সম্পাদকীয়

ডাবল যন্ত্রণার বন্দোবস্ত

আকাশবাণী ও দূরদর্শন মারফত নরেন্দ্র মোদির ‘মন কি বাত’-এর শতাধিক পর্ব ইতিমধ্যেই শুনে ফেলেছেন দেশবাসী। কিন্তু সেসবের একটা থেকেও কি তাঁর মনের কথা শুনতে পেয়েছে মানুষ? জনগণের এক দশকের অভিজ্ঞতা বরং এটাই নয় কি, মোদিজির মন আর মুখ আলাদা? তাঁর মন যা বলে সেটা তিনি মুখে প্রকাশ করেন না এবং তাঁর শ্রীমুখ থেকে যা নিঃসৃত হয় অবিরত তার উৎস তাঁর অন্তরের অন্তর্দেশ নয়। তবে বহুদিন বাদে যেন নরেন্দ্র মোদির মন ও মুখ সংগত করল একে অন্যের—শোনা গেল প্রধানমন্ত্রীর প্রথম যথার্থ ‘মন কি বাত’! তিনি খোলাখুলি কবুল করেছেন, তাঁর সরকার মধ্যবিত্ত শ্রেণিকে সহায়তা দেবে না। তাঁর দাবি, এই শ্রেণিটা নিজেদের ভালোমন্দ নিজেরাই বুঝে নিতে সমর্থ। তাঁর ঘোষণা, ‘মিনিমাম গভর্নমেন্ট ম্যাক্সিমাম গভর্ন্যান্স’-এর খেলা পরবর্তী পাঁচবছরে (তিনি ধরেই নিচ্ছেন বিপুল গরিষ্ঠতা নিয়ে ফিরছেন যথাসময়ে) আরও দেখাবেন তিনি। তাঁর নেতৃত্ব এমন ব্যবস্থা করবে যে দেশবাসীর জীবনে সরকারের ভূমিকা আরও কমে যাবে। এক্ষেত্রে তাঁর মূল লক্ষ্য মধ্যবিত্ত শ্রেণি, যারা যেকোনও সমাজ ও দেশের মেরুদণ্ড হিসেবে মান্যতা পেয়ে থাকে। 
ভারতীয় সমাজের মেরুদণ্ড ভেঙে দেওয়ার গেরুয়া সাধনা যে আগেই শুরু হয়ে গিয়েছে, তা দেশের প্রবীণ নাগরিকদের করুণ মুখের দিকে তাকালেই স্পষ্ট হয়। পেনশনের আওতার বাইরে বেশিরভাগ প্রবীণ মানুষ। তাঁদের জন্য সামাজিক সুরক্ষার যেসব গালভরা কাহিনি রঙিন বিজ্ঞাপনে ভরপুর, তার সঙ্গে বাস্তবের কোনও সম্পর্ক নেই। পিএফ, পিপিএফ এবং অন্যান্য স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পগুলিতে সুদের হার যৎসামান্য। তার উপর আছে টিডিএস কেটে নেওয়ার ধারালো কাঁচির আক্রমণ। সরকার তার প্রাপ্য সুদেমূলে উশুল করে নেওয়ার পর প্রবীণ মানুষের হাতে মাস গেলে রোজগারের অর্থ পড়ে থাকে প্রায় ছোবড়া! বেসরকারি কোম্পানি এবং সরকার অধিগৃহীত একাধিক সংস্থার বহু লক্ষ কর্মী ইপিএফের আওতায় রয়েছেন। সংখ্যাটা নয় নয় করেও সাড়ে ৬ কোটি। কর্মী এবং নিয়োগ কর্তা—উভয়ের কিছু কন্ট্রিবিউশন সেখানে নিয়মিত জমা হওয়ার কথা। কিন্তু কার চাকরি কতদিন আছে সবাই জানেন না। সরাসরি সরকারি দপ্তরের বাইরে চাকরির হাল এমনই। পরিস্থিতির ক্রমাবনতিই লক্ষণীয়। যাই হোক, এই ব্যবস্থায় ইপিএস-৯৫ সূত্রে অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিক বা কর্মচারীদের মাসান্তে কিছু পেনশন প্রাপ্য হয়। কিন্তু এই পেনশনের কথা যত কম বলা যায় তত ভালো, কারণ এর চেয়ে নির্মম রসিকতা, হলফ করে বলা যায়, ভূভারতে নেই! 
প্রবীণ মানুষগুলি অনেক লড়াই সংগ্রাম করার পর দিল্লির বাবুদের নাকি ভয়ানক দয়া হয়েছে—তাঁরা ন্যূনতম পেনশনের অঙ্ক বাড়িয়ে হাজার টাকা করেছেন। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে—বহু হতভাগ্য বৃদ্ধ-বৃদ্ধা তাও পান না, শতেক শর্তের জাঁতাকলে পড়ে আছেন তাঁরা, তাঁদের হাতে ধরানো হয় মাসে পাঁচ-ছ’শো টাকা মাত্র! কিন্তু অগ্নিমূল্যের বাজারে এই টাকায় তো কোনও দম্পতির পক্ষে একটা দিনও পার করা সম্ভব নয়! ইপিএস-৯৫-এর আওতায় মার খাচ্ছেন ৭৫ লক্ষ প্রবীণ দম্পতি। মাসে ন্যূনতম সাড়ে ৭ হাজার টাকা পেনশন এবং বিনামূল্যে উপযুক্ত চিকিৎসা পরিষেবার দাবিতে দীর্ঘদিন যাবৎ আন্দোলন করছে ন্যাশনাল অ্যাজিটেশন কমিটি। শীর্ষ আদালতও প্রবীণ নাগরিকদের দাবির পক্ষে রায় দিয়েছে। ফলে নড়েচড়ে বসেছে সরকার। সেখানেও নিয়েছে তারা অন্যায় কৌশল। উচ্চ হারে পেনশনের শর্তে এককালীন মোটা অর্থ জমা করার নিদান দেওয়া হয়েছে। দিল্লির ফর্মুলা মেনে লক্ষাধিক প্রবীণ শ্রমিক কর্মচারী সেই টাকা ইপিএফও’তে জমাও করেছেন। কিন্তু অদ্যাবধি সেই ‘মেওয়া’র দেখা নেই! ইতিমধ্যেই সীমাহীন বঞ্চনা সঙ্গী করে দুনিয়া থেকেই বিদায় নিয়েছেন বহু বৃদ্ধ-বৃদ্ধা। আবেদনকারীদের অভিযোগ, বর্ধিত অঙ্কের পেনশন কবে পাবেন তাঁরা, কিংবা সেই টাকা আদৌ মিলবে কি না ইপিএফও খোলসা করছে না। যদি নয়া হারে পেনশন শেষমেশ না-মেলে জমাকৃত অর্থ উপযুক্ত সুদসহ ফেরাবে তো ইপিএফও? উত্তর অজানা এই জরুরি প্রশ্নেরও। সব মিলিয়ে ‘ডাবল যন্ত্রণা’য় ফেলেছে মোদি সরকার। সত্যিই প্রধানমন্ত্রী এতদিনে ঠিক কথাই কবুল করেছেন, মধ্যবিত্তদের পাশে তাঁর সরকার থাকবে না। যেটা মুখে বলতে শরম বোধ করেছেন তিনি, তা হল মধ্যবিত্ত জনগণকে একতরফা দুয়েই নেবেন আর বিনিময়ে ফেরাবেন দ্বিগুণ যন্ত্রণা! 
6Months ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

ব্যবসায়িক কেনাবেচা ক্রমশ বাড়ায় লাভ বৃদ্ধি। সন্তানের দাম্পত্য জীবনের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তা।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৩.১৩ টাকা৮৪.৮৭ টাকা
পাউন্ড১০৮.৩২ টাকা১১১.৮৭ টাকা
ইউরো৯১.২৫ টাকা৯৪.৪৩ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
5th     September,   2024
দিন পঞ্জিকা