বাধা ও অসফলতার জন্য চিন্তা। মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে কোনও ভালো যোগাযোগ পেতে পারেন। ... বিশদ
মোরশি তহশিল দপ্তরের বাইরে নিজের টেবিল চেয়ারে বসে ২১ বছর ধরে কাজ করা দলিল লেখক এ টি তাইদের চোখমুখ হঠাৎ উত্তেজনায় চকচক করছে। আজও সেই দৃশ্য তাঁর মন থেকে ম্লান হয়নি—‘১১ মাস ধরে এদের অনশন চলছে। ওই যে পাঁচিলটা দেখছেন, ওটাই ছিল অনশন মঞ্চ। প্রতিদিন কৃষকরা আসত। অনশনে। গোপাল বাজিরাও দহিবাড়েও অনশন করতে আসত। ২৪ জানুয়ারি তহশিল অফিসে এসে দেখলাম সেই মঞ্চেই ঝুলছে গোপাল।’
অমরাবতী জেলায় কৃষক আত্মহত্যা মামুলি সংবাদ। কেন? কারণ এ ব্যাপারে দেশের মধ্যে অমরাবতী চ্যাম্পিয়ন। গত বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর, মহারাষ্ট্রে কত কৃষক আত্মহত্যা করেছে? প্রায় ২৫০০। মানে মাসে গড়ে ২৪০ জন। আর একা অমরাবতী জেলায় ৯৫১ জন। মোরশি তহশিল অফিসে ছন্নছাড়া হয়ে আজও ঘুরছেন কৃষকরা। তাদের অনশন মঞ্চ ভেঙে দেওয়া হয়েছে। কেন? অপর ওয়ার্ধা ধরমগ্রস্ত পুনর্বাসন সমিতির সাধারণ সম্পাদক পঙ্কজ প্রভাকর বললেন, ‘পুলিস এসে বলল, আদর্শ নির্বাচনী বিধিতে নাকি অনশন করা যায় না! আমরা একনাথ সিন্ধের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছি। বলেছিলেন ১৫ দিনের মধ্যে কৃষক সমস্যার সমাধান করবেন। ৬ মাস হয়ে গেল। আমার পরিবারের কত জমি সরকার ওয়ার্ধা বাঁধের জন্য কেড়ে নিয়েছেন জানেন? ৪০ একর। ২০ হাজার কমলালেবুর গাছ ছিল। সব চলে গিয়েছে দময়ন্তী নদীর জলে। কংগ্রেসের আমলে একর প্রতি ৩০০ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছিল। কংগ্রেসকে বদলে দিয়েই তো বিজেপিকে আনা হয়েছে। অথচ অমরাবতীর কৃষকদের ভাগ্যবদল হল না। আমরা বাঁধ থেকে জলে ঝাঁপ দিয়েছিলাম জল সমাধির জন্য। এমনিতেই মরে যাব। বীজ, সারের দাম বাড়ছে। ফসল নষ্ট হলেও বিমা পাই না। মহাজনের টাকা শোধ করতে পারি না। রামমন্দির, মুদ্রা যোজনা, স্বচ্ছ ভারত, ওয়ান নেশন ওয়ান ইলেকশন—এরকম একটা কর্মসূচি সরকার নিতে পারে না কৃষকদের জন্য!’
মারাঠাওয়াড়া, বিদর্ভের ঘরে ঘরে আত্মহত্যা। প্রবীণ তালপাড়ে বললেন, আমার ছেলে দ্বাদশ শ্রেণির পর আর পড়ল না। আমার টাকা নেই। সে এখন কমলালেবু বিক্রি করে। আমরা কৃষক। আমাদের দাম কত বলুন তো? এসব কথার উত্তর হয় না। তাই তাকিয়ে রইলাম। প্রবীণ তালপাড়ে বললেন, গোপাল বাজিরাও আত্মহত্যা করেছিল। সরকার বলেছিল ৫ লক্ষ টাকা দেবে পরিবারকে। কত দিয়েছে জানেন? ৫০ হাজার। আমাদের জীবনের দাম ৫০ হাজার টাকা! ওয়ার্ধার তালুকায় গ্রামে গ্রামে প্রায় সব বাড়িতে একজন করে কৃষক আত্মহত্যার ঘটনা আছে। প্রবীণ তালপাড়ে চোখ মুছে বললেন, ‘আমার ছেলে নাগপুরে দোকানে কাজ পেয়েও যায় না। কেন বলুন তো? ও রাতে আমাকে পাহারা দেয়! যদি আত্মহত্যা করি! না থাকলে কে পাহারা দেবে? তাই...।’ গোপালের ব্যাগে একটা চিঠি পাওয়া যায়। সেখানে সে লিখেছে, ‘তোমরা কিন্তু আন্দোলন বন্ধ করবে না। আমাদের জিততেই হবে। আমি দুর্বল। তাই আর লড়াই করতে পারলাম না। কিন্তু এই আমার প্রতিবাদ। নিজের জীবন দেওয়া।’ তালপাড়ে শূন্য দৃষ্টিতে বললেন, গোপালের লড়াই এই ভারতে জেতা যায় না! আমরাও পারব না হয়তো। মোরশি, চান্দুর বাজার, নাড়খেড়, তাকারগোড়া...৬৮ গ্রামের কৃষকদের হাহাকার থেকে অনেক দূরে লোকসভা ভোট! ক্ষোভে ফুঁসছে কৃষক ভোটব্যাঙ্ক। ও হ্যাঁ, বলা হল না। পালি ভাষায় অমরাবতী শব্দের অর্থ মৃত্যুহীনের আশ্রয়।আজকের অমরাবতী অবশ্য অমৃতকালে মৃত্যু রাজধানী!