উচ্চতর বিদ্যায় সাফল্য আসবে। প্রেম-ভালোবাসায় আগ্রহ বাড়বে। পুরনো বন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাতে আনন্দলাভ হবে। সম্ভাব্য ক্ষেত্রে ... বিশদ
যে-তত্ত্বটি এতক্ষণ আমরা আলোচনা করছিলাম, তাকে অন্য দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে দেখা যায়—হিন্দুর দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে। আমরা বলি, বুদ্ধের এই আত্মত্যাগের শিক্ষাকে আমাদের দৃষ্টিতে বিচার করলে আরও ভাল ক’রে বুঝতে পারা যাবে। উপনিষদে আত্মা ও ব্রহ্ম সম্বন্ধে গভীর তত্ত্বের কথা আছে। আত্মা আর পরব্রহ্ম অভিন্ন। যা-কিছু সবই আত্মা—একমাত্র আত্মাই সৎ-বস্তু। মায়াতে আমরা আত্মাকে বহু দেখি। আত্মা কিন্তু এক, বহু নয়। সেই এক আত্মাই নানারূপে প্রতিভাত হয়। মানুষ মানুষের ভাই, কারণ সব মানুষই এক। বেদ বলেন: মানুষ শুধু আমার ভাই নয়, সে আমার স্বরূপ। বিশ্বের কোন অংশকে আঘাত ক’রে আমি নিজেকেই আঘাত করি। আমিই বিশ্বজগৎ। আমি যে ভাবি, আমি অমুক—ইহাই মায়া। প্রকৃত স্বরূপের দিকে যতই অগ্রসর হবে, এই মায়াও তত দূরে যাবে। বিভিন্নত্ব ও ভেদবুদ্ধি যতই লোপ পাবে, ততই বোধ করবে যে সবই এক পরমাত্মা। ঈশ্বর আছেন, কিন্তু দূর আকাশে অবস্থান করছেন—এমন একজন কেউ নন তিনি। তিনি শুদ্ধ আত্মা। কোথায় তাঁর অধিষ্ঠান? তোমার অন্তরের অস্তস্তলেই তিনি রয়েছেন; তিনিই হচ্ছেন অন্তরাত্মা। তোমার নিজের থেকে বিচ্ছিন্ন বা পৃথক্ ক’রে কিভাবে তাঁকে ধারণা করবে? যখন তুমি তাঁকে তোমা থেকে স্বতন্ত্র ব’লে ভাবছ, তখন তাঁকে জানতে পার না; ‘তুমিই তিনি’—এটিই ভারতীয় ঋষিদের বাণী।
তুমি অমুককে দেখছ—এবং জগতের সবই তোমা থেকে পৃথক্, এ-রকম ভাব স্বার্থপরতা। মনে কর, তুমি আর আমি ভিন্ন। আমার কথা তুমি একটুও ভাবো না। ঘরে গিয়ে খেয়ে দেয়ে শুয়ে পড়লে। আমি মরে গেলেও তোমার ভোজন পান ও আনন্দ ঠিকই থাকে। কিন্তু সংসারের বাকী লোক যখন কষ্ট পায়, তখন তুমি সুখ ভোগ করতে পার না। আমরা সকলেই এক। বৈষম্যের ভ্রমই যত দুঃখের মূল। আত্মা ছাড়া আর কিছুই নেই! বুদ্ধের শিক্ষা হ’ল—ঈশ্বর ব’লে কিছু নেই, মানুষই সব। ঈশ্বর সম্বন্ধে প্রচলিত মনোভাবকে তিনি অস্বীকার করেছিলেন। দেখেছিলেন, এই মনোভাব মানুষকে দুর্বল কুসংস্কারাচ্ছন্ন করে! সবকিছুর জন্য যদি ঈশ্বরের কাছেই প্রার্থনা করবে, তা হ’লে কে আর কর্ম করতে বেরোচ্ছে? যারা কর্ম করে, ঈশ্বর তাদেরই কাছে আসেন। যারা নিজেদের সাহায্য করে, ভগবান তাদেরই সাহায্য করেন। ঈশ্বর সম্বন্ধে অন্য ধারণা আমাদের স্নায়ুমণ্ডলীকে শিথিল ও পেশীগুলোকে দুর্বল ক’রে, আর পরনির্ভরশীল ক’রে তোলে। যেখানে স্বাধীনতা, সেখানেই শান্তি; যখনই পরাধীনতা, তখনই দুঃখ। মানুষের নিজের মধ্যে অনন্ত শক্তি, এবং সে তা বোধ করতে পারে—উপলব্ধি করতে পারে যে, সে-ও অনন্ত আত্মা। নিশ্চয়ই তা সম্ভব, কিন্তু তোমরা তো বিশ্বাস কর না। তোমরা ভগবানের কাছে প্রার্থনা ক’রছ, আবার সর্বদা নিজেদের বারুদও তাজা রাখছ। বুদ্ধের শিক্ষা ঠিক বিপরীত। মানুষকে আর কাঁদতে দিও না। পূজা-প্রার্থনার দরকার নেই। ভগবান তো আর দোকান খুলে বসেননি? প্রতি শ্বাস-প্রশ্বাসে ভগবানেরই উপাসনা ক’রছ। আমি যে কথা বলছি, এও এক উপাসনা; তোমরা যে শুনছ, সেও এক রকম পূজা।