গুরুত্বপূর্ণ কাজে সাফল্য। আর্থিক ও বিদ্যাবিষয়ে দিনটি শুভ। শুত্রুভাবাপন্নদের এড়িয়ে চলুন। ... বিশদ
চাহিদার কারণ, সে শাড়ির নকশা। তখনকার শিল্পীদের কেউই এখন বেঁচে নেই। তাঁদের কলাকৃতি ক্রমশ হারিয়ে যাওয়ার পথে। সে শিল্পীদের যত্ন, মুন্সিয়ানা, শিল্পবোধ এখন খুঁজে পাওয়া ভার। ফলে পুরনো বেনারসির নকশাগুলি হতো চোখ ধাঁধানো। সেই নকশার জন্যই এত কদর। ফলে একটি পুরনো শাড়ির জন্য হাজার হাজার টাকা খরচ করতে দ্বিধা করেন না ব্যবসায়ীরা।
বাঙালি বিবাহে বেনারসির বিকল্প নেই। এমনকী বিদেশেও এর কদর। কিন্তু বেশ কয়েকবছর হল মুশকিলে পড়েছেন বেনারসির কারিগররা। আধুনিক ডিজাইনগুলি হয়ে গিয়েছে একঘেয়ে। অভিনবত্ব কমে আসছে। ফলে ক্রেতারা খুঁতখুঁত করছেন। কিছুতেই কিছু পছন্দ হচ্ছে না। এবার নতুন কিছু করার তাগিদে পিছনের দিকে ফিরতে চাইলেন ব্যবসায়ীরা। নতুনের সন্ধান পেতে ছুটলেন অতীতে। বেনারসির যে নকশা ইতিহাস হয়ে আলমারিতে রয়েছে সেগুলির নকশা ফের জরির কারুকাজে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা শুরু হয়েছে।
উত্তর কলকাতার বনেদি দোকান বেনারসি টেক্সটোরিয়ামের মালিকের আদিবাড়ি বেনারস শহরে। তাঁদের কারখানায় শয়ে শয়ে বেনারসি তৈরি হয়। দোকানের কর্ণধার তাপস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘ঠিক যেভাবে শহর কলকাতায় একাধিক সংস্থা প্রাচীন বাড়ির অ্যান্টিক জিনিস কেনে, আমরাও তেমনই পুরনো বেনারসি কিনি। ১৯৬৩ সালের আগে তৈরি শাড়িই কিনে থাকি আমরা। যত বেশি পুরনো তার দাম তত বেশি।’ তাপসবাবু সহ অন্যান্য কুলীন ব্যবসায়ীদের বক্তব্য, পুরনো দিনের কারিগরদের শিল্পকলা আমরা আর চেষ্টা করলেও হাতেকলমে পাব না। তাঁরা যেসব অপূর্ব নকশা শাড়ির গায়ে ফুটিয়ে তুলতেন সে নান্দনিকতা এখন কল্পনাও করা যায় না। আমরা বাজার ধরতে সেই কারুকাজকে আবার ফিরিয়ে আনতে চাই। পুরনো একটি নকশা পেলে তা থেকে একাধিক অভিনব নকশা তৈরি করা যায়। তাপসবাবু যেমন বলেন, ‘বেনারসিটি কত পুরনো তার আঁচ আমরা একঝলক দেখেই আন্দাজ করতে পারি। ৭০ হাজার টাকাও উঠেছে পুরনো বেনারসির দাম।’
পাড়ায় পাড়ায় পুরনো বেনারসি কেনেন বহু হকার। তাঁদের থেকে শাড়ি কেনেন গুজরাতের আদি বাসিন্দা রাজেশ কালতানিয়া। তিনি বলেন, ‘কলকাতারই বহু দোকান হকারদের থেকে পুরনো বেনারসি কেনে। সেগুলি হাত ঘুরে পৌঁছয় বেনারসের কারিগরদের কাছে। সেই ডিজাইন অনুকরণ করে বোনা হয় শাড়ি। এমন একটি ‘ঝুমকো’র ডিজাইন একবার হাতে এসেছিল। সেই নকশা তোলা বেনারসির কাটতি ছিল চোখে পড়ার মতো।’ গিরিশ পার্কের কাছে লিবার্টি সিনেমার সামনে গভীর রাতে বসে পুরনো কাপড়ের বাজার। গৃহস্থরা ছেঁড়া-ফাটা কাপড় বদলে বাসন কেনেন। সে কাপড় মেশিন মোছার কাজে লাগে। তারই সওদা হয় লিবার্টির কাছে। এই বাজারেই কিছু পুরনো বেনারসিও আসে। যার বাজারদর আকাশছোঁয়া। ব্যবসায়ীরাও জহুরির চোখে ছোঁ মেরে তুলে নেন সেসব শাড়ি।
তারপর শতাব্দী প্রাচীন ‘হারিয়ে যাওয়া’ নকশা নতুন করে উঠে আসে আধুনিক কোনও বাঙালি কন্যার গায়ে। আর নতুনভাবে প্রাণ পায় পুরনো বেনারসির আধুনিক সংস্করণ।