সম্পাদকীয়

মাস্টারস্ট্রোক

যেন রামধনু ছড়ালেন। রামধনুর সাতটা রং। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের বাজেটেরও কত অভিমুখ। কোনটা ছেড়ে কোনটার কথা বলা যায়। ২০২১-এর রাজ্য বিধানসভা ভোটের আগে তাঁর ঘোষিত সাড়াজাগানো প্রকল্পের নাম ছিল লক্ষ্মীর ভাণ্ডার। মা-বোনেদের হাতে নগদ অর্থ তুলে দেওয়ার এই ধন্বন্তরী প্রকল্পের হাত ধরেই ’২১-এর ভোটে বিরোধীদের চোখে সর্ষে ফুল দেখিয়েছিলেন মমতা। এই প্রকল্পের ‘ম্যাজিক’ বুঝতে পেরে পরবর্তীতে একাধিক রাজ্য নাম পরিবর্তন করে প্রায় একই প্রকল্প চালু করে। মমতা সেই লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের মাসিক অনুদান ৫০০ থেকে বাড়িয়ে ১০০০ টাকা করে দিয়ে বড় চমক দিলেন বাজেটে। একইসঙ্গে তফসিলি জাতি-উপজাতি সম্প্রদায়ের মহিলাদের মাসিক ভাতা করা হয়েছে ১০০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১২০০ টাকা। এই চালু প্রকল্পের অনুদান বাড়িয়েই রাজ্যের তিন কোটির বেশি মহিলার চোখে রামধনুর রং ছড়িয়ে দিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। কেন্দ্রের বঞ্চনা, রাজ্যের আর্থিক প্রতিকূলতার মধ্যেও মূল্যবৃদ্ধির আবর্তে সাধারণের হাতে নগদ জোগানের ব্যবস্থা করে তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন মানুষের রুটি-রুজির ব্যবস্থা করাটাই আসল কাজ। সেটাই রয়েছে তাঁর অগ্রাধিকারে তালিকায়। বাজেটের ঘোষণায় রয়েছে রাজ্যের ১০ লক্ষ যুব ব্যবসায়ী মাত্র ৪ শতাংশ সুদে ১০০ শতাংশ ঋণ পাবেন। রয়েছে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাও। সরকারি ও সরকার নিয়ন্ত্রিত সংস্থায় শূন্যপদে ৫ লক্ষ বেকার কাজ পাবেন এক বছরে। ভাতা বাড়বে সিভিক, ভিলেজ, গ্রিন পুলিসেরও। বাজেটের ছত্রে ছত্রে রয়েছে মানুষের পাশে থাকার বার্তা। ভাতা বাড়ছে মিড ডে মিলের রাঁধুনি ও সহায়িকাদের। রাজ্যের স্বনির্ভর মহিলা চালিত প্রতিটি গোষ্ঠীকে ২৫ হাজার টাকা অনুদান দেওয়া হবে। নিরাশ করা হয়নি পরিযায়ী শ্রমিকদের। জরুরি প্রয়োজন বুঝেই তাঁদের স্বাস্থ্যসাথীর আওতায় আনা হচ্ছে। তরুণদের স্বপ্নপূরণে দ্বাদশের পরিবর্তে একাদশেই স্মার্টফোন কিনতে ১০ হাজার টাকা দেওয়া হবে। বাজেটে চুক্তিভিত্তিক রাজ্য সরকারি গ্রুপ সি ও ডি কর্মীদের বেতনও বাড়ানো হয়েছে। কৃষিতে আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহারের জন্য ফার্ম মেশিনারি হাব তৈরি, আলুচাষিদের শস্যবিমার প্রিমিয়াম মকুব সহ রয়েছে নানা ইতিবাচক পদক্ষেপ। মোদ্দা কথা, এ বাজেট আসলে আম জনতার স্বার্থরক্ষার বাজেট। তাই বিরোধীদের বাদ দিলে সঙ্গতকারণেই আশা করা যায় সবপক্ষকেই এ বাজেট খুশি করবে।
বাস্তবমুখী এই রাজ্য বাজেটে বাংলার অর্থনীতিকে সচল রাখার চেষ্টাও হয়েছে। দেশের মধ্যে নজির তৈরি করে মমতার অর্থমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন, সব জবকার্ড হোল্ডাররা বছরে নিশ্চিত ৫০ দিন কাজ পাবেন। অর্থাৎ গ্রামীণ মানুষের কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে ৫০ দিনের কাজের গ্যারান্টি দিতে ‘কর্মশ্রী’ চালুর কথা ঘোষণা করেছে মমতার সরকার। কেন্দ্রের চোখে চোখ রেখে একটি রাজ্য সরকারের এমন বলিষ্ঠ ঘোষণার নজির বিশেষ নেই। এখানেই থামা নয়। প্রায় দেড় বছর ধরে ১০০ দিনের কাজ করা যেসব শ্রমিকের মজুরির প্রাপ্য টাকা কেন্দ্র আটকে রেখেছে, পূর্ব ঘোষণা মতো তাদের টাকাও মিটিয়ে দেওয়ার জন্য অর্থের সংস্থান করে মমতা সরকার প্রমাণ করেছে, প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ তারা করে না। চমকের এখানেই শেষ নয়। গেরুয়া শিবিরের সঙ্গে নিজেদের ফারাক বুঝিয়ে দিতে কেন্দ্রীয় আবাস যোজনায় দিল্লির টাকা না পেয়েও আটকে থাকা ১১ লক্ষ বাড়ি তৈরির টাকা নিজেরাই মিটিয়ে দেবেন বলে জানানো হয়েছে।  পড়ুয়া থেকে শুরু করে উপকূলবর্তী তিনটি জেলার মৎস্যজীবী, ক্রীড়াক্ষেত্রে পদকজয়ী, কাউকেই নিরাশ করা হয়নি। রয়েছে একগুচ্ছ সুবিধা। পরিকাঠামো ক্ষেত্রেও রয়েছে চমকের পর চমক।
আসলে বাজেট করতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর দর্শন খুব সোজা ও পরিষ্কার। হাজারো আর্থিক প্রতিকূলতা সত্ত্বেও সাধারণ মানুষের হাতে যতটা সম্ভব নগদ অর্থ তুলে দাও। এতে অর্থনীতির চাকাও ঘুরবে। আর মানুষের হাতে অর্থের জোগান থাকলে আকাশছোঁয়া মূল্যবৃদ্ধির মোকাবিলায় সেই অর্থ একদিন-প্রতিদিনের সংসার সামলাতে কাজে দেবে। পাশাপাশি হাতে টাকা থাকলে মানুষ তা খরচও করবে। তাতে বাজারে পণ্যসামগ্রীর চাহিদা তৈরি হবে। সেই চাহিদা পূরণের জন্য উৎপাদন বাড়বে অর্থনীতির সাধারণ নিয়মেই। যে দুটি ক্ষেত্র নিয়ে মমতা সরকারকে সমালোচনা শুনতে হয় বিরোধীদের কাছে, তার একটি হল কর্মসংস্থান, অন্যটি রাজ্যের আর্থিক বৃদ্ধির হার। অথচ কেন্দ্রের পরিসংখ্যানই বলছে, ভারতে জাতীয় বেকারত্ব বেড়েছে ৯.০৫ শতাংশ। সেখানে বাংলায় বেকারত্বের হার জাতীয় হারের থেকে তিন শতাংশ কম। অন্যদিকে, এই বছরে রাজ্যের নিজস্ব আয়ও বেড়েছে প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকা। কেন্দ্রের অসহযোগিতার কথা স্মরণে রেখে মাথা উঁচু করে রাজ্যকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে এই বাজেটে রয়েছে উন্নয়নমুখী নানা পরিকল্পনা। শিল্পের পথ সহজ করার জন্য রয়েছে একাধিক পদক্ষেপ। শিল্পবান্ধব পরিবেশ তৈরির প্রচেষ্টা। তাই শিল্পমহলও খুশি। বলতেই হয়, নিন্দুকেরা ছাড়া মমতা সরকারের এই বাজেটে খুশি হবেন সর্বস্তরের সাধারণ মানুষ।
8Months ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

কাজকর্মে পরিশ্রম ও ব্যস্ততা বৃদ্ধি। ছোট ও মাঝারি ব্যবসায় অগ্রগতি। অর্থাগম যোগটি অনুকূল।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৩.১৩ টাকা৮৪.৮৭ টাকা
পাউন্ড১০৮.৫০ টাকা১১২.০৬ টাকা
ইউরো৯১.০৪ টাকা৯৪.২২ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
5th     October,   2024
দিন পঞ্জিকা