পারিপার্শ্বিক কোনও ঘটনা চিন্তা বাড়াতে পারে। সাংস্কৃতিক কর্মে যোগদান ও মানসিক তৃপ্তিলাভ। শরীরের খেয়াল রাখুন। ... বিশদ
২০১৫-র ২৬ মার্চ আর ২০২৫-এর ৪ মার্চ। এক দশকের ব্যবধান। দশ বছর আগে ওডিআই বিশ্বকাপের সেমি-ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে নেমেছিল মহেন্দ্র সিং ধোনির ব্রিগেড। অভিশপ্ত সেই দিনে ৩২৯ তাড়া করতে নেমে মুখ থুবড়ে পড়েছিল টিম ইন্ডিয়া। হারতে হয়েছিল ৯৫ রানে। হতাশা, যন্ত্রণা থেকেই ‘ম্যাচ কা মুজরিম’ হিসেবে বিরাট কোহলিকে বেছে নিয়েছিলেন সমর্থকরা। মাত্র ১ রান করে ফেরা মহাতারকাকে তিরবিদ্ধ করে স্বস্তি মেলেনি। কাঠগড়ায় তোলা হয়েছিল গ্যালারিতে উপস্থিত অনুষ্কা শর্মাকেও। মুচমুচে চর্চা চলতে থাকে, বলিউডি নায়িকার জন্যই নাকি কোহলির এমন দুর্দশা! দেশে ফেরার পথে চোখের জল সঙ্গী হয়েছিল অভিনেত্রীর। কেউ ভাবলেনও না, ভিকে’র ব্যর্থতার জন্য বান্ধবীকে দায়ী করা যুক্তি-তর্কের বাইরে! মঙ্গলবারের মরুরাজ্যও সাক্ষী থাকল অনুষ্কার চোখের জলের। তফাত হল, এবার সেটা আনন্দাশ্রু। হাফ-সেঞ্চুরির পর কোহলি উঁচিয়ে তুললেন ব্যাট। মুহূর্তের মধ্যে লাইভ ক্যামেরা ধরল গ্যালারিতে বসে হাততালি দিতে থাকা অনুষ্কাকে। চোখের কোণ চিকচিক করছে আনন্দে। ঝলমলে মুখে একরাশ স্বস্তি। মনের গভীরে এতদিন ধরে জমে থাকা অপমানের ক্ষতে যে পড়ল শান্তিজল।
স্বয়ং বিরাটের কাছেও এদিনের রান তাড়া ছিল অগ্নিপরীক্ষা। যতই চেজমাস্টার হন, নেটদুনিয়ায় তাঁকে ব্যঙ্গ করে ‘চোকলি’ বলেন অনেকে। গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে তিনি নাকি ‘চোক’ করে যান। সিডনির সেমি-ফাইনাল, মোতেরার ফাইনাল সেই তত্ত্বেরই নিদর্শন। দেড় বছরও হয়নি, সবরমতীর পাড়ে একলাখি দর্শকের গ্যালারি নিমেষে যেন পরিণত হয়েছিল শ্মশানে। অজি অধিনায়ক প্যাট কামিন্স চুপ করিয়ে দিয়েছিলেন ভারতীয় সমর্থকদের গর্জন। ট্রাভিস হেডের সেঞ্চুরি দুরমুশ করছিল কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারিকার আশা-আকাঙ্খাকে। ড্রেসিং-রুমে কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন মহারথীরা। বিধ্বস্ত কোচ রাহুল দ্রাবিড় পর্যন্ত প্রকাশ্যে স্বীকার করেন যে, হতাশা লুকনো যাচ্ছে না। বিশ্বকাপের স্বপ্নটা ক্রিকেটাররাই যে সবচেয়ে বেশি দেখেছিলেন!
সিডনির অসহায়তা, মোতেরার ভরাডুবির প্রেক্ষাপটে এদিনের ম্যাচ-জেতানো ইনিংস তাই সোনার চেয়েও দামি। নক-আউটে ভিকে’র দায়িত্বশীল ৮৪ এতকালের অজি আতঙ্ককে ছুড়ে ফেলল পারস্য উপসাগরে। ক্রিজে এসেছিলেন পঞ্চম ওভারে। তারপর যথারীতি নিজস্ব টেমপ্লেট মেনে ইনিংস গড়া। ঝুঁকি ছেঁটে ফেলে রোলস রয়েসের মসৃণতায় জয়ের কাছাকাছি পৌঁছে দেন দলকে। স্কোরবোর্ড সচল রাখলেন এক-দুই নিয়ে। মাঝে মাঝে চাপ কাটাতে বাউন্ডারি। একটাই সুযোগ দিয়েছিলেন। কনোলির বলে শর্ট কভারে দাঁড়ানো ম্যাক্সওয়েল তা হাতে জমাতে পারেননি। তিনি তখন ৫১ রানে। স্টিভ ওয়ার মতো বলতেই পারতেন, তুমি তো ম্যাচটাই ফেলে দিলে হে!
উল্টোদিকে উইকেট পড়লেও কোহলি ছিলেন লক্ষ্যে অবিচল। শুকনো পিচে বল ক্রমশ হারিয়েছে গতি। অ্যাডাম জাম্পা, তনবীর সাঙ্ঘা, কনোলি, ম্যাক্সওয়েলের স্পিন চ্যালেঞ্জও ছোবল মারতে চেয়েছে। কিন্তু সোজা ব্যাটে আত্মবিশ্বাসের প্রতিমূর্তি দেখিয়েছে ৩৬ বছর বয়সিকে। পাকিস্তান ম্যাচের মতো এদিনও দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়তে পারতেন। পূর্ণ করতে পারতেন আরও একটা সেঞ্চুরি। কিন্তু ফের জাম্পার শিকার তিনি। ছয় মারতে যাওয়ার দরকার যদিও ছিল না। ছক্কা মেরে ম্যাচ শেষ করতে গিয়ে হার্দিক পান্ডিয়ার আত্মহত্যাও অহেতুক। লোকেশ রাহুল অবশ্য সেই ভুল করেননি। গ্যালারিতে বল পাঠিয়ে এনেছেন ফাইনালের টিকিট। আলো ঝলমলে দুবাইয়ের রাত যদিও শেষপর্যন্ত কোহলিময় হয়েই থাকল। শাপমোচন ছাড়া আর কী!