কাজকর্মের ক্ষেত্রে ও ঘরে বাইরে বাধা থাকবে। কারও প্ররোচনায় যে কোনও সিদ্ধান্ত গ্রহণে সতর্ক হন। ... বিশদ
ঝাড়খণ্ডের গিরিডি জেলার পরেশনাথ পাহাড় বা শমেত শিখরে ২৪ জন তীর্থঙ্করের মধ্যে ২০ জন মোক্ষ লাভ করেন। জৈন তীর্থঙ্কর ও তাঁদের শিষ্যরা রাঢ় এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছিলেন। খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতাব্দী থেকেই জৈন ধর্মাবলম্বী মানুষরা জঙ্গলময় রাঢ় ভূমিতে বসবাস শুরু করেন। তাম্রলিপ্ত তেলকূপী বন্দরকে কেন্দ্র করে তাদের ব্যবসা ও বাণিজ্যের প্রসার ঘটেছিল। জৈন ধর্মের মানুষরা মন্দির কেন্দ্রিক জীবনযাপন করতেন। জৈন ধর্মের তাঁরাই ছিলেন প্রধান পৃষ্ঠপোষক। দ্বাদশ-ত্রয়োদশ শতাব্দীর পর থেকে রাঢ়বঙ্গ তথা জঙ্গলমহলে জৈন ধর্মের প্রভাব কমতে থাকে। রয়ে যায় অগণিত দেউল, জৈন দেবদেবী ও তীর্থঙ্করদের মূর্তি। জঙ্গলমহল সেসব দেবদেবী ও তীর্থঙ্করদের মূর্তিই হিন্দু ও লৌকিক দেবদেবী হিসেবে এখন পূজিত হচ্ছে। বিনপুর-১ ব্লকের বড়কলা গ্ৰাম আদতে একটি জৈন ক্ষেত্র। গ্ৰামের নানা প্রান্তে দেউলের প্রস্তরখণ্ড ও জৈন মূর্তির ভগ্নাংশ রয়েছে। গ্ৰামের গরাম থানে এক তীর্থঙ্করের ভগ্ন জানুদ্বয়ের অংশ শাঁখাসিনী দেবী হিসেবে পূজিত হয়। নেপুরা গ্ৰামের তীর্থঙ্কর পার্শ্বনাথের যক্ষিণী মা পদ্মাবতী খাঁদারানি দেবী রূপে পূজিত হচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দা তুষার মাইতি বলেন, গ্ৰামের মানুষ এখানে পুজো দিতে আসেন। তবে ইনি জৈন ধর্মের দেবী কিনা তা আমাদের জানা নেই। বিনপুর-২ ব্লকে করাতশোল গ্ৰামে মাথার ওপরে সর্পফনা বিস্তৃত তীর্থঙ্কর পার্শ্বনাথের মূর্তি মা বাসুলি হিসেবে পূজিত হচ্ছে। ভোগতা সম্প্রদায়ের পুরোহিত পুজো করার অধিকারী। বিনপুর-২ ব্লকে ডুলুং নদীর তীরে রাজপাড়া গ্ৰামে তীর্থঙ্কর পার্শ্বনাথের মূর্তি সত্যনারায়ণ রূপে পূজিত হয়। সাঁকরাইল ব্লকের বর্ধিষ্ণু গ্ৰাম রোহিনী। সুবর্ণরেখা ও ডুলুং নদীর মিলন স্থলে আড়াই হাজার বছর আগে বন্দর ছিল। এই এলাকায় একাধিক জৈন দেউল আছে। এলাকার একটি পাথরের মূর্তি ভৈরব হিসেবে পূজিত হয়। যদিও হিন্দু দেবদবীর কোনও মূর্তির সঙ্গে এর মিল নেই। গবেষকদের অনুমান, জৈন বনিকরা তীর্থঙ্কর অজিতনাথের যক্ষণী রোহিনীর কোনও দেউল ছিল। যার সঙ্গে এলাকার নাম জুড়ে আছে। নিকটবর্তী রগড়া এলাকায় তীর্থঙ্কর ঋষভনাথের মূর্তি স্থানীয় মানুষের কাছে খাঁদিবুড়ি নামে পরিচিত। গোপীবল্লভপুর-১ ব্লকে সুবর্ণরেখা নদীর তীরে হাটচালাতে কাশীশ্বর শিবমন্দির রয়েছে। মন্দিরের ভিতরে তীর্থঙ্করের মূর্তি রয়েছে। শিবের সঙ্গে এই মূর্তিরও পুজো হয়। লালগড়ের কংসাবতী নদীর তীরে ডাইনটিকরি প্রধান জৈন প্রত্নস্থল। পরিত্যক্ত মন্দিরে কোনও দেবদেবীর মূর্তি নেই। রানি ইন্দিরা দেবী মহিলা মহাবিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সুশীলকুমার বর্মন বলেন, রাঢ় ভূমিজুড় খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম থেকে ত্রয়োদশ শতাব্দী পর্যন্ত জৈন ধর্মের প্রভাব ছিল। জৈন ধর্মাবলম্বী মানুষরা এখানে বসবাস করতেন। ধর্মীয় আচার আচরণের মধ্যে তাদের জীবন আবর্তিত হন। তাঁরাই এখানে জৈন দেউল নির্মাণ করেছিলেন। সেখানে জৈন দেবদেবী ও তীর্থঙ্কররা পূজিত হতেন। রাজনৈতিক পালাবদল ও শৈব্য ধর্মের প্রসারে জৈন ধর্মের প্রসার কমে যায়। জৈন দেবদেবী ও তীর্থঙ্কররা কিন্তু এখানে হিন্দু ও স্থানীয় লৌকিক দেবদেবী হিসেবে পূজিত হচ্ছেন। এই এলাকায় ধ্বংসস্তূপের আড়ালে জৈন সভ্যতা ও সংস্কৃতির ইতিহাস লুকিয়ে রয়েছে। তাঁর পুনরুদ্ধার প্রয়োজন।-নিজস্ব চিত্র