পারিবারিক সম্পত্তি বিভাজনে আইনি চাপ বাড়তে পারে। কাজকর্মে যোগাযোগের অভাবে বিঘ্ন। ... বিশদ
‘কাকতালীয় সব ঘটনা ঘটছে এক সাথে, দেশে সীমানায় যুদ্ধ হচ্ছে’— গান দিয়ে শুরু হওয়া এই নাটকের চরিত্র তিনটি। একজন সাধারণ সৈনিক, একজন কমান্ডার এবং একজন নেতা। এই কমান্ডার আবার নিজেকে ‘পাহারাদার’ হিসেবে পরিচয় দেয়। অন্যদিকে সাধারণ সৈনিকের পরনে জলপাই রঙের হাফপ্যান্ট, সাফারি হ্যাট এবং গলায় স্কাউটের মতো ড্রাম দেখে দেখে দ্বন্দ্ব জাগে, তিনি কি সৈনিক নাকি সিভিক মিলিটারি! যাক সেকথা।
দেশে ভোট মানেই তা হল ‘যুদ্ধ’। কখনও সেই যুদ্ধ বাঁধে সীমান্তে। আর সীমান্তে না বাঁধলে সেই যুদ্ধ বাঁধার প্রয়োজন হয় দেশের অন্দরে। আমরা-ওরার জব্বর নাটকে ক্রীড়নক হয়ে যায় দেশের সাধারণ মানুষ। সুতো হয়ে ওঠে পুলিস, প্রশাসন, মিলিটারি! অতএব শত্রু এখন দেশের জনগণ। তাদের ভোটের কাগজ কই? ওঠে খোঁজ খোঁজ রব। তা না পাওয়া গেলে রয়েছে হিন্দু-মুসলিম, প্রকাশ্যে প্রেম, প্রকাশ্যে চুম্বনের মতো অপরাধ!
এভাবেই প্রথম থেকে নাটকের সুর বেঁধে দেয় সিভিক মিলিটারি এবং পাহারদারের সংলাপ। ক্রমশ দর্শক বুঝতে পারেন শ্লেষ, রসিকতার আড়ালে দর্শকই ক্রমশ সিভিক মিলিটারির জায়গার দখল করে নিচ্ছেন। পাহারাদার ক্রমশ হয়ে উঠছে এক রাজনৈতিক দলের আজ্ঞাবহ পুতুল! কুশীলবদের সাবলীল অভিনয়, কমিক টাইমিং অতুলনীয়।
আসা যাক দ্বিতীয় নাটকে। আয়না নাট্যগোষ্ঠী নির্দেশিত নাটকটির নাম ‘সিংহমুখ’। ডাঃ সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের জীবন ও কাজের উপর ভিত্তি করে সাহিত্যিক রমাপদ চৌধুরী লিখেছিলেন উপন্যাস ‘অভিমন্যু’। তা অবলম্বন করেই তৈরি হয়েছে এই নাটক। এই থিয়েটারও এক জ্বলন্ত প্রতিবাদ। এই প্রতিবাদ এক প্রথাগত সামাজিক গঠনের বিরুদ্ধে। এই কাঠামোয় একদল মানুষ থাকেন যাঁরা অন্য একদল মানুষকে শোষণ করে ক্রমশ বৃহত্ খাদকে পরিণত হন। এই কাঠামো নড়বড়ে হয়ে যায় যখন কিছু মানুষ আলাদা ভাবে ভাবতে শুরু করেন, এমন কিছু আবিষ্কার করেন যা শোষিত এবং শোষণকারীর তফাত ঘুচিয়ে দেবে। এমন মানুষদের ভয় পান পিরামিডের রক্ষাকর্তারা।
৪০ বছর আগে লেখা এক উপন্যাসের সময়কালের সঙ্গে হয়তো আধুনিককালের বিস্তর তফাত। এখন এসেছে সোশ্যাল মিডিয়া। মানুষ চাইলে আজ নিজের কথা নিজে বলতে পারে। তার পরেও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের স্বীকৃতির প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করা সম্ভব নয়। তাই এখনও বহু নবীন প্রতিভাবানকে নানা দরজায় কড়া নাড়তে হয়। কিছু কথা আমরা জানতে পারি, কিছু কথা সময়ের সঙ্গে গুঁড়ো হয়ে ধুলোয় মিশে যায়। শুধু মাঝেমধ্যে প্রতিবাদের মতো আয়না নাট্যগোষ্ঠী আসে, আরশি তুলে ধরে দর্শকের দিকে। দেখিয়ে দেয় সমাজের দগদগে ক্ষত!