বাধা ও অসফলতার জন্য চিন্তা। মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে কোনও ভালো যোগাযোগ পেতে পারেন। ... বিশদ
দেশের অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের অর্থনীতিবিদ স্বামী যাকে ‘বিশ্বের বৃহত্তম আর্থিক কেলেঙ্কারি’ বলেছেন, তার পোশাকি নাম নির্বাচনী বন্ড। সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে এই বন্ডের যাবতীয় অজানা তথ্য প্রকাশ্যে আসতেই দেখা গেল, সবচেয়ে বড় সুবিধাভোগীর নাম বিজেপি। কোন ব্যবসায়ী সংস্থা কোন রাজনৈতিক দলকে কত টাকা চাঁদা দিচ্ছে, তা আড়াল করতেই বন্ড চালু করেছিল মোদি সরকার। কিন্তু প্যান্ডোরার বাক্স খুলতেই দেখা গেল তার পরতে পরতে দুর্নীতির ছবি। যেমন, মোটা টাকার চাঁদার বিনিময়ে সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে কয়েক হাজার কোটি টাকার সেতু-সুড়ঙ্গ বানানোর বরাত পাইয়ে দেওয়া হয়েছে, ড্রাগ টেস্টে ‘ফেল’ করা কিছু ওষুধ কোম্পানি শাসকগোষ্ঠীকে কয়েকশো কোটি টাকা চাঁদা দেওয়ার বিনিময়ে তাদের ওষুধ বাজারে বিক্রি করার লাইসেন্স পেয়ে গিয়েছে! আবার কিছু সংস্থার কর্ণধারের বিরুদ্ধে মামলা বা তদন্ত চলছিল, তারা মোটা অঙ্কের চাঁদা দেওয়ায় তদন্ত-মামলা বন্ধ হয়ে গিয়েছে! এও দেখা গিয়েছে, লোকসানে চলা সংস্থাও কোটি কোটি টাকা চাঁদা দিয়েছে মোদির দলকে। পরপর কয়েক বছর মুনাফা হয়নি, তাও শাসকদলকে চাঁদা দিয়েছে—এমন নজিরও মিলেছে নির্বাচনী বন্ডে। সব মিলিয়ে বন্ড চালুর পর পাঁচ বছরে যত টাকা চাঁদা উঠেছে তার অর্ধেকের বেশি অর্থ গিয়েছে বিজেপির কোষাগারে। বাকি টাকা দেশের জাতীয়, আঞ্চলিক দলের মধ্যে ভাগ হয়েছে।
এই বৃহত্তম কেলেঙ্কারি যদি একটি দিক হয়, তাহলে ঘুরপথে দুর্নীতির আর এক অনন্য নজির গড়েছে নরেন্দ্র মোদি সরকার। সংবাদে প্রকাশ, মোদি জমানায় দুর্নীতির অভিযোগে কেন্দ্রীয় এজেন্সির তদন্তের মুখে পড়া ২৫ জন বিশিষ্ট বিরোধী নেতা বিজেপিতে যোগ দিয়ে কার্যত ‘ক্লিনচিট’ পেয়েছেন। এর মধ্যে ২৩ জনের ক্ষেত্রে তদন্ত বা মামলা বন্ধ হয়ে গিয়েছে অথবা তা হিমঘরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। তালিকায় এমন ছ’জন রয়েছেন যাঁরা ভোটের মুখে এ বছরই কেন্দ্রের শাসকদলে যোগ দিয়েছেন। যেমন প্রফুল্ল প্যাটেল। ইউপিএ জমানায় এয়ার ইন্ডিয়ার ১১১টি বিমান কেনা নিয়ে দুর্নীতির বড়সড় অভিযোগ ওঠে তৎকালীন বিমানমন্ত্রী প্যাটেলের বিরুদ্ধে। ২০১৭ সালে সিবিআই তাঁর বিরুদ্ধে মামলা শুরু করে। ২০১৯ সালে চার্জশিট পেশ হয়। দেখা যায়, ২০২৩-এ তিনি শাসকগোষ্ঠীতে যোগ দিতেই ‘ক্লিনচিট’, সিবিআই আদালতে এই মামলার ‘ক্লোজড’ রিপোর্ট পেশ করে। বিজেপি’র ‘ওয়াশিং মেশিনে’ কালো থেকে সাদা হওয়ার তালিকায় আরও অনেক রথী-মহারথীর নাম রয়েছে। কিন্তু যাঁরা এমন তদন্ত বা মামলার মুখে দাঁড়িয়েও ‘বাঁচার শর্ত’ হিসাবে বিজেপিতে যোগ দেননি তাঁদের জেলের ঘানি অথবা জেরার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। যেমন অরবিন্দ কেজরিওয়াল, হেমন্ত সোরেন, প্রমুখরা। সরকারি বরাত পাইয়ে দেওয়া, ফেলকে পাশ করিয়ে দেওয়া বা কেন্দ্রীয় এজেন্সিকে ব্যবহার করে দুর্নীতির এক নতুন চেহারার জন্ম দিয়েছেন নরেন্দ্র মোদি ও তাঁর দল। এই কাজে তাঁর দুই বিশ্বস্ত অস্ত্রের নাম সিবিআই ও ইডি। প্রভুর হয়ে তারা ময়দান কাঁপাচ্ছে।