নিজস্ব প্রতিনিধি, শিলিগুড়ি: দিনহাটার বিধায়ক তথা তৃণমূল নেতা উদয়ন গুহের ভূমিকা নিয়ে দলের অন্দরেই জোর জল্পনা শুরু হয়েছে। কয়েকদিন আগে দলীয় কর্মিসভায় ভোটে না দাঁড়ানোর কথা ঘোষণা করেন কমল গুহের পুত্র উদয়নবাবু। তারপরেই শুরু হয় জল্পনা। দলের একাংশে আলোচনা শুরু হয় ফরওয়ার্ড ব্লক থেকে আসা তৃণমূলের এই বিধায়ক কি আগামী বিধানসভা নির্বাচনের আগে অন্য কিছু ভাবছেন? সেজন্যই তাঁর গলায় কিছুটা বিদ্রোহের সুর? যদিও সে সম্ভাবনা উদয়নবাবু উড়িয়ে দিয়েছেন। আবার অন্য একটি পক্ষের বক্তব্য, নিজের গড় দিনহাটায় কিছুদিন ধরেই তাঁর পায়ের তলার মাটি ক্রমশ আলগা হতে শুরু করেছে। গত লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির উত্থান তো আছেই, তাছাড়া সম্প্রতি দলে তাঁর বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠী রীতিমতো সক্রিয় হয়ে উঠেছে। জেলা নেতৃত্বকে চাপে রাখতে তাঁর এই কৌশল। প্রসঙ্গত, ৫ জুলাই স্থানীয় একটি হলে দলীয় কর্মিসভায় তিনি ভোটের ময়দান থেকে সরে দাঁড়ানোর কথা ঘোষণা করেন। তিনি জানিয়েছিলেন, বিধানসভা ভোটে আর তিনি প্রার্থী হতে চান না। যাঁরা তাঁকে পছন্দ করছেন না, তাঁরা অন্য প্রার্থী খুঁজে নিতে পারেন। এরপর কমলপুত্রের অনুগামীরা দলীয় ব্যানার ছাড়া ছাত্র-যুব কনভেনশন ডাক দেন। রবিবার উদয়নবাবু অবশ্য বলেন, কর্মিসভার বিষয়টি দলীয়। সেই সভার বিষয়ে বাইরে কিছুই বলব না। তবে দল বদল করার বিষয় স্বপ্নেও ভাবিনি। দলীয় ব্যানার ছাড়া ওই ছাত্র-যুব কনভেনশন এদিন দিনহাটায় অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কনভেনশনের উদ্যোক্তাদের মধ্যে অন্যতম তৃণমূল নেতা তথা পুরসভার ওয়ার্ড কো-অর্ডিনেটর জয়দীপ ঘোষ। তিনি উদয়নবাবুর ঘনিষ্ঠ হিসেবেই পরিচিত। তিনি বলেন, উদয়নবাবুর নেতৃত্বে রাজনীতি করি। তাঁর অনুপ্রেরণাতেই ছাত্র-যুবদের নিয়ে কনভেনশনের ডাক দেওয়া হয়েছিল। কোনও দলের তরফে নয়। লকডাউনের জেরে তা আপাতত স্থগিত করা হয়েছে।
এই ঘটনাগুলি সামনে আসার পর গত শুক্রবার দিনহাটায় গিয়ে উদয়নবাবুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন রাজ্য তৃণমূলের ‘দূত’ আলিপুরদুয়ারের বিধায়ক সৌরভ চক্রবর্তী। তিনি তৃণমূলের উত্তরবঙ্গের কোর কমিটির কো-অর্ডিনেটর। ওই বৈঠক নিয়ে উদয়নবাবু কিছু বলতে চাননি। সৌরভবাবু বলেন, দলত্যাগ বা ভোটে না দাঁড়ানোর কোনও বিষয় নেই। দলীয় নেতৃত্বের প্রতি শ্রদ্ধা ও আস্থা আছে বলে জানিয়েছেন তিনি। তাঁদের বিরুদ্ধে কোনও বক্তব্য নেই। তিনি দিনহাটায় স্বাধীনভাবে দল পরিচালনা করতে চেয়েছেন। তাঁর বক্তব্য দলের রাজ্য নেতৃত্বের কাছে জানাব। এরপর যা পদক্ষেপ নেওয়ার তাঁরা নেবেন।
একদা দিনহাটা কমল গুহের দুর্গ হিসেবে পরিচিত ছিল। ২০১১ সালে রাজ্যে পালাবদলের তীব্র হাওয়া উঠলেও দিনহাটার মাটি ধরে রেখে ছিলেন কমলপুত্র উদয়নবাবু। তখন তিনি ফরওয়ার্ড ব্লকে ছিলেন। ২০১৫ সালের অক্টোবর মাসে তৃণমূলে যোগ দেন। সেবারও বিধানসভা নির্বাচনে তিনি জয়ী হন। এরপর থেকেই বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী দিনহাটার মাটিতে শুরু হয় পুরনো ও নতুন তৃণমূলে দ্বন্দ্ব। যা এখনও অব্যাহত। ফলে বিধনসভা কেন্দ্রের ১৬টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে অধিকাংশ অঞ্চলে উদয়নবাবু কোণঠাসা। এই অবস্থায় সৌরভ ও উদয়নের বৈঠকের পর তৃণমূলের একাংশের বক্তব্য, ভোটে না দাঁড়ানোর ঘোষণা আসলে উদয়নবাবুর চমক। আসলে দলের রাশ নিজের হাতে নিতে চাইছেন প্রাক্তন এই ফরওয়ার্ড ব্লক নেতা।। উদয়নবাবু অবশ্য বলেন, তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পর অঞ্চল কমিটি সহ কোথাও কোনও পরিবর্তন হয়নি। সকলের সঙ্গেই আছি।