অতিরিক্ত পরিশ্রমে শারীরিক ক্লান্তি বৃদ্ধি। প্রিয়জনের মানহানির আশঙ্কা। দাম্পত্য জীবনে মতানৈক্য এড়িয়ে চলা প্রয়োজন। অত্যধিক ... বিশদ
নন্দীগ্রাম এবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের যুদ্ধক্ষেত্র। সম্মান রক্ষার। রাজ্য-রক্ষার। তাই ঘরে বসে তিনি থাকবেন না। থাকতে পারবেন না। জনসভা করবেন, পদযাত্রাও। হোক না হুইল চেয়ারে! কিন্তু তিনি শুধু মুখ্যমন্ত্রী নন। বাংলার ঘরের মেয়ে। তাই নিরাপত্তারক্ষীদের তটস্থ করে বড় রাস্তা থেকে নেমে যাবে সেই হুইল চেয়ার। গ্রাম্য রাস্তা বেয়ে ঢুকে পড়বে নন্দীগ্রামের মানুষের বাড়িতে। আচমকা পাড়ার মধ্যে মমতাকে দেখে খুশি বাঁধ ভাঙবে কচিকাঁচাদের। এ যে মেঘ না চাইতেই জল! গ্রামের মানুষের উচ্ছ্বাস দেখে আপ্লুত নন্দীগ্রাম কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থীও। এই স্বতঃস্ফূর্ততা তাঁর মনের জোর বাড়ায়... আরও আত্মবিশ্বাসী করে তোলে। তাই পদযাত্রা শেষে ঠাকুরচকের সভায় তিনি জানিয়ে দেন, ‘এখানেই লড়ব, জিতব এবং এখান থেকেই সরকার গড়ব।’ ঘোষণা নয়, হুঙ্কার। পাশাপাশি প্রতিশ্রুতিও...সিএম অফিস হবে। এখানে... নন্দীগ্রামে।
কথা ছিল, নন্দীগ্রামের এন্ট্রি পয়েন্ট ক্ষুদিরাম মোড় থেকে ঠাকুরচক পর্যন্ত রোড শো করবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেইমতো এদিন বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ ক্ষুদিরাম মোড় থেকে কর্মসূচি শুরু হয়। ৬০০ মিটার এগনোর পর মুখ্যমন্ত্রী জানান, এই সড়ক নয়, তিনি পাড়ার ভিতর ঢুকে মানুষের কাছে পৌঁছতে চান। তারপর ৬০০ মিটার এগনোর পর পালইমোড়ের কাছে মুখ্যমন্ত্রীর রোড-শো গুড়িয়াপাড়ার দিকে বাঁক নেয়। ঢালাই রাস্তার দু’দিকে পুকুর, মাথার উপর বাঁশবাগান... এরকম অলিগলি পথ বেয়ে নন্দীগ্রাম-২ ব্লকের প্রত্যন্ত গ্রামে ঢুকে ভোটপ্রচার সারেন তৃণমূল সুপ্রিমো। গুড়িয়াপাড়ার পরই রেয়াপাড়া গ্রামীণ শীতলা মন্দির। নেত্রীর আসার খবরে সেই মন্দির চত্বরে তখন কাতারে কাতারে মানুষ। কর্ডলেস মাইক্রোফোন হাতে তুলে নিলেন মমতা। বললেন, ‘আমি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নন্দীগ্রামের তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী। আপনাদের সমর্থন চাই।’
মুখ্যমন্ত্রীর রোড শো বিক্রমচক, ভীমবাজার, তারপর রেয়াপাড়া বড়পাকার পুল, খোদামবাড়ি, শ্যামরাইপুর হয়ে ঠাকুরচক পর্যন্ত যায়। বেলা ১টা। সভামঞ্চ তৈরিই ছিল। মমতা হুঁশিয়ার করে দেন মানুষকে, ‘নন্দীগ্রামে অনেক বহিরাগতকে আনা হচ্ছে। তাদের জন্য পুলিসের পোশাকও কেনা হচ্ছে। উর্দি পরে বহিরাগতরা হামলা চালাতে পারে। আপনারা সতর্ক থাকুন। আমি জানি, এখানকার মা-বোনেরা লড়ে নিতে জানে।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ প্রথম দফার ৩০টি আসনের মধ্যে ২৬টিতে জয়ের দাবি করেছেন। সেই প্রসঙ্গ তুলে ধরে মমতা বলেন, ‘আসলে বিজেপি ম্যাচে হেরে গিয়েছে। তাই ক্যাডারদের মনোবল বাড়াতে এসব বলছে। মনে হচ্ছে, ৩৫৬ ধারা জারি করে ভোট হচ্ছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ক্ষমতার অপব্যবহার করছেন।’ তাঁর স্পষ্ট বার্তা, ‘আমি নন্দীগ্রামের মানুষের কাছে ঋণী। এখান থেকে জিতে দিল্লিতে আন্দোলনরত কৃষকদের কাছে যাব। এখানে খেলা হবেই। খেলতে হবে। নন্দীগ্রামে যাঁরা আন্দোলন করেছেন তাঁদের বিরুদ্ধে কেস দিয়েছে। আর গদ্দারবাবুদের বিরুদ্ধে কেস নেই! ওরাই সিপিএমকে ডেকে এনেছিল। সিপিএমের ক্যাডাররা পুলিসের পোশাক পরে গুলি চালিয়েছিল। সেই সব সিপিএমের হার্মাদ এখন বিজেপিতে। গণহত্যায় অভিযুক্ত সিপিএম নেতা নব সামন্ত এখন বিজেপির নেতা।’
নেত্রী ঠাকুরচকের সভা শেষ করে বয়াল এবং তারপর আমদাবাদে সভা করেন। রবিবার তিনি রেয়াপাড়া সিদ্ধনাথ ময়দানে বসন্ত উৎসবে যোগ দিয়েছিলেন। বিশিষ্ট কীর্তন শিল্পী তথা রাজারহাট-গোপালপুর কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী অদিতি মুন্সির গানে জমজমাট হয়ে ওঠে বসন্ত উৎসব। মমতা আবারও বুঝিয়েছেন, এবার ভোট মানুষের স্বার্থে, মেরুকরণের বিরুদ্ধে। লাঠিহাতে একগাল হাসি মুখে মেখে দাঁড়িয়ে আছেন কিশোরীদেবীরা। তাঁরাই যে মমতার সম্পদ!