উপার্জন বেশ ভালো হলেও ব্যয়বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে সঞ্চয় তেমন একটা হবে না। শরীর খুব একটা ... বিশদ
বামফ্রন্টকে হটিয়ে রাজ্যের ক্ষমতা দখলের পরই কন্যাশ্রী প্রকল্প গড়েন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর এই প্রকল্প সমগ্র বিশ্বে সমাদৃত হয়েছে। পরবর্তীতে তিনি কন্যাশ্রী প্রকল্পের উপভোক্তাদের বিভিন্ন সামাজিক কাজে নিযুক্ত করার কথা একাধিকবার ঘোষণা করেন। সেই মতো রাজ্যের অন্যান্য জেলার মতো শিলিগুড়িতেও বিভিন্ন স্কুলে গড়া হয়েছে কন্যাশ্রী বাহিনী। এদিন হায়দরপাড়া বুদ্ধভারতী উচ্চ বিদ্যালয়ের কন্যাশ্রী বাহিনীর সদস্যরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে ডেঙ্গু রোগ প্রতিরোধের উপায় বাতলে দেন। তারা তিনটি দলে ভাগ হয়ে স্কুলের আশপাশ এলাকায় শতাধিক বাড়িতে, দোকানে এবং পথচারীদের মধ্যে লিফলেট বিলি করেছে। শুধু তাই নয়, তারা ডেঙ্গুর লক্ষণ, প্রতিরোধের উপায় বলেছে।
নবম শ্রেণীর ছাত্রী বিনীতা চক্রবর্তী কন্যাশ্রী বাহিনীর সদস্য। গ্রিনপার্ক শান্তিনগরে তাদের বাড়ি। সে জানিয়েছে, মশার বংশবৃদ্ধি রুখতে নিজেদের বাড়ি সর্বদা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখছি। বাড়ি থেকে জমা জল বাইরে বের করে দিচ্ছি। এই বিষয়গুলি এদিন স্কুলের আশপাশ এলাকার বাসিন্দাদের বোঝালাম। ওই বাহিনীর আরএক সদস্য চিত্রা অধিকারী জানিয়েছে, ডেঙ্গুর বিরুদ্ধে বিভিন্ন মহল নানাভাবে প্রচার করছে। তবু এলাকা পরিষ্কার রাখার বিষয়ে বাসিন্দাদের মধ্যে তেমন উদ্যোগ নজরে পড়ছে না। তাই আমরা রাস্তায় নেমেছি।
তাদের সহপাঠী মৌসুমি মাইতি, কাবেরী বর্মন ও জিনাত খাতুনরাও একই কথা বলেছে। সকলেরই বক্তব্য, ‘জল জমবে যেখানে, মশার বংশবৃদ্ধি হবে সেখানে’। এই স্লোগানকে সামনে রেখে ডেঙ্গু নিয়ে প্রতিদিনই স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা আমাদের সচেতন করেন। সেই মতো আমরা বাড়ির বাবা-মা ও আত্মীয়দের বোঝাই। কিন্তু স্কুলের আশপাশ এলাকায় রাস্তা, ড্রেনে দীর্ঘদিন ধরে নোংরা জমে থাকছে। তাই শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সহযোগিতায় বাসিন্দাদের সচেতন করতে এই অভিযানে নেমেছি।
ছাত্রীদের এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। হায়দরপাড়া মেন রোডের বাসিন্দা অনুপ পাল বলেন, আমার ভাগনে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিল। ছাত্রীরা যে উদ্যোগ নিয়েছে তা প্রশংসনীয়। সঞ্জয় দাস, কমল সাহা, বাপি পালও ওই ছাত্রীদের প্রশংসা করেছেন। তাঁরা বলেন, পুরসভার কর্মীরা বাড়ি এসে কারও জ্বর হয়েছে কি না তা জানতে চান। তারপর একটি কাগজে সই করিয়ে নিয়ে তাঁরা চলে যান। কিন্তু এই ছাত্রীরা মশার বংশনিধনের ব্যাপারে বোঝাল, তা ভাবাই যায় না। পুরকর্মীরা এভাবে সচেতনতামূলক প্রচার চালালে ভালো হতো।
সংশ্লিষ্ট স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারাও ছাত্রীদের উদ্যোগের প্রশংসা করেছেন। স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, স্কুলে পঞ্চম থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা প্রায় ১২০০। এরমধ্যে সপ্তম, অষ্টম, নবম ও একাদশ শ্রেণীর ১০০ জন ছাত্রীকে নিয়ে কন্যাশ্রী বাহিনী গঠন করা হয়েছে।
স্কুলের ইংরেজির শিক্ষিকা শ্রাবণী সাহা বলেন, কয়েকদিন আগে কন্যাশ্রী বাহিনীর সদস্যরা এই পরিকল্পনার কথা জানায়। এদিন তারাই এই কর্মসূচি পালন করেছে। স্কুলের প্রধান শিক্ষক স্বপনেন্দু নন্দী বলেন, আমাদের স্কুলের ছাত্রীরা সারাবছর ধরেই নানা বিষয়ে সচেতনতামূলক প্রচার অভিযান চালায়। এদিন তারা ডেঙ্গু প্রতিরোধের ব্যাপারে প্রচার অভিযানে নামায় আমরা খুশি।
প্রসঙ্গত, শিলিগুড়িতে এবার ডেঙ্গুর প্রকোপ অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। বেসরকারি হিসেবে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত চারজনের মৃত্যু হয়েছে। ইতিমধ্যে হাজারেরও বেশি নাগরিক এই রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। এখন ডেঙ্গু প্রতিরোধ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে জোর চাপানউতোর চলছে। এই অবস্থায় কন্যাশ্রী বাহিনী সচেতনতামূলক প্রচার অভিযানে নেমে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিল।