ধনাগম যোগটি অনুকূল। দুপুর থেকে কর্মের বাধা মুক্তি ও উন্নতি। শরীর-স্বাস্থ্য সমস্যার যোগ। ... বিশদ
এই বাস যাবে প্রথমে মুরেনা। তারপর পাহাড়গড়। গোয়ালিয়র থেকে শুরু হচ্ছে চম্বল এলাকা। শহর ছাড়িয়ে যতই হাইওয়ে এগিয়েছে, ততই স্পষ্ট হয়েছে দূরের পাহাড়শ্রেণি, পাথরের টিলা, আর রুক্ষ জমি। গম তোলা হয়ে গিয়েছে। এবার জোয়ার লাগবে। বর্ষা এলে ধান। বোঝাই যাচ্ছে, যাত্রীরা চম্বলের বিভিন্ন গ্রামগঞ্জের বাসিন্দা। সহযাত্রী লোকেন্দ্র তোমারের মনে আছে, তাদের গ্রামে মালখান সিংয়ের গ্যাং ছোটবেলায় এসেছিল। চম্বলের অম্বাবতী ছাড়িয়ে মোঈ গ্রাম। তারই পঞ্চায়েত মাহোরি। সেখানে মালখান সিং আসার খবর ছড়াতেই আতঙ্ক এবং আগ্রহ। মালখান সিং শুধুই আনাজ নিয়ে ফিরে গিয়েছিল। সেবার টাকাপয়সা নাকি নেয়নি। তার নিজের গ্যাংয়ের দু’জনকে মালখান সিং দল থেকে তাড়িয়ে দেয় গ্রামের মেয়েদের কটূক্তি করেছিল বলে। ‘ডাকাতদের আমরা ভয় পেতাম। সেবার ডাকাতকে আমাদের গ্রামের লোক দেখেছিল মাটিতে নাক ঘষে ক্ষমা চাইছে। মালখানের নির্দেশে।’ লোকেন্দ্র বললেন, ‘সেই ডাকুরা চম্বল থেকে আজ উধাও।’ তার মানে ডাকু নেই? লোকেন্দ্র বললেন, ‘এখন সব রাজনীতির ডাকু। সব ডাকুর দলের লোকজন আস্তে আস্তে নেতাদের পোষা গুন্ডা হয়ে গেল। এখন তাই চম্বল নদীর কিনারার গ্রামে গ্রামে আর ডাকু তৈরি হয় না। বেরোজগারি, আর মেহঙ্গাই জন্ম দিয়েছে অন্যরকম ডাকুর। এদের কাজ হল, ভোটের সময় গ্রামে গ্রামে ভয় দেখানো।’
সেই মালখান সিং প্রায় ১০ বছর আগে যোগ দিয়েছিল বিজেপিতে। গত বছর আবার সে দল বদলেছে। কংগ্রেসের বাহুবলী। কিন্তু গুরুকে ছাপিয়ে গিয়েছে তার শিষ্যরা। মালখান সিংয়ের গ্যাং মেম্বারদের সিংহভাগ বিজেপির নেতাদের কাছে থাকে। প্রশাসন বিজেপির। পুলিস বিজেপির। এখন আগের মতো বুথ দখল করতে হয় না। ভোটের আগে এই প্রাক্তন ‘বাগি’রাই চম্বলের গ্রামে গ্রামে রক্তচক্ষু দেখিয়ে দেয়—ভোট না দিলে সব বন্ধ। রেশন, আয়ুষ্মান কার্ড, কিষান ভাতা, আবাস যোজনার বাড়ি।
বানমোড় আসার পর বাস থেমেছে। চা-নাস্তার বিরতি। ধু ধু প্রান্তর। কিন্তু মাঝেমধ্যেই এদিক-সেদিক থেকে ট্রাক-লরির আনাগোনা। চম্বলের মধ্যে বানমোড়ের ভোলবদল শুরু হয় ইউপিএ আমলে। মধ্যপ্রদেশে শিবরাজ সিং চৌহানের সময়েও। শিল্পতালুক হিসেবে তৈরি করা হয় এই বানমোড়কে। একটা সময় ২৫০টির বেশি কারখানা ছিল। অথচ আজ কমতে কমতে খুব বেশি হলে ১১০। বানমোড় বাসস্টপে সার গুদামের মালিক সুরেন্দ্র নাগর বললেন, ‘মোদি সরকার কিংবা রাজ্যের বিজেপি সরকার এই ইন্ডাস্ট্রিয়াল এলাকাকে কিন্তু ধ্বংস করে দিল। কেন জানি না। অথচ চম্বলে কারখানা বাড়ছে, এরকম একটা ঘটনা ঘটলে আজ কত ভালো হতো! করল না কিছুই।’
গোয়ালিয়র, মুরেনা, ভিন্দ। এই তিন লোকসভা নিয়ে মূলত চম্বল এলাকা। এখানে বারংবার লোকসভায় বিজেপি জেতে কেন? মুরেনা বাস স্ট্যান্ড থেকে নগর নিগমের দিকে এগনোর পথেই বাঁদিকে কমিউনিটি হলে মঙ্গলবার ছিল কুশওয়া সমাজ সমন্বয় কমিটির বৈঠক। সভাপতি গিরিরাজ কুশওয়া বললেন, ‘আজকের মিটিং ডাকা হয়েছে কুশওয়া সমাজ যাতে বিজেপিকে ভোট দেয়, সেই নির্দেশিকা জারি করার জন্য। আমাদের কাছে শিবমঙ্গল তোমারকে ভোট দেওয়াই সঙ্গত।’ মোদি সরকারের প্রাক্তন কৃষিমন্ত্রী নরেন্দ্র সিং তোমারের আত্মীয় এবার বিজেপি প্রার্থী। নরেন্দ্র সিং তোমার মধ্যপ্রদেশ বিধানসভার স্পিকার হয়েছেন। সুতরাং এরকম হাই প্রোফাইল নেতার অনুগামী হলে অনেক সুবিধা পাওয়া যাবে। সেই কারণেই এই সিদ্ধান্ত।
হিন্দুত্ব, রামমন্দির, মোদির গ্যারান্টি, এসব তাহলে চম্বলে কোনও ফ্যাক্টর নয়? রমাকান্ত ভাদোরিয়া ভিন্দের বাসিন্দা। থাকেন ইতরাসে। সেখানে ইঞ্জিনিয়ারিং ফার্মের রাঁধুনি। ১৩ হাজার টাকা বেতন। বললেন, ‘এই টাকায় কীভাবে সংসার চালাই, সেটা শিবজিই জানেন। আমার হাতে এক হাজার টাকা রেখে সব টাকা পাঠাই গ্রামে। ফ্যামিলির কাছে। বেরোজগারি তো সাংঘাতিক।’ তিনি মুরেনায় এসেছেন কাজের খোঁজে। যদি আর একটু ভালো কিছু পাওয়া যায়। কাকে ভোট দেবেন? রমাকান্ত বললেন, ‘আমাদের ওখানে তো ক্ষত্রিয় সমাজের আর কেউ নেই। তাই ক্ষত্রিয় ক্যান্ডিডেটকেই দিতে হবে।’ অর্থাৎ বিজেপিকে। হিন্দুত্ব, রামমন্দির চম্বলের কোনও পোস্টার, মাইক, ব্যানারে নেই। জাতপাত, একসময় যারা বাগি ছিল, আর এখন যারা নতুন বাগি হয়েছে, তাদের ধমক আর জাতপাতই নির্ণায়ক।
চম্বলে তাহলে বদলায়নি? কে বলল? একটি বিস্ময়কর রূপকথার জন্ম হয়েছে। রুরাল লাইভলিহুড মিশনের প্রজেক্ট সহায়ক সুনীতা দেবী মুরেনা বাজারের দোতলায় এক নির্জন অফিসে বসে বললেন, ‘পাহাড়গড় চলে যান। করোনার সময় গ্রামের ১০ জন মহিলা আমাদের থেকে লোন নিয়ে মাস্ক তৈরি করতে শুরু করেছিল। প্রচুর বাধা এসেছিল সমাজ থেকে। ঘরের বউ কাজ করে রোজগার করবে? তারা সেই বাধা জয় করেছে। তারপর থেকে তারা মাস্ক তৈরির পাশাপাশি মাশরুম শুকিয়ে প্যাকেজিং করে। আজ অন্য গ্রামের মহিলারাও এই দলে যোগ দিচ্ছে। একে বলতে পারেন এক সামাজিক বিপ্লব। ঘোমটায় মুখ ঢাকা চম্বলের মেয়েদের এগিয়ে চলা।’
লা পাতা লেডিজের সত্যি চিত্রনাট্য!