীর যে একখানি কান ছিল তার জায়গায় গাধার কান রয়েছে। ভয় পেয়ে জগা চলে যেতে থাকে কিন্তু মন্ত্রীর শাসানিতে, জগার বউ কুন্তীর পরামর্শমতো কানপুরে কানেহারি দোকানে পৌঁছান। সেখানে বিফল হয়ে কানুবাবুর উপদেশমতো দিল্লির পার্লামেন্ট হাউসে। সেখানে গিয়ে দেখেন সব মন্ত্রীরই দু’কান কাটা।
নাটকের মধ্যে দিয়ে বলা হয়েছে রাজ্যের মন্ত্রী, আমলাদের এক কান কাটা হলেও কেন্দ্রের সাংসদ বা মন্ত্রীদের দু’কান কাটা। কিন্তু উপস্থাপনার অস্পষ্টতায় রাজনৈতিক বিষয়টি তেমন জোরালো মনে হয় না। অরবিন্দ ঘোষ নির্দেশিত ও প্রদীপ মৌলিক রচিত নাটকটি ব্যঙ্গাত্মকভাবে মূলত কমেডির ওপর ভিত্তি করে পরিবেশিত হলেও বিষয়ের গভীরে প্রবেশ করার জন্য যে নাটকীয়তার প্রয়োজন ছিল সেটা তেমনভাবে প্রকাশ পায় না। তাই গল্পটাও খুব জমল না, আবার হাস্যকৌতুকটা মন ছুঁতে অসমর্থ হল। তবে গোটা বিষয়টার গানের প্রয়োগ ও গায়নরীতিটা মনোগ্রাহী করে তোলেন সুজিত চক্রবর্তী। অভিনয়ে মন্ত্রীর চরিত্রে রাজীব ঘোষ, কুন্তীরূপী সুপ্রিয়া পাল ও জগার ভূমিকায় বিশ্বনাথ সরকার এককথায় অনবদ্য। ভালো লাগে কানাইয়ালালের ভূমিকায় নানক মদনানীকে। অন্যান্য চরিত্রে অরূপ মুখার্জি, দেবজিৎ হালদার, সুমি ঘোষ, রীতা সরকার, সুপর্ণা ঘোষ, দীপান্বিতা ঘোষ, সন্দীপা মুখার্জি, মনোজিৎ মুখার্জি, দয়াল সরদার, অমিত ঘোষ, মনমন পাল। অরুন্ধতী বিশ্বাসের আবহ ও যন্ত্রসঙ্গীতে সুবীর বিশ্বাস নাটকটিকে বাস্তব রূপ দিতে সাহায্য করেছেন।
নাটক: কাগজের বিয়ে ও কর্ণ-কুন্তী কিস্সা
প্রযোজনা: বেলঘরিয়া থিয়েটার অ্যাকাডেমি ও নর্থ পাঞ্চালী