গৃহে শুভকর্মের প্রস্তুতি ও ব্যস্ততা। হস্তশিল্পীদের নৈপুণ্য ও প্রতিভার বিকাশে আয় বৃদ্ধি। বিদ্যায় উন্নতি। ... বিশদ
সবার আগে ঠিক করতে হবে আপনার ঘুমের সময়। কারণ আমাদের মস্তিষ্কের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয় অপর্যাপ্ত ঘুমের কারণেই। তাই চিকিৎসকেরা বলে থাকেন, একজন প্রাপ্তবয়স্ককে ২৪ ঘণ্টায় ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুমতেই হবে। কারণ ঘুমানোর সময় মস্তিষ্ক বিশ্রাম নেওয়ার পাশাপাশি, বিষাক্ত পদার্থ পরিষ্কার করে এবং নতুন কোষ তৈরি করে। কিন্তু ৭ ঘণ্টার কম ঘুমালে নতুন সেই কোষ গঠনই হয় না। ফলে আপনি কিছু মনে রাখতে পারবেন না, মনোযোগ দিতে কষ্ট হবে, মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাবে, সিদ্ধান্ত নিতে সমস্যা হবে। এমনকী ঘুমের অভাবে ডিমেনশিয়া অ্যালঝেইমার্সের ঝুঁকিও বেড়ে যায়।
অপরিমিত ঘুমের মত আপনার খাদ্যাভ্যাসও ডেকে আনতে পারে বিপদ। যেমন, অতিরিক্ত খাওয়ার অভ্যাস, সেটা স্বাস্থ্যকর খাবার হলেও মস্তিষ্কের ক্ষতি করে। গবেষণায় দেখা গিয়েছে অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে মস্তিষ্কের ধমনীগুলোয় কোলেস্টেরল জমে রক্তপ্রবাহ কমে যায়। এতে স্মৃতিশক্তি ও চিন্তাশক্তি লোপ পায় যার প্রভাব ডিমেনশিয়া ও আলঝেইমার্স হতে পারে। তাছাড়া জাঙ্ক ফুড, ভাজা-ভুজি, অতিরিক্ত চিনিযুক্ত খাবার, কোমল পানীয় ইত্যাদি খেলেও মস্তিষ্ক একই ধরণের ঝুঁকির মধ্যে পড়ে। এই জন্য পরিমিত ও সঠিক খাদ্যাভ্যাস খুবই জরুরি। অনেকেই আবার ব্রেকফাস্ট করেন না। সারা রাত না খেয়ে থাকার পর, দিনে কাজ করার শক্তি আসে সকালের এই খাবার থেকেই। তা না করলে যেটা হয়, রক্তে শর্করার মাত্রা কমে যায়। যার প্রভাব গিয়ে পড়ে মস্তিষ্কে। শুধু খাবার নয় পর্যাপ্ত জল না খেলেও ভয়ঙ্কর ক্ষতি হয় মস্তিষ্কে। চিকিৎসকদের মতে, মস্তিষ্ক সুস্থ রাখতে একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষকে দিনে কমপক্ষে দুই লিটার জল পান করতেই হবে। তবে ওজন, স্বাস্থ্য, বয়স, জীবনযাত্রা এবং আবহাওয়ার ওপর ভিত্তি করে এই জলের পরিমাণ আরও বাড়তে পারে।
কথায় কথায় গুগল করে নেওয়াও ডেকে আনছে বিপদ। খেয়াল করে দেখবেন আমাদের আগের প্রজন্মের অনেকেই ক্যালকুলেটর ছাড়াই ছোট-খাটো হিসাব কষে ফেলেন। বা গড়গড় করে একগাদা ফোন নম্বর মুখস্থ বলে দিতে পারেন। প্রচুর বই পড়ার কারণে তাঁদের সাধারণ জ্ঞানও সমৃদ্ধ। তাঁদের এই অভ্যাসগুলো মস্তিষ্কের ব্যায়ামের মতো কাজ করে। যা তাঁদের চিন্তাশক্তি ও স্মরণশক্তিকে দীর্ঘ সময় শানিত রেখেছে। কিন্তু এই যুগে আমাদের এতকিছু মনে রাখার প্রয়োজন হয় না। প্রযুক্তির উপর এই অতিরিক্ত নির্ভরশীলতার কারণেই আমাদের ব্রেইনের নিজস্ব ক্ষমতা কমে গিয়েছে। স্মৃতি ও চিন্তাশক্তিও দুর্বল হয়ে পড়েছে। তাই মস্তিষ্ক শাণিত করতে সবকিছু গুগল সার্চ না করে মনে রাখতে চেষ্টা করার পরামর্শ দিয়েছেন গবেষকরা। পাশাপাশি শব্দছক খেলা বিভিন্ন ধরনের পাজল মেলানোর মত ব্রেইন অ্যাকটিভিটির খেলাও খেলতে পারেন।
মোবাইল হোক বা কম্পিউটার, মাত্রাতিরিক্ত স্ক্রিন টাইম ডেকে আনতে পারে ভয়ঙ্কর বিপদ। আজকাল এই বদঅভ্যাসটির কবলে আমারা প্রায় সকলেই। মনে রাখতে হবে অত্যধিক স্ক্রিন টাইম মস্তিষ্কের আকার এবং বিকাশে ব্যাপক ক্ষতি করে। বেশি ক্ষতি হয় ফ্রন্টাল কর্টেক্সে, যা বয়ঃসন্ধিকাল থেকে ২৫ বছর বয়স পর্যন্ত পরিবর্তিত হয়। গবেষণায় দেখা গিয়েছে যেসব শিশু পর্দার সামনে দিনে সাত ঘণ্টার বেশি সময় কাটায় তাদের সেরিব্রাল কর্টেক্স পাতলা হয়ে গিয়েছে। কেননা মোবাইলের ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ফিল্ড থেকে যে বিকিরণ হয় তার সংস্পর্শে বেশি সময় থাকলে মাথাব্যথা, বিভ্রান্তি, মস্তিষ্কে টিউমারের মতো ক্ষতি হতে পারে। এজন্য শিশুদের স্ক্রিনটাইম একদম কমিয়ে ফেলতে হবে। অন্যদিকে, ঘুমানোর সময় ফোন শরীরের কাছাকাছি রাখা যাবে না। বেশি সময় কথা বলতে হলে ফোন কানে লাগিয়ে না রেখে স্পিকারে দিয়ে কথা বলতে পারেন। কথা বলার চেয়ে টেক্সট করা বেশি নিরাপদ বলেই মনে করেন গবেষকরা।
আবার অতিরিক্ত চাপের মধ্যে কাজ করলে অথবা অতিরিক্ত শুয়ে-বসে থাকাও মস্তিষ্কের যথেষ্ট ক্ষতি করে। দীর্ঘসময় খুব চাপের মধ্যে কাজ করলে মস্তিষ্কের কোষ মারা যায় এবং মস্তিষ্কের সামনে থাকা ফ্রন্টাল কর্টেক্স সঙ্কুচিত হয়ে পড়ে। এতে আমাদের স্মৃতি ও চিন্তাশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই যেকোনো উপায়ে অতিরিক্ত চাপ নেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। অতিরিক্ত চাপ নেওয়া যেমন খারাপ তেমনি দীর্ঘ সময় শুয়ে-বসে থাকাও ক্ষতিকর।
অনেকে আছেন এমন কাজ করেন যেখানে সারাদিন বসে থাকতে হয়। আবার ছুটির দিন এলে শুয়ে বসে সময় কাটিয়ে দেন। পর্যাপ্ত নড়াচড়া, চলাফেরা বা কায়িক শ্রম করেন না। এতে স্থূলতা, হৃদরোগ এবং ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে। যার প্রভাবে ডিমেনশিয়া হতে পারে। তাই মস্তিষ্ককে সুস্থ রাখতে নিয়মিত ব্যায়াম করুন, প্রতি আধঘণ্টা পর পর চেয়ার থেকে উঠে চলাফেরা করুন। চেষ্টা করুন সপ্তাহে অন্তত তিন দিন আধঘণ্টা করে হাঁটতে।
উচ্চস্বরে হেডফোন ব্যবহারেও বিপদ বাড়ে। জোরে জোরে গান শুনলে কিংবা উচ্চ শব্দের মধ্যে থাকলে শ্রবণের মারাত্মক ক্ষতি হয়। এবং ভয়ের বিষয় হল শ্রবণশক্তিকে একবার যে ক্ষতি হয় সেটা আর ঠিক করা যায় না। আর শ্রবণশক্তি কমে গেলে এর সরাসরি প্রভাব মস্তিষ্কে গিয়ে পড়ে। তাই হেডফোন ব্যবহারের আগে বা প্রিয় গানটি জোরে ভলিউমে শোনার আগে দুবার ভাববেন। যদি শুনতেই হয় ভলিউম ৬০ শতাংশের চেয়ে বাড়াবেন না। হেডফোন টানা ব্যবহার না করে, এক ঘণ্টা বিরতি দিয়ে করুন।
অন্যদিকে, মানুষের সাথে কথা বলা, আড্ডা দেয়া, এক কথায় সামাজিকীকরণ আপনার মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের জন্য ভীষণ জরুরি। খুব বেশি সময় একা একা সময় কাটানো আপনার মস্তিষ্কে ঠিক ততটাই খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে যেমনটা পর্যাপ্ত ঘুম না হলে হয়। আর একাকীত্ব থেকে বিষণ্নতা, উদ্বেগ ভর করে এবং এমনকি ডিমেনশিয়া এবং আলঝেইমার্স রোগের আশঙ্কা বেড়ে যায়। তাই যদি মস্তিষ্ক সুস্থ রাখতে চান তাহলে নিয়মিত কাছের কয়েকজন বন্ধু এবং পরিবারের সাথে সময় কাটান। শুধু তাই নয়, নেতিবাচক চিন্তার থেকেও যথেষ্ট ক্ষতি হয় মস্তিষ্কে।
কেননা নেতিবাচক চিন্তা করার ফলে একদিকে যেমন মানসিক চাপ, হতাশা এবং উদ্বিগ্নতা দেখা দেয়। তেমনি মস্তিষ্কে প্রচুর পরিমাণে অ্যামাইলয়েড এবং টাউ জমে। যা ডিমেনশিয়া ও আলেঝেইমার্স হওয়ার বড় কারণ।
মার্কিন এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে যারা অন্ধকারে বেশি সময় কাটান। কিংবা দীর্ঘসময় এমন কোন আবদ্ধ স্থানে থাকেন যেখানে তেমন আলো বাতাস চলাচল করে না, এমন পরিবেশ মস্তিষ্কের ওপর ভীষণ চাপ তৈরি করে।
কারণ আমাদের মস্তিষ্কের জন্য সূর্যের আলোর সংস্পর্শ পাওয়া বেশ জরুরি। নাহলে ডিপ্রেশনের মতো সমস্যা হতে পারে। আপনি মস্তিষ্ক সুস্থ রাখতে প্রতিদিন সূর্যের আলোয় যেতে হবে। এজন্য বাইরে বেরিয়ে পড়ুন। ঘরে থাকলে দরজা জানালা খুলে দিন।