সম্পাদকীয়

অমৃতকালের সর্বোত্তম উপহার

সংসদীয় গণতন্ত্রে সরকার জনগণের কাছেই দায়বদ্ধ। সরকারের নানা সময়ের পদক্ষেপগুলি কতটা সংবিধান মেনে নেওয়া এবং তাতে জনগণের ও দেশের স্বার্থ কতটা পূরণ হচ্ছে, কিংবা সরকারি পদক্ষেপে দেশ ও দেশবাসীর কতটা ক্ষতি হচ্ছে—তার জবাব জনগণ নেবে। তবে এমন জবাব দেশের প্রতিটি নাগরিকের কাছে হাজির হয়ে দিতে হবে না সরকারকে। সাংসদরা হলেন জনগণের প্রতিনিধি। তাঁদের সমবেত আলোচনা, সুস্থ বিতর্ক এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের জায়গার নাম পার্লামেন্ট বা সংসদ। গণতন্ত্রের সর্বোচ্চ মন্দিরে উপস্থিত হয়ে জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে সরকার বাধ্য। বিভাগীয় মন্ত্রী এবং রাষ্ট্রমন্ত্রীদের মাধ্যমে জবাব পেশ করাই যথেষ্ট নয়, জাতীয় স্বার্থে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলির জবাব সরাসরি প্রধানমন্ত্রীরই দেওয়া কর্তব্য। প্রয়োজনে তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী, প্রতিরক্ষা মন্ত্রী এবং অর্থমন্ত্রীকে পাশে নিতে পারেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী একেবারে পাশ কাটিয়ে যেতে পারেন না। এখানেই দুর্ভাগ্য আজ দেশবাসীর। নরেন্দ্র মোদি এই নিয়ম, প্রথা উল্টে দিয়েছেন। সরকারের ব্যর্থতা এবং রাষ্ট্রযন্ত্রের নিপীড়ন সংক্রান্ত অভিযোগ বারবার ওঠে। কিন্তু দশ বছরেও কোনও প্রশ্নের জবাব তাঁর কাছ থেকে সংসদের কোনও কক্ষই আদায় করতে পারেনি। তবে কি প্রধানমন্ত্রী সংসদে একেবারেই গরহাজির? না, তিনিও ‘আবির্ভূত’ হন। কখন? যখন তাঁর পূর্বসূরিদের কৃতিত্ব, অবদান প্রভৃতি নস্যাৎ করে দেওয়া তাঁর কাছে জরুরি মনে হয়। আর কখন? যখন আত্মরক্ষার একমাত্র কৌশল অবশিষ্ট দেখেন—বিরোধীদের দুরমুশ কিংবা তাচ্ছিল্য ও হেয় করা। 
এত কাণ্ড করেও নরেন্দ্র মোদি ও তাঁর দল সংসদে বারবার পার পেয়ে যান কী করে? কোনও সন্দেহ নেই, নিরঙ্কুশ গরিষ্ঠতার জোরে। সরকার বাহাদুরের ব্যর্থতা, স্বৈরাচারের জবাব দেওয়ার আর কোনও জায়গা কি নেই গণতান্ত্রিক মানুষের? নিশ্চয় আছে, আরও একটি জায়গা। তার নাম সাধারণ নির্বাচন। বহু দলীয় গণতন্ত্রে সব দলকেই নিজ নিজ বক্তব্য নিয়ে জনগণের সামনে হাজির হতে হয়। বিরোধীরা সরকারের ব্যর্থতা এবং তাদের দল বা জোটের পরিকল্পনার কথা তুলে ধরে। অন্যদিকে, শাসক দলকে তৈরি থাকতে হয় জনগণের প্রশ্নমালা মোকাবিলা করার জন্য। সেখানে মুখ্য হয়ে ওঠে মূলত—সরকারের একের পর এক ব্যর্থতা, কথার খেলাপ এবং স্বৈরাচারের বিষয়গুলিই। দলের নানা স্তরের নেতা ও মন্ত্রীরা অবশ্যই তাঁদের মতো করে জবাব দিতে থাকেন। কিন্তু দেশবাসী সেগুলিকে অতটা গুরুত্ব দেন না। তাঁরা জবাবটা পেতে চান সরাসরি দেশের প্রধানমন্ত্রীর মুখ থেকেই। প্রত্যাশা মনমোহন সিংয়ের মতো প্রধানমন্ত্রীর কাছে কিন্তু অতটা ছিল না। সেখানে বরং ভোটাররা সোনিয়া গান্ধী এবং রাহুল গান্ধীর কথা শুনে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। নরেন্দ্র মোদির বেলা ব্যাপারটা অন্য এই কারণে যে, তিনি একই অঙ্গে সরকার, দল এবং সমগ্র গেরুয়া শিবিরের মুখ। তিন তিনটি প্রতিষ্ঠানের ‘গ্যারান্টার’ তিনি একাই! বস্তুত লোকসভার ৫৪৩টি আসনের গেরুয়া প্রার্থী প্রকারান্তরে একজনই—তাঁর নাম নরেন্দ্র মোদি—তিনি এক ও অদ্বিতীয়! 
অথচ ভোটের ময়দানেও কোনও প্রশ্নের জবাব তাঁর কাছে মিলবে না। সহজ অনুমান, এবারও তিনি একের পর এক জনসভা ও র‍্যালি করবেন এবং ভাষণও দেবেন। কিন্তু জবাব মিলবে কি? এ বড়ই দুরাশা! তবে তিনি যে বিরোধীদের উপেক্ষা ও তাচ্ছিল্যে ভরিয়ে দেবেন, তা তাঁর সাম্প্রতিক রেকর্ডেই পরিষ্কার। আর কি পাওয়া যাবে তাঁর শ্রীমুখ থেকে? তাঁর শতাধিক ‘মন কি বাত’ তিনি পেশ করেছেন ইতিমধ্যেই। এবার তাঁর অলিখিত প্ল্যান—‘অমৃত বাণী’ পরিবেশন, ‘অমৃতকাল’-এর সর্বোত্তম উপহার! সত্যিই তো—গতস্য শোচনা নাস্তি। যে সময় চলে গিয়েছে, সেই সময়ে কী পেয়েছি বা পাইনি, তা নিয়ে আক্ষেপ বা শোক করে কীই-বা পেতে পারি আমরা? অতএব ফেলে আসা পাঁচ-দশ বছরের সুখ-দুঃখের খতিয়ান ভুলেই যেতে বলছেন মোদি। তাঁর মতো ‘মহান’ নেতার লক্ষ্য যে আরও বিরাট—আগামী ২৫ বছর! সোমবার নতুন এক মন্দিরের শিলান্যাস করে গীতার আশ্রয় নেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ, এখন কর্তব্যকাল, ফলের আশা ছেড়ে শুধু কাজ করে যান দেশবাসী। ‘মোদি কি গ্যারান্টি’—আগামী ২৫ বছরে দেশ উন্নতির শিখর ছোঁবে। দেশের উন্নতিতেই তো মোক্ষলাভ দেশবাসীর!
7Months ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

ধর্মকর্মে সক্রিয় অংশগ্রহণে মানসিক তৃপ্তি ও সামাজিক সুনাম। পেশাদার শিল্পীদের শুভ সময়।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৩.১৫ টাকা৮৪.৮৯ টাকা
পাউন্ড১০৮.২৫ টাকা১১১.৮০ টাকা
ইউরো৯০.৭১ টাকা৯৩.৮৮ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
দিন পঞ্জিকা