শেয়ার ও বিমা সূত্রে অর্থাগম হতে পারে। কাজের প্রসার ও নতুন কর্মলাভের সম্ভাবনা। বিদ্যা হবে। ... বিশদ
স্কুল ছাড়ার পর ১৬ বছর বয়সেই ‘স্টুডেন্ট’ নামে একটি পত্রিকা বের করেছিলেন। বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে বের করা সেই পত্রিকা চলছিল ভালোই। হাতে একটু অর্থ জমতেই বন্ধুরা মিলে খোলেন ভার্জিন রেকর্ড নামে একটি কোম্পানি। বিভিন্ন শিল্পীর গানের রেকর্ড, অ্যালবাম তৈরি করে বিক্রি করত ভার্জিন রেকর্ড। সেটা ১৯৭০ সাল। দু’ বছরের মধ্যেই খুলে ফেলেন রেকর্ড বিক্রির দোকান ভার্জিন মেগাস্টোর। ক্রমে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে এর শাখা খোলা হয়। এভাবে নানারকম ব্যবসা করতে করতে ১৯৮০ সালে ব্র্যানসন ভার্জিন আটলান্টিক এয়ারলাইন্স খোলেন।
ছোট থেকেই তাঁর স্বপ্ন ছিল তারার দেশে পাড়ি দেওয়ার। সেই স্বপ্ন পূরণ করতে ২০০৪ সালে তৈরি করেন ব্রিটিশ-মার্কিন সংস্থা ভার্জিন গ্যালাকটিক। মহাকাশে পর্যটন চালু করাই এই কোম্পানির মূল উদ্দেশ্য। ব্রিটিশ ধনকুবের ব্র্যানসন অ্যাডভেঞ্চার প্রিয় মানুষ। সেই অ্যাডভেঞ্চার করতে গিয়েই হটএয়ার বেলুনে চড়ে আতলান্তিক মহাসাগর পেরিয়ে জাপান থেকে নর্থ কানাডায় গিয়েছেন। ইংলিশ চ্যানেল পার হয়ে সবচেয়ে দ্রুতগতিতে দক্ষিণ পূর্ব ইংল্যান্ডের ডাভ থেকে ফ্রান্সের কালাইস পর্যন্ত গিয়েছেন। আবার আমেরিকার বিভিন্ন জনপ্রিয় টিভি সিরিয়ালেও অভিনয় করেছেন। এবার ১১ জুলাই (অর্থাৎ আজ) মহাকাশ ঘুরে আসার ঘোষণা করে খবরের শিরোনামে সেই ব্র্যানসন। তাঁর সংস্থার ‘ভিএসএস ইউনিটি ২২’ মহাকাশযানে তিনি আরও পাঁচ অভিযাত্রী (দু’জন পাইলট সহ) নিয়ে মহাকাশে পাড়ি দেবেন। সংস্থার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, মহাকাশযানটি পৃথিবী ছাড়িয়ে ৫০ মাইল (প্রায় ৮০ কিলোমিটার) উপরে উঠে যাবে। যদিও এই দূরত্বকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানীরা মহাকাশের দোরগোড়া বলে থাকেন। এই অভিযানে মূলত দু’টি যান ব্যবহার করা হবে। প্রথমে ভিএস ইভ নামে একটি বিমানে করে ভিএসএস ইউনিটিকে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের শেষ প্রান্তে নিয়ে যাওয়া হবে। সেখান থেকে মহাকাশযানকে বোমার মতো ছুড়ে দেওয়া হবে। তখন স্পেসশিপটির ইঞ্জিন চালু করা হবে। সেটি পৃথিবীর বাইরে বেরিয়ে যাবে। আবার কয়েক মিনিটের মধ্যেই তা ফের পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করবে। এরপর তা ধীরে ধীরে আমেরিকার মাটিতে অবতরণ করবে। গোটা ব্যাপারটি শেষ হতে ৯০ মিনিট সময় লাগবে। ব্র্যানসনের এই মহাকাশ অভিযানকে ঘিরে ভারতীয়দের আগ্রহ বাড়িয়ে তুলেছে শ্রীশা বান্দেলা। অন্ধ্রপ্রদেশের গুন্টুরের বাসিন্দা শ্রীশাও যাবেন ব্র্যানসনের সঙ্গে। আসলে ৩৪ বছরের শ্রীশা বর্তমানে ভার্জিন গ্যালাকটিকের গভর্নমেন্ট অ্যাফেয়ার্সের ভাইস প্রেসিডেন্ট। এর আগে ২০১৭ সাল থেকে ২০২০ পর্যন্ত তিনি এই সংস্থারই বিজনেস ডেভেলপমেন্ট ও গভর্নমেন্ট অ্যাফেয়ার্সের ম্যানেজারের দায়িত্ব সামলেছেন। শ্রীশা ২০১১ সালে পারডু ইউনিভার্সিটি থেকে এরোনটিক্যাল অ্যান্ড অ্যাস্ট্রোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক হন। জর্জ ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি থেকে এমবিএ পাশ করেছেন। সুনীতা উইলিয়ম, কল্পনা চাওলার পর তিনি তৃতীয় ভারতীয় বংশোদ্ভূত মহিলা হিসাবে মহাকাশে গিয়ে নজির গড়বেন।
মহাকাশে পাড়ি দেওয়ার দৌড়ে অবশ্য ব্র্যানসন একা নন, তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী রয়েছেন আরও দুই ধনকুবের। তাঁরা হলেন ই-কমার্স সংস্থা অ্যামাজনের প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজস এবং ই পেমেন্ট সংস্থা পে পলের সহ প্রতিষ্ঠাতা এলন মাস্ক। বেজস ও মাস্ক ইতিমধ্যে কয়েক লক্ষ ডলার খরচ করে নিজস্ব মহাকাশযান তৈরি করিয়েছেন। বেজস জানিয়েছেন, তিনি এ মাসের ২০ তারিখে মহাকাশযাত্রা করবেন। এলন মাস্ক অবশ্য ২০২৩ সালে চাঁদ প্রদক্ষিণ করে আসার কথা ঘোষণা করেছেন।
একবার মহাকাশ ঘুরিয়ে আনতে ভার্জিন গ্যালাকটিক ও বেজসের সংস্থা ব্লু অরিজিন ইতিমধ্যে টিকিট বিক্রিও শুরু করে দিয়েছে। ব্র্যানসনের টিকিটের দাম প্রায় আড়াই লক্ষ ডলার। শোনা যাচ্ছে, বেজসের ব্লু অরিজিন টিকিটের দাম করেছে ২ কোটি ৮০ লক্ষ ডলার। তবে বেজসের মহাকাশ যানে তিনি ও তাঁর ভাই ছাড়া আর একজনই যেতে পারবেন। তাই তাঁর টিকিটের দাম বেশি।