সম্পাদকীয়

মুম্বই কাণ্ডে সচেতন বাংলা

নির্মীয়মাণ বহুতল ভবন ও ব্রিজ এবং পুরনো বিপজ্জনক বাড়ি ভেঙে পড়ার সাক্ষী বহু শহর। তাতে হতাহতও হন বহু মানুষ। মুম্বই দেখিয়ে দিল আপাত নিরীহ বিলবোর্ড বা হোর্ডিং যে বিপদ ডেকে আনতে পারে তার চেহারা সেসবের চেয়ে কোনও অংশে ছোট নয়! মুম্বইয়ের ঘাটকোপারে বেআইনি বিলবোর্ড বিপর্যয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ছুঁয়েছে ১৬। ওই ঘটনায় জখম হয়েছেন ৮০ জনের মতো। সোমবার ধূলিঝড়ে ভেঙে পড়ে বিশাল বিলবোর্ডটি। বিএমসির হিসেব অনুযায়ী, তাদের আওতাভুক্ত এলাকায় ১০২৫টি অনুমোদিত হোর্ডিং থাকার কথা। কিন্তু দেশের বাণিজ্যিক রাজধানীতে বাস্তবে রয়েছে তার চেয়ে অনেক বেশি সংখ্যায়! বহুক্ষেত্রে নির্ধারিত মাপের চেয়ে বড় হোর্ডিংও লাগানো হয়েছে। আরবসাগর তীরবর্তী এই শহরে আবহাওয়ার কারণে এই ধরনের হোর্ডিং বা বিলবোর্ড ভেঙে পড়ার আশঙ্কা অন্য যেকোনও মহানগরের তুলনায় বেশি। এমন বিপদ কতখানি মারাত্মক হতে পারে তা দেখিয়ে দিল এবারের ঘটনাটি। তাই ঘাটকোপারের ঘটনা থেকে শুধু মুম্বই বা মহারাষ্ট্র নয়, শিক্ষা নিতে হবে সারা দেশকেই। তার মধ্যে সবার আগে রাখতে হবে দিল্লি, কলকাতা, চেন্নাই, বেঙ্গালুরু, হায়দরাবাদ প্রভৃতি মহানগরকেও। কারণ ওই সদাব্যস্ত শহরগুলিতে দিনভর লক্ষ লক্ষ মানুষের চলাফেরা। 
ঘাটকোপারে বিলবোর্ডটি ভেঙে পড়ে একটি পেট্রল পাম্পের উপর। বহু মানুষ ওই দৈত্যাকার বস্তুটির নীচে চাপা পড়ে যান। এনডিআরএফের এক কর্তা জানান, বিপর্যয় পেট্রল পাম্পের মধ্যে হওয়ায় উদ্ধার কাজে সমস্যা হয়েছে বহুগুণ। ১০০ ফুট লম্বা লোহার কাঠামোর উপরে ১২০×১২০ ফুটের ওই বিলবোর্ডটি ছিল। বিশালত্বের নিরিখে সেটির স্থান হয়েছিল লিমকা বুক অব রেকর্ডসে। কিন্তু এমন একটি বিলবোর্ড বসানো হয়েছিল বৃহন্মুম্বই পুর কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই। যেকোনও বিপর্যের পর দায় স্বীকারের সংস্কৃতি এদেশে বিরল। এক্ষেত্রেও যথারীতি চলেছে দায় এড়াবারই প্রতিযোগিতা—সিন্ধে সরকার বনাম পূর্বতন থ্যাকারে সরকার। কিন্তু তাতে কারও ক্ষতে কোনও প্রলেপ পড়বে না। তবে এই কাদা ছোড়াছুড়ি থেকে এটাই সামনে এসেছে যে, মাত্র ৪০ ফুটের ছাড়পত্র নিয়ে বানানো হয়েছিল রেকর্ড আকৃতির বিলবোর্ড! এছাড়া যে অনুমতি বিএমসি থেকে নেওয়ার কথা সেটি নেওয়া হয়েছিল এক পুলিসকর্তার কাছ থেকে! আরও ভয়ংকর দুঃসংবাদ এই যে, এমন বিপদের উপাদান মুম্বই বা মহারাষ্ট্রে এটিই একমাত্র ছিল না, রক্তচক্ষু বার করে এখনও আছে আরও শ’চারেক! ঘাটকোপারে বিলবোর্ড তৈরির সময়ই আপত্তি উঠেছিল। নির্মাণ শেষেও প্রতিবাদ ধ্বনিত হয়েছিল বিধানসভায়। কিন্তু সরকার সে-সময় পাত্তা দেয়নি। তাই এই ঘট‍নার দায় ডাবল ইঞ্জিন রাজ্য সরকার, পুরসভা, পুলিস, এমনকী সাধারণ পুরসভাও কোনোমতে এড়াতে পারে না। 
সোমবারই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে মুখ্যমন্ত্রী একনাথ সিন্ধে শহরের সমস্ত হোর্ডিংয়ের স্ট্রাকচারাল অডিটের নির্দেশ দিয়েছেন। অন্যদিকে, সমস্ত বেআইনি হোর্ডিংয়ের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএমসি। তবে, মানুষের স্মৃতি সতত দুর্বল। রাজনীতির দুষ্ট মাথারা এই সুযোগটাই নেন। তাই নাগরিক সমাজকেই সতর্ক থাকতে হবে। তাদের দেখতে হবে—যাদের দুর্নীতি, অপদার্থতা, চূড়ান্ত গাফিলতি এবং  নোংরা রাজনীতির কারণে এতজন নিরপরাধ মানুষ হতাহত হলেন, তারা যেন কোনোভাবেই ছাড়া না পায়। কলকাতার জন্য সুখবর হল, মুম্বইয়ে বিপর্যয়ের প্রেক্ষিতে এখানকার পুরসভাও নড়েচড়ে বসেছে। এমন দুর্ঘটনা এড়াতে বিজ্ঞাপন এজেন্সিগুলিকে সতর্ক করে ই-মেল পাঠিয়েছে কলকাতা পুরসভা। তাতে বলা হয়েছে, প্রতিটি হোর্ডিংয়ের কাঠামোর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে হবে। এই কাজ দ্রুত সেরে শংসাপত্র জমা দিতে হবে পুরসভায়। ছোট-বড় মিলিয়ে এই শহরে এমন হোর্ডিংয়ের সংখ্যা সাড়ে তিন হাজারের মতো। সেগুলির কাঠামো লোহার। বিশেষ করে রাস্তার ধারে বা শহরের বিভিন্ন বহুতল এবং আবাসনের গায়ে এমন হোর্ডিংগুলি রয়েছে। সেগুলির কোনটির অবস্থা এখন কেমন, তার রিপোর্ট পুরসভার হাতে নেই। ফলে ঝড়বৃষ্টির সময় সেগুলি ভেঙে পড়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দিতে পারছেন না পুরকর্তারা। তাই, প্রায় ৭০টি অ্যাড এজেন্সিকে ই-মেল করছে পুর কর্তৃপক্ষ। হোর্ডিংয়ের দায়িত্ব নেওয়ার সময়ই তার ‘স্টেবিলিটি’ সার্টিফিকেট পুরসভায় জমা করে সংশ্লিষ্ট সংস্থা। আরও জমা দিতে হয় ‘উইন্ড প্রেশার স্টেবিলিটি’ সার্টিফিকেট। তবে, তা একবারই। বিজ্ঞাপনী হোর্ডিং নিয়ে সংস্থাগুলির সঙ্গে পুরসভার চুক্তি প্রতিবছর রিনিউ হলেও তখন আর স্বাস্থ্য পরীক্ষার শংসাপত্র নেওয়া হয় না। মুম্বই কাণ্ডের প্রেক্ষিতে এবার বিশেষভাবে সতর্ক হল কলকাতা পুর কর্পোরেশন। তারা নয়া বিজ্ঞাপন নীতিও গ্রহণ করেছে। সেই অনুসারে তাদের সিদ্ধান্ত, আগামী দিনে চুক্তি রিনিউয়ের সময়েও ‘স্টেবিলিটি’ এবং ‘উইন্ড প্রেশার স্টেবিলিটি’ সার্টিফিকেট পেশ বাধ্যতামূলক করা হবে। কলকাতা তথা বাংলার এই উদ্যোগ প্রশংসনীয়। সারা দেশের উচিত, এইমতোই সতর্ক হওয়া।
4Months ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

কাজকর্মে পরিশ্রম ও ব্যস্ততা বৃদ্ধি। ছোট ও মাঝারি ব্যবসায় অগ্রগতি। অর্থাগম যোগটি অনুকূল।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৩.১৩ টাকা৮৪.৮৭ টাকা
পাউন্ড১০৮.৫০ টাকা১১২.০৬ টাকা
ইউরো৯১.০৪ টাকা৯৪.২২ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
5th     October,   2024
দিন পঞ্জিকা