পরিবারের কারও স্বাস্থ্য অবনতিতে মানসিক চিন্তা। অপ্রিয় সত্য কথার জন্য সামাজিক ক্ষেত্রে সমস্যায় পড়তে পারেন। ... বিশদ
তাই অর্থনীতিবিদদের অনেকেই এই পরামর্শ দিয়ে থাকেন যে, দেশীয় অর্থনীতিকে চাঙ্গা রাখতে এবং তাকে অধিকতর মজবুত করে তুলতে এমএসএমই সেক্টরের প্রতি সরকারের বিশেষ কৃপাদৃষ্টি জরুরি। সাম্প্রতিক অতীতের মধ্যে, করোনার দু-তিন বছরে এমএসএমই সেক্টরের ক্ষতি হয়েছে মারাত্মক। কয়েক লক্ষ এমএসএমই ইউনিট বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তার প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়েছিল কর্মসংস্থানের উপর। একটি অতিসাধারণ চাকরির জন্যও যে-দেশে কয়েক হাজার শিক্ষিত বেকার যুবক-যুবতী আবেদন এবং বছরের পর বছর লড়াই করেন, সেই দেশেই ওই সময়ে লক্ষ লক্ষ মানুষকে কাজ হারাতে হয়েছিল। অর্থনীতিবিদদের পরামর্শ ছিল রুগ্ন বা বন্ধ এমএসএমই ইউনিটগুলিকে বাঁচাতে সরকার কিছু অনুদান দিক কিংবা সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা করুক। তাদের জন্য সময়োপযোগী প্রশিক্ষণ, প্রযুক্তি ও টেলি যোগাযোগের সহায়তা প্রদান এবং করছাড়েরও প্রস্তাব ছিল। আর ছিল জিএসটি আইনকে এমএসএমই সহায়ক করে তোলার পরামর্শ। মোদি সরকার গালভরা প্রকল্প একটি নিয়েছিল বটে কিন্তু তাতে ওই শিল্প-বাণিজ্য ক্ষেত্রের আদৌ কোনও সুরাহা হয়েছিল কি না সেই সদুত্তর আজও মেলেনি। এমএসএমই’র পাশে দাঁড়াতে পরবর্তীকালেও একাধিক প্রকল্পের কথা ঘোষণা করেছে মোদি সরকার। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য বন্ধকহীন ঋণ। অর্থাৎ কোনও সম্পত্তি গচ্ছিত না রেখেই এমএসএমই শিল্পক্ষেত্র যাতে ঋণ পেতে পারে তার কথাই জোর গলায় বলছে কেন্দ্রীয় সরকার।
কিন্তু বাস্তবে সেই ঋণ সত্যিই মিলছে কি? এই প্রশ্ন তুলে দিল সর্বভারতীয় বণিকসভা অ্যাসোচেমের একটি রিপোর্ট। বাজেট তৈরির আগে সরকার প্রতিবছরই বণিকসভাগুলির পরামর্শ চায়। সেই পরামর্শ এবং দাবিদাওয়া সংক্রান্ত একটি রিপোর্ট তারা অর্থমন্ত্রকে পেশ করেছে। সেখানে এমএসএমই ক্ষেত্রে ঋণ প্রদানের বিষয়ে আরও স্বচ্ছতা দাবি করেছে অ্যাসোচেম। তাদের অভিযোগ, ঋণ প্রসেস সম্পর্কে আবেদনকারীকে স্পষ্ট করে কিছু বলা হচ্ছে না এবং ঋণ প্রদানের সময় ব্যাঙ্কগুলি সম্পত্তি গচ্ছিত রাখার কথাই বলছে! তবে কেউ কেউ বন্ধকহীন ঋণ পেলেও তার জন্য সুদ আদায় করা হচ্ছে চড়া হারে। বণিক সভার প্রশ্ন, তাহলে বন্ধকহীন ঋণ কথার কী মূল্য রইল? এই সংক্রান্ত অসংগতিগুলির সম্পূর্ণ ও দ্রুত অবসান চায় তারা। তাদের বক্তব্য, ব্যাঙ্কগুলিতে বন্ধকহীন ঋণের কত আবেদন বাস্তবে মঞ্জুর হল এবং তার আর্থিক পরিমাণই-বা কত, সেই তথ্যাদি নির্দিষ্ট সময় অন্তর প্রকাশের দাবি তারা জানিয়েছে। বণিক সভা চায়, এই বিষয়ে স্বচ্ছতা বৃদ্ধির দায়িত্ব কেন্দ্রকেই নিতে হবে। সরকার এই বিষয়টিতে এখনও গুরুত্ব দিচ্ছে না কেন? তারা কী চায়—দেশের ছোট শিল্প-বাণিজ্য ক্ষেত্র ফের মহাজনি ঋণের ফাঁদে পড়ুক? ইতিমধ্যেই ভারত সরকারের পরিসংখ্যান বিভাগ অশনিসঙ্কেত দিয়ে রেখেছে, চলতি অর্থবর্ষের জিডিপি বৃদ্ধির হার হবে মাত্র ৬.৪ শতাংশ, যা রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রত্যাশার চেয়ে ২০ বেসিস পয়েন্ট কম। অর্থাৎ দেশের অর্থনীতি এগনোর পরিবর্তে চারবছর পিছনে হাঁটতে চলেছে! কৃষি এবং এমএসএমই সেক্টরের সঙ্গে যে ধারাবাহিক বঞ্চনার রেকর্ড এই সরকার গড়েছে, তাতে অবশ্য দেশের অর্থনীতির এর অধিক প্রাপ্য হওয়ার কথা ছিলও না।