বিজনোর: চারিদিকে ভরা দর্শক, মঞ্চে ঝলমলে আলো। মন্ত্রী এসে দশরথকে শোনালেন রাম ফিরে আসেননি। পুত্র শোকাতুরা দশরথ ‘রাম রাম’ বলতে বলতে মঞ্চে লুটিয়ে পড়লেন। চারিদিকে হাততালির গর্জন। সবাই ভাবছিলেন নিখুঁত অভিনয়! পরবর্তী দৃশ্যের জন্য পর্দা নামানো হয় মঞ্চের। কিন্তু ডাকাডাকি করেও তোলা যায়নি দশরথ ওরফ রাজেন্দ্রকে। ডেকে আনা হয় স্থানীয় চিকিৎসককে। তিনি জানান, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছেন তিনি। অভিনয় মঞ্চেই শেষ নিঃশ্বাস ফেলেন শিল্পী। সহ অভিনেতারাও বুঝতে পারেননি কখন নেমে এল মৃত্যু। এই ঘটনায় উত্তরপ্রদেশের বিজনোর জেলার ছোট্ট গ্রাম হাসানপুরে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। টানা ২০ বছর ধরে রামলীলায় দশরথের অভিনয় করছেন রাজেন্দ্র সিং (৬২)। যদিও ছোট থেকেই গ্রামের পৌরাণিক যাত্রাপালায় হাতেখড়ি তাঁর। স্থানীয় বাসিন্দা ও তাঁর ভাইপো জানিয়েছেন, তাঁদের গ্রামে প্রতিবছর চার দিন ধরে রামলীলা অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিবারই তাতে অভিনয় করতেন রাজেন্দ্র। সপ্তমী থেকে শুরু হয়ে পালা চলে দশেরা পর্যন্ত। বৃহস্পতিবার রাজেন্দ্রর মৃত্যু হয়। তারপরই এ বছরের মতো বন্ধ করে দেওয়া হয় রামলীলা।
উত্তরপ্রদেশে একসময় গ্রাম প্রধানের দায়িত্ব সামলেছেন কাশ্যপ। গত দু’দশকেরও বেশি সময় ধরে রামলীলা কমিটির মঞ্চাভিনেতা। অভিনয় করতেন রাজা দশরথের ভূমিকায়। তাঁর অভিনয়ের সুনাম ছড়িয়ে পড়েছিল গোটা রাজ্যেই। শুক্রবার রাতে অভিনয় করার সময়ই চিত্রনাট্যের সঙ্গে অদ্ভুত সামঞ্জস্য রেখেই মারা গেলেন তিনি। তাঁর মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ উত্তরপ্রদেশের নাট্যমহল। রামলীলা কমিটির প্রেসিডেন্ট সঞ্জয় সিং গান্ধী বলেছেন, ‘অভিনয় যে এভাবে সত্যি হয়ে উঠবে তা ভাবতেই পারছি না! মঞ্চে কাশ্যপের অভিনয় বরাবরই জীবন্ত হয়ে ওঠে। এদিনও তাঁর মৃত্যুর অভিনয়ে মুগ্ধ হয়েছিলেন দর্শকরা। হাততালি দিচ্ছিলেন বারবার। অথচ, তিনি যে সত্যিই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছেন, সেটাই কেউই বুঝতে পারেননি। অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা।’