উচ্চতর বিদ্যায় সাফল্য আসবে। প্রেম-ভালোবাসায় আগ্রহ বাড়বে। পুরনো বন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাতে আনন্দলাভ হবে। সম্ভাব্য ক্ষেত্রে ... বিশদ
কর্মিসভার সঙ্গে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের মনোমালিন্য, কবিগুরুর প্রতিষ্ঠিত বিশ্বভারতীর নিরাপত্তার জন্য সিআইএসএফ চাওয়া সহ একাধিক বিষয় নিয়ে উত্তেজনার পরিবেশ রয়েছে বিশ্বভারতীতে। তারই মাঝে সমাবর্তন অনুষ্ঠানের আয়োজন হয়। অনুষ্ঠানে ছাত্রছাত্রী, কর্মী-অধ্যাপকদের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ প্রতিষ্ঠানের সবচেয়ে গরিমাময় অনুষ্ঠানে পড়ে কিনা সেদিকে অনেকেরই নজর ছিল। বিশেষ করে যে অনুষ্ঠানে হাজির রয়েছেন খোদ বিশ্বভারতীর পরিদর্শক ও রেক্টর সেখানে এনিয়ে চাপে ছিল কর্তৃপক্ষও। কিন্তু এর প্রভাব রাষ্ট্রপতি ও রাজ্যপালের সফরসূচিতে না পড়ায় সফল বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ।
কিন্তু বিশ্বভারতীর অনুষ্ঠান যে বিতর্কশূন্য হবে, তা সাম্প্রতিক ইতিহাস দেখে কেউই আশা করেননি, তা হয়নিও। সমাবর্তনের আগের দিন রবিবারের পরিবেশ থেকেই স্পষ্ট হয়ে যায়, প্রতিষ্ঠানে সিআইএসএফ আনা প্রতিহত করতে মরিয়া ছাত্রছাত্রীদের একাংশ। তারা রবিবার রাষ্ট্রপতির উদ্দেশে খোলা চিঠি দেয়। এরপরে এদিন আরও মরিয়া হয়ে ওঠে ছাত্রছাত্রী সংগঠন ডিএসওর প্রতিনিধি ছাত্রছাত্রীরা। তারা বিশ্বভারতীর এক নম্বর গেটের সামনে এদিন সকাল থেকে প্ল্যাকার্ড হাতে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে। তাদের স্পষ্ট দাবি, কোনওমতেই মুক্ত, স্বাধীন চিন্তাধারার বিশ্বভারতীর নিরাপত্তার দায়িত্বে বন্দুকধারী সিআইএসএফ মেনে দেওয়া হবে না। রাষ্ট্রপতির যাত্রাপথের ঠিক পাশেই এই বিক্ষোভ নিয়ে পুলিসের ঘুম ছুটে যায়। পরে পুলিসি তৎপরতায় তাদের সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। এছাড়াও সমাবর্তনস্থল আম্রকুঞ্জে উপস্থিত না থাকতে পারা নিয়েও ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ছড়ায়। এবার ভবনগুলির প্রতিটি বিভাগের জন্য মাত্র পাঁচটি করে পাস ইস্যু করা হয়েছিল। বাকি ছাত্রছাত্রীদের কোনও পাস দেওয়া হয়নি। পাস না পেয়েও এদিন সমবর্তন অনুষ্ঠানে ঢুকতে গিয়ে বাধা পান বিশ্বভারতীর ছাত্রছাত্রীরাই। তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচয়পত্র দেখিয়ে ঢোকার চেষ্টা করলেও পাস না থাকায় ঢুকতে দেওয়া হয়নি। এনিয়ে সমাবর্তন অনুষ্ঠানের বাইরেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন কিছু ছাত্রছাত্রী। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ছাত্রছাত্রীদের দাবি, বিশ্বভারতীতে পড়েও আমরা আমাদের প্রতিষ্ঠানের সমাবর্তন দেখতে পাবো না, এটা কী নিয়ম? কবিগুরুর প্রকৃতিকেন্দ্রীক, মুক্ত চিন্তাধারার শিক্ষা ব্যবস্থার এত প্রশংসা করা হলেও এখন সংকীর্ণ মানসিকতার পরিচয় দেওয়া হচ্ছে। সবাইকেই সমাবর্তন দেখার সুযোগ দেওয়া উচিত।
এদিন সমাবর্তনের কিছু রীতিতেও ছেদ পড়েছে বলে অভিজ্ঞ মহলের দাবি। শান্তিনিকেতন ট্রাস্টের সাম্মানিক সম্পাদক অনিল কোনার বলেন, আমি ১৯৫৮সাল থেকে সমাবর্তন দেখছি। প্রতিবারই ‘বিশ্ববিদ্যা তীর্থ প্রাঙ্গণ করো মহোজ্জ্বল আজও হে’ গানটি সমাবর্তন অনুষ্ঠানে হয়েছে। এবার তা না শুনতে পেয়ে একটু খারাপ লেগেছে। হয়তো সময়ের অভাবে তা করা যায়নি। তবে বাকি ব্যবস্থাপনা খুবই ভালো ছিল। একইভাবে অনেকে বলেছেন, এতদিন জহর বেদিতে গদি দিয়ে পিছনে গোল বালিস রেখে সেখানেই সমাবর্তন অনুষ্ঠানে বসতেন রাষ্ট্রপতি থেকে প্রধানমন্ত্রী। এমনকী গতবারও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি একইভাবে জহর বেদিতে বসেছিলেন। কিন্তু এবার চেয়ারে বসেছিলেন রাষ্ট্রপতি ও রাজ্যপাল। অতিথিদের বসার জায়গায়ও যথেষ্ট দূরে করা হয়েছিল।
অন্যদিকে, উত্তীর্ণ ছাত্রছাত্রীদের অভিভাবকদের সমাবর্তনে থাকার সুযোগ না পাওয়া নিয়েও ক্ষোভ দেখা গিয়েছে। অনেকের মতে, গতবার আট বছর পর সমাবর্তন হয়েছিল। তাই বিপুল সংখ্যক উত্তীর্ণ ছাত্রছাত্রীর অভিভাবকদের জায়গা দেওয়া সম্ভব হতো না। কিন্তু এবার সেই পরিস্থিতি ছিল না। যদিও এনিয়ে বিশ্বভারতীর জনসংযোগ আধিকারিক অর্নিবাণ সরকার বলেন, পুলিস ও প্রশাসনের নির্দেশ মেনে আমন্ত্রণের উপর রাশ টানা হয়েছে।
যদিও বির্তকের মাঝেও সমাবর্তন সুষ্ঠভাবে সম্পন্ন হওয়ায় খুশি শংসাপত্র পেতে চলা ছাত্রছাত্রীরা। ত্রিবেণী ঘোষ, চন্দ্রা পাল, শুভময় রায়রা বলেন, সমাবর্তন অনুষ্ঠান নিয়ে আমরা খুশি। বিশৃঙ্খলা এড়ানোর জন্য যদি কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয় তাহলে তা ভালোই। কারণ কোনও বিশৃঙ্খলা হলে বদনাম হতো আমাদের প্রতিষ্ঠানের। সমাবর্তন অনুষ্ঠান নিয়ে খুশি রাষ্ট্রপতি মনোনীত কর্মসমিতির সদস্য সুশোভন বন্দ্যোপাধ্যায়ও।