গৃহে বা বাইরে পড়ে গিয়ে দেহে আঘাত বা অস্থিভঙ্গ হতে পারে। কাজকর্মে মনোযোগের অভাব। ... বিশদ
হাওড়ার বেলগাছিয়া এল রোডের বাসিন্দা সোমনাথ চক্রবর্তী। তাঁর মা কল্যাণী চক্রবর্তী সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য। দাদা সুদীপ চক্রবর্তী ডিওয়াইএফআই’য়ের সদস্য। ২০১৩ সালে নরসিংহ দত্ত কলেজে কমার্স নিয়ে প্রথম বর্ষে পড়তেন। এছাড়া একমাত্র ধ্যানজ্ঞান ছিল ফুটবল। হাওড়া টাউন ক্লাবে স্ট্রাইকার হিসেবে খেলতেন। ভালো খেলার সুবাদে বহু মানুষের নজর ছিল তাঁর উপর। তবে আচমকা ছন্দপতন জীবনে।
আট এপ্রিল দিল্লিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অর্থমন্ত্রীর উপর হামলার অভিযোগ ওঠে এসএফআইয়ের বিরুদ্ধে। উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে এই রাজ্যেও। ১০ এপ্রিল বিক্ষোভ কর্মসূচি ছিল তৃণমূলের। ওই দিন বিকেলে বিক্ষোভ মিছিল থেকে ফেরা তৃণমূল কর্মীদের সঙ্গে বাড়ির সামনে বচসা বাধে সোমনাথের দাদার। কথা কাটাকাটি হাতাহাতিতে গড়ায়। দাদাকে বাঁচাতে ছুটে গিয়েছিলেন ভাই। তারপর হাতাহাতি বড় আকার নেয়। মৃত্যু হয় তৃণমূল কর্মী বাবন দাসের। খুনের অভিযোগে নাম জড়ায় সোমনাথ, তাঁর দাদা সহ আরও চার জনের। ২০১৭ সালে একমাত্র দোষী সাব্যস্ত হন সোমনাথ। তাঁর যাবজ্জীবন সাজা হয়।
এরপর ঠাঁই সংশোধনাগারে। সেখানেই নিজেকে সংশোধনের জন্য নতুন লড়াই শুরু করেন তিনি। সংশোধনাগারে ছিলেন ফুটবল কোচ মিহির দাস। তাঁর হাত ধরে নতুন করে বাঁচার তাগিদ ফিরে পান সোমনাথ। তারপর নিয়মিত প্রশিক্ষণ। সংশোধনাগারের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় হয়ে ওঠা। এছাড়াও রাজ্যের বিভিন্ন কেন্দ্রীয় জেলে তাঁর ব্যবহার সকলের নজর কাড়ে। ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসে জেল জীবনে যবনিকা পড়ে। মুক্তি পেয়ে এক ডেলিভারি সংস্থার কর্মী হিসেবে কাজ শুরু করলেন। সঙ্গে পাড়ার মাঠে নতুন করে ফুটবল প্রশিক্ষণ।
রবিবার ট্রায়ালের শেষে সোমনাথ বলেন, ‘এক দশক নষ্ট হয়ে গিয়েছে। তবে চূড়ান্ত হতাশার মধ্যেও মিহিরবাবুর মতো মানুষকে পেয়েছি। ওঁর সহযোগিতায় ট্রায়ালও দিয়েছি। ওঁরা প্র্যাকটিসে আসতে বলেছেন। বড় মাঠে খেলাই আমার জীবনের লক্ষ্য।’ আর প্রিয় ছাত্রটিকে নিয়ে প্রশিক্ষক মিহিরবাবু বলেন, ‘সংশোধনাগারে থেকেও নিজের স্বপ্নের অপমৃত্যু ঘটায়নি সোমনাথ। ওর সাফল্য কামনা করি।’ আর ওয়ারি ক্লাবের ফুটবল সম্পাদক ইন্দ্রনাথ পাল বলেন, ‘জেদ ধরে রাখতে পারলে ও অনেকটা পথ এগবে।’