পারিবারিক ঝামেলার সন্তোষজনক নিষ্পত্তি। প্রেম-প্রণয়ে শুভ। অতিরিক্ত উচ্চাভিলাষে মানসিক চাপ বৃদ্ধি। প্রতিকার: আজ দই খেয়ে ... বিশদ
কোলাঘাট, ডায়মন্ডহারবার, দিঘা, রায়দিঘির পর এবার ফরাক্কা। ইলিশের সঙ্গে সমার্থক হতে চলেছে পশ্চিমবঙ্গের এই নতুন এলাকা। বছর তিনেক আগের কথা। ২০১৬ সালের জুন মাস। মায়ানমার থেকে সাঁতরে আসা ৪ কেজি ওজনের ইলিশ হাওড়ায় বিক্রি হয়েছিল ২২ হাজার টাকায়। গঙ্গায় সাধারণত এত বড় ইলিশ এখন আর ধরা পড়ে না। মায়ানমার থেকে ভেসে আসা সেই ইলিশ জালে বেধে যাওয়ায় তাজ্জব বনে গিয়েছিলেন মৎস্যজীবীরা। অথচ, সত্তরের দশকে ফারাক্কা বাঁধ তৈরির আগে বাংলাদেশ থেকে এলাহাবাদ পর্যন্ত অবাধ বিচরণ ছিল ইলিশের। ভরা মরশুমে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ঢুকত মাঝ গঙ্গায়ও। ফারাক্কা বাঁধ তৈরির পর থেকে ইলিশের সেই চলাচলের পথ পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে গবেষণা চালিয়েছে সেন্ট্রাল ইনল্যান্ড ফিশারিজ রিসার্চ ইনস্টিটিউ (সিআইএফআরআই)। গবেষণার রিপোর্ট বলছে, সমুদ্র থেকে ভাগীরথীতে ঢুকে ফারাক্কা ব্যারেজ টপকে গঙ্গার উজানে ইলিশ আর ঢুকতে পারে না। যেটুকু বিক্ষিপ্ত ভাবে পাওয়া যায়, তা পদ্মার ইলিশ। অথচ, ফারাক্কা ব্যারেজ চালু হওয়ার আগে পর্যন্ত এলাহাবাদের কাছে এক মরশুমে গঙ্গায় ৪৮ টন পর্যন্ত ইলিশ ধরা পড়েছিল। ২০০৮ সালে সেটাই দাঁড়ায় ০.৪ টনে। এখন তো আরও কম। কেন? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে খুঁজতে গবেষকরা তৈরি করে ফেলেছেন বিশেষ ইলিশ করিডর। প্রজনন মরশুমে ইলিশের স্বাভাবিক চলাচল নিশ্চিত রাখতে ফারাক্কা বাঁধের নেভিগেশন লকটির নকশায় পরিবর্তন আনা হয়েছে। মৎস গবেষকরা যে বিশেষ ইলিশ করিডর তৈরি করেছে, তা আগামী জুন মাস নাগাদ চালু হওয়ার কথা। আর তা চালু হলে প্রায় ৪০ বছর পর আসন্ন বর্ষার মরশুমে ফের এলাহাবাদের গঙ্গায় দেখা মিলতে পারে ইলিশ মাছের।
এই প্রকল্প তৈরিতে ৩৬১ কোটি টাকা খরচ করেছে কেন্দ্র। বর্ষাসহ ইলিশের প্রজননের তিন মরশুমে যাতে ইলিশের ঝাঁক ভারতে ঢুকতে পারে, সেই লক্ষ্যে বিশেষ লক সিস্টেম তৈরি করা হয়েছে। নেভিগেশন লক সিস্টেম হচ্ছে একটি যন্ত্র, যা জলে জাহাজ বা নৌকার প্রসারণে ব্যবহৃত হয়। ইনল্যান্ড ওয়াটারওয়ে অথরিটি অব ইন্ডিয়ার ভাইস চেয়ারম্যান প্রবীর পান্ডে জানিয়েছেন, ‘রাত ১টা থেকে ভোর পাঁচটার মধ্যে আমরা ৮ মিটার পর্যন্ত গেট খুলে দেব। এই সময়েই ইলিশ যাতায়াত করে।’ এই প্রকল্পের মূল লক্ষ্যই হল, গঙ্গার উজানে অর্থাৎ ফারাক্কায় গঙ্গার মূল চ্যানেলে ইলিশ যেখানে ডিম পাড়ে, সেই সব জায়গাকে সংরক্ষণ করা। সেই লক্ষ্যে প্রথমেই নিয়ন্ত্রণ করা হবে মৎস্য শিকারীদের। যাতে খোকা ইলিশ না ধরা হয়। এই ভাবে ফারাক্কায় এক কেজির বেশি ওজনের ও সুস্বাদু ইলিশ ভালো সংখ্যায় মিলবে বলে আশা করা হচ্ছে। যা এখন বিলুপ্তপ্রায়। এবং বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, উজানের ইলিশই স্বাদে সেরা। নৌপরিবহন মন্ত্রকের মতে, খাবার খুঁজতে আর ডিম ছাড়ার সময়ে প্রায়ই মাছেরা বিশাল এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। ইলিশের চলাচল নিশ্চিত হলে এই অঞ্চলে মাছটির উৎপাদন বাড়বে। এছাড়া এর ফলে নদীর জীববৈচিত্র্য বাড়ার পাশাপাশি স্থানীয় জেলেদের অর্থনীতিও শক্তিশালী হবে।
ফি-বছর বর্ষা পড়তেই ইলিশ মোচ্ছব শুরু হয় শহরজুড়ে। মাছের রাজা নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষায় কে কত এগিয়ে, তা নিয়েই জোর যুদ্ধ। আহারের অধীর অপেক্ষায় বাহারে ইলিশ। কলা পাতায় মোড়া ডালায় থরে থরে সাজানো নানা সাইজের ইলিশ। ঘন সবুজের উপরে ঝকঝকে রুপোলির ওই সাজ অনেকটা দূর থেকেও মানুষের চোখ টানতে বাধ্য। টানেও! এবার আম-আদমির হাতের মুঠোয় আসতে চলেছে সেই ইলিশ। এই বর্ষায় ইলশেগুঁড়ি মাথায় করে, ছাতা মাথায় শুধু বেরিয়ে পড়লেই হল, দাবি সেন্ট্রাল ইনল্যান্ড ফিশারিজ রিসার্চ ইনস্টিটিউটের গবেষকদের।