নিকটজনের স্বাস্থ্য সমস্যায় মানসিক অস্থিরতা। মুদ্রণ বা সংবাদপত্রের ব্যবসা,বৃত্তি শিক্ষাকেন্দ্রের পরিচালনায় সাফল্য। ... বিশদ
প্রায় ২৫০ মিটার গভীর খাদানে তখন জোরকদমে চলছে কয়লা উত্তোলনের কাজ। বিশাল বিশাল গাড়ি বোঝাই কয়লা এসে জমা হচ্ছে একটি জায়গায়। বেরনোর সময় এন্ট্রি পয়েন্টে ফের দেখা সেই জওয়ানের সঙ্গে। বললেন, ‘আগে আমার পোস্টিং ছিল কলকাতা পোর্ট ট্রাস্টে। এখানে থাকতে ইচ্ছে করে না। আরও অনেক জায়গায় কোল মাইন আছে। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কোথাও এতটা খারাপ নয়।’ তাঁর আরও সংযোজন, ‘এখানে বেকার যুবকদের অনেকের সহজ উপার্জনের রাস্তা হল চোরাই কয়লার কারবার আর রংবাজি করে টাকা তোলা। তার জন্যই যত সমস্যা।’
কয়লার চোরাই কারবার প্রত্যক্ষ করা গেল পরদিন ভোর ৪টে নাগাদ সাইডিং এলাকা থেকে বেশ কিছুটা দূরে। একটি মিনি ট্রাকে রাস্তার ধারে পড়ে থাকা কয়লা তুলতে দেখা গেল তিনজনকে। তদারকির দায়িত্বে ওই গাড়ির চালক বছর ছাব্বিশের সুরেশ (নাম পরিবর্তিত)। তাঁর থেকে জানা গেল, এটাই নাকি এখানে অলিখিত নিয়ম! প্রতিটি কয়লাবোঝাই ট্রাক থেকে কয়েকটি বড় বড় চাঙড় নামিয়ে রাখা হয় রাস্তার পাশে। তারপর মিনি ট্রাক বা ঠেলা ভ্যানে নিয়ে যাওয়া হয় নির্দিষ্ট স্থানে। সেখান থেকে কম দামে বিক্রি হয়ে যায় সেই কয়লা। এভাবে এক-একজনের মাসে ২৫-৩০ হাজার টাকা রোজগার হয়। এলাকার কয়েকশো যুবক এই কারবারের সঙ্গে জড়িত। সুরেশের কথায়, ‘এই কাজের মাধ্যমেই ধানবাদের কয়লা সাম্রাজ্যে অপরাধের হাতেখড়ি হয়। তবে এই জগতের আসল মালিক কে, জানা নেই।’ ‘বিকশিত’ ভারতে একটা ঠিকঠাক চাকরি মিললে তাঁকে এই কাজ করতে হতো না বলে খেদ প্রকাশও করেন তিনি।
এমনিতে ঝাঁ চকচকে শহর ধানবাদ। তবে গয়া সিং, ফাহিম খান, প্রিন্স খানের মত গ্যাংস্টারদের নাম প্রত্যেকের কাছেই কমবেশি পরিচিত। অপরাধ চক্রের বাড়বাড়ন্তের বিপক্ষে শহরের সুশীল সমাজ থেকে শুরু করে আম জনতার বড় অংশ। সেই সূত্রে তাঁরা যুবক-যুবতীদের স্থায়ী চাকরির দাবি তুলছেন। তাঁরা বলছেন, রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকলে ২৭.৫ মিলিয়ন মেট্রিক টন উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন ১১২টি কয়লা খনির শহরে বেকারদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা কোনও ব্যাপার নয়। সেটাই অনুপস্থিত। এই আবহে আগামী ২৫ মে নির্বাচন রয়েছে ধানবাদ লোকসভা কেন্দ্র। এখানকার বিজেপি প্রার্থী ঢুলু সিংয়ের বিরুদ্ধে রয়েছে ৫১টি মামলা। তাঁকে প্রার্থী করায় দলের একাংশের মধ্যে অসন্তোষ চরমে উঠেছে বলে খবর। স্থানীয় এক হোটেল মালিকের কথায়, ‘শুরু থেকেই এই কেন্দ্রে রাজপুত সমাজ থেকে প্রার্থী দেয় বিজেপি। এবার কেন মাহাতদের দেওয়া হল টিকিট?’ কংগ্রেস প্রার্থী অনুপমা সিং বিজেপির এই অন্তর্কলহকে ইস্যু করে প্রচার চালাচ্ছেন। তাঁর দাবি, ‘ঢুলু প্রার্থী হওয়ায় ধানবাদের মানুষের মধ্যে আতঙ্কে রয়েছে।’ ফেরার পথে প্রবীণ ফকিরচাঁদ পাসোয়ান বলছিলেন, ‘এখানে সবার সঙ্গেই সবার উপরে কুস্তি আর ভিতরে দোস্তি। যাকে ভোট দেই না কেন, ওই একই ব্যাপার।’ প্রশ্ন উঠছে, তাহলে কি ভোটেই আস্থা হারাচ্ছে ধানবাদ?