শরীর ভালো যাবে না। সাংসারিক কলহবৃদ্ধি। প্রেমে সফলতা। শত্রুর সঙ্গে সন্তোষজনক সমঝোতা। সন্তানের সাফল্যে মানসিক ... বিশদ
প্রশ্ন: খেলোয়াড় থেকে কোচ, এই যাত্রাপথে চাওয়া-পাওয়ার সমীকরণ কি মিলেছে?
গোপীচাঁদ: না। যা চেয়েছি তার থেকে পেয়েছি ঢের বেশি। ব্যাডমিন্টন খেলার সময় বহু কোচের সংস্পর্শে এসেছি। হামিদ হোসেনের মতো গ্রাসরুট লেভেলের কোচ আমায় এই খেলার অ-আ-ক-খ শিখিয়েছেন। নিয়মানুবর্তিতার গুরুত্ব কতটা, তা তিনিই প্রথম উপলব্ধি করতে শিখিয়েছিলেন। এরপর অবশ্যই বলতে হবে প্রকাশ স্যারের (পাড়ুকোন) কথা। আধুনিক ব্যাডমিন্টন নিয়ে স্বচ্ছ ধ্যান-ধারণা উনি আমার মধ্যে গেঁথে দিয়েছিলেন। এছাড়া দু’জন চীনা কোচের প্রশিক্ষণও আমায় সমৃদ্ধ করেছে। খেলোয়াড় জীবনের শেষ দিকেই ঠিক করে নিয়েছিলাম ভবিষ্যৎ। ব্যাডমিন্টন আমাকে দু’হাত ভরে দিয়েছে। কোচিংয়ের মাধ্যমে তার প্রতিদান তো আমায় দিতেই হবে। বাকিটা আপনারা প্রত্যেকে জানেন। সিন্ধু, সাইনা, কিদাম্বি শ্রীকন্ত, পারুপল্লি কাশ্যপরা আমারই হাতে গড়া... ভাবলে গর্ব হয়।
প্রশ্ন: প্রকাশ পাড়ুকোন সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কী?
গোপীচাঁদ: শিক্ষক মাত্রই গুরু। তাই শিক্ষার্থী হয়ে ওঁর মূল্যায়ন আমি করতে পারি না। তবে এটা বলাই যায়, সময়ের তুলনায় প্রকাশ স্যার অনেক এগিয়ে। এখন যদিও লোকে ওঁকে চেনে দীপিকার বাবা হিসেবে। এর থেকে দুর্ভাগ্যজনক আর কীই বা হতে পারে! ভারতীয় ব্যাডমিন্টনকে বিশ্বের মানচিত্রে প্রকাশ স্যারই প্রথম তুলে ধরেছিলেন। ১৯৮০ সালে অল ইংল্যান্ড ওপেন ব্যাডমিন্টন চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে ডেনমার্কের মর্টেন ফ্রস্ট হ্যানসেনকে উনি না হারালে ভারতীয় ব্যাডমিন্টন আজ এই জায়গায় পৌঁছত না। ওঁর ছেড়ে দেওয়া ব্যাটন এখন কিদাম্বি শ্রীকান্ত-পিভি সিন্ধুদের হাতে।
প্রশ্ন: বাসেলে পিভি সিন্ধুর জেতা বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ খেতাব নিয়ে কী প্রতিক্রিয়া?
গোপীচাঁদ: আমি উচ্ছ্বসিত। তবে আত্মতুষ্ট নই। যে দাপটের সঙ্গে সিন্ধু ফাইনালটা খেলেছে, তাতে জাপানি প্রতিদ্বন্দ্বী নোজুমি ওকুহারার কিছুই করার ছিল না। ২১-৭ ব্যবধানে দু’টি গেমই জিতে যে ম্যাচে ইতি টেনে দেয়, তার জন্য কোনও প্রশংসাই যথেষ্ট নয়। ২০১৩ থেকে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে খেলছে সিন্ধু। গত দু’বছর ফাইনালে উঠেও শেষরক্ষা করতে পারেনি। তাই এবার জেদ দ্বিগুণ হয়ে উঠেছিল। তারই পুরস্কার পেল। সিন্ধু, সাইনারা খেতাব পেলে নিজের খেলোয়াড় জীবনের অতৃপ্তি ঘুচে যায়। তবে ছাত্রছাত্রীদের সামনে এই মনোভাব প্রকাশ করি না। সাফল্যের খিদে বজায় রাখার দায়িত্ব শুধু ওদের নয়, কোচেরও।
প্রশ্ন: ভারতীয় ব্যাডমিন্টনের ভবিষ্যৎ কেমন?
গোপীচাঁদ: এভাবে বলা খুব কঠিন। সব কিছুই আপেক্ষিক। সিন্ধু, সাইনাদের মতো খেলোয়াড় তুলে আনার দায়িত্ব নিতে হবে প্রত্যেককে। অধিকাংশ অভিভাবকই খেলাধূলাকে তেমন গুরুত্ব দেন না। পড়াশুনো না করলে খেলতে পাঠিয়ে দেন। স্পোর্টস কিন্তু একটা পূর্ণাঙ্গ বিষয়। সেকেন্ড প্রায়োরিটি কখনওই নয়। এটা সবাইকে বুঝতে হবে। ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল করবে কারা? অবশ্যই কোচেরা। তাই ভালো খেলোয়াড় তুলে আনতে দক্ষ কোচের উঠে আসাটা অনেক বেশি জরুরি। গ্রাসরুট লেভেলে ভালো কোচ না থাকলে কোনও খেলোয়াড়ের পক্ষেই পূর্ণতা পাওয়া সম্ভব নয়। বিদেশি কোচেরা অবশ্যই ভারতীয়দের থেকে এগিয়ে। রাতারাতি এই বিষয়ে বদল আনাও সম্ভব নয়। কিন্তু চেষ্টা তো চালাতেই হবে। এবং সেটা করতে হবে সামগ্রিকভাবেই।