গুরুজনের স্বাস্থ্য নিয়ে চিন্তা ও মানসিক উদ্বেগ। কাজকর্মে বড় কোনও পরিবর্তন নেই। বয়স্কদের স্বাস্থ্য সমস্যা ... বিশদ
অযোধ্যা নগরী বহুবার ভেঙেছে। বহুবার গড়েছে। রামমন্দির নির্মাণের পর স্থানীয় মানুষের তো অনেক লাভ হয়েছে নিশ্চয়ই। আনন্দমোহন মৌর্যর কথাতে কিন্তু তার সমর্থন মিলল না। হনুমানগড়ি মন্দিরে ঢোকার সামনের প্রধান রাস্তায় যাঁর দোকান। মৌর্য পদবী হলেও আসলে বাঙালি। পুরুলিয়া থেকে ভাগ্যান্বেষণে এসেছিলেন আনন্দমোহনের বাবা অন্তত ৫০ বছর আগে। অযোধ্যায় বাবরি মসজিদের পাশেই দোকান দিলেন। ১৯৯২ সালে একবার দোকান ভাঙল। উঠিয়ে দেওয়া হল সবাইকে। আবার রামমন্দির নির্মাণের সময় দোকানের অর্ধেক কেড়ে নেওয়া হল রাস্তা চওড়া করার জন্য। আনন্দমোহন জানালেন, কত টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে জানেন আমাদের? ১ থেকে দেড় লক্ষ টাকা। বহু দোকানদারকে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে টেহরি বাজার আর স্টেশন রোডে। আজব কথা শুনুন। যাদের দোকান এখান থেকে উৎখাত হয়েছে। ক্ষতিপূরণ হিসেবে তাদের ওইসব জায়গায় দোকান দেওয়ার কথা। অথচ দোকান নিতে হলেও ১৫ লক্ষ টাকা চাওয়া হচ্ছে! অযোধ্যায় চলছে রীতিমতো আর্থিক উৎসব। এবং ভাঙনপর্ব। এবার পাড়ায় পাড়ায় গলির রাস্তাও চওড়া করা হবে। অতএব এবার ভাঙা পড়বে ঘর।
ফৈজাবাদ আদালতের আইনজীবী একনাথ চৌধুরী বললেন, খারাপ লাগাটা কোথায় জানেন? যতদিন রামমন্দির হয়নি, ততদিন অযোধ্যার দিকে কোনও নজর ছিল না। যেন মন্দির হওয়া না হওয়া উপরই আমাদের অতীত বর্তমান ভবিষ্যৎ নির্ভর থাকা উচিত। এই যে এখন দিকে দিকে এত জমি অধিগ্রহণ হচ্ছে, হোটেল,মার্কেট কমপ্লেক্স হবে, কই এইসব জমিতে এত বছর ধরে কারখানা হল না কেন? কলেজ হল না কেন? অযোধ্যার মন্দির-মসজিদ সমস্যা মেটায় আমরা খুশি। । কিন্তু চারদিকে দেখতে পাই বহিরাগত ব্যবসায়ীদের দখলদারি। আমাদের সবাই তো আর ব্যবসায়ী নয় যে, মন্দিরকে কেন্দ্র করে তৈরি অর্থনীতি ঘিরে আমাদের সকলের চলবে? চাকরি কোথায়? চাকরি চাই নতুন প্রজন্মের ছেলেময়েদের। এখানে কিছুই নেই। কিছুই ছিল না। মন্দির হয়ে গেল। এবার চাকরি হোক! চাকচিক্য বাড়ুক। রোজগারও বাড়ুক।
বিজেপি প্রার্থী লাল্লু সিংয়ের টেনশন নেই। মন্দির আবেগেই জয় নিশ্চিত হওয়া উচিত। ফৈজাবাদ লোকসভা আসনে তাঁর লড়াই সমাজবাদী পার্টির অবধেশ প্রসাদের সঙ্গে। তখন বিকেল। করসেবকপুরম যাওয়ার রাস্তায় বিজেপি কার্যালয়ে সুধীন্দ্র পান্ডে বললেন, ভোটে রামমন্দির ইস্যু নয় এমনটা নির্বোধরাই বলতে পারেন। কয়েক কোটি দর্শন হয়ে গিয়েছে। যাঁরা আসছেন তাঁরাই মনে মনে মোদিজীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছেন। কৃতজ্ঞতা মানে জানেন তো? তাদের ভোট কে পাবে?
সরযু ঘাটে নয়না দেবী বললেন আশ্চর্য কথা। অযোধ্যায় জন্মালে, অযোধ্যায় থাকলে কারও সুখ আসবে না পুরোপুরি। এ আমার অভিজ্ঞতা। কেন? হয়ত সীতামাঈয়াকে এই শহর অপমান করেছিল, সন্দেহ করেছিল। সেই পাপে!
মন্দির হল। গোটা নগরী ঢেলে সাজছে। অত্যাধুনিক এক শহরে পরিণত হচ্ছে। অথচ সত্যিই ভোট নিয়ে উদ্দীপনার চিহ্নমাত্র নেই অযোধ্যায়। সুখ নেই?