সম্পাদকীয়

ঋণ খেলাপির বাড়বাড়ন্ত

ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়ে কেউ গাড়ি বা জমি কিনেছেন, সময়মতো কিস্তির টাকা শোধ করতে না-পারায় টাকা আদায়ের জন্য সেই ব্যক্তিকে নাস্তানাবুদ করার উদাহরণ অজস্র। একসময়ে তো সেই ব্যক্তির বাড়িতে ‘বাহুবলী’ পাঠিয়ে দিয়েছে ব্যাঙ্ক—এমন উদাহরণও আছে। আবার, কোনও এক প্রান্তিক কৃষক তাঁর কৃষিকাজের জন্য ব্যাঙ্ক থেকে সামান্য টাকা ঋণ করেছিলেন, অভাবের তাড়নায় সেই টাকা সময়ে শোধ করতে না-পেরে ভয়ে, আশঙ্কায় আত্মহত্যা পর্যন্ত করেছেন—এমন উদাহরণও বিরল নয়। অথচ সরকারি তথ্যেই দেখা যাচ্ছে, মোদিবাহিনীর ঘনিষ্ঠ একঝাঁক শিল্পগোষ্ঠী গত কয়েক বছরে বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা ধার নিয়েছেন। সেই টাকার সিংহভাগ শোধ না-হওয়া সত্ত্বেও ঋণ খেলাপিদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেয়নি ব্যাঙ্কগুলি! উল্টে ঋণের টাকা আর ফেরত পাওয়া যাবে না ধরে নিয়েই তা মকুবই করে দিয়েছে! অর্থাৎ মুছেই ফেলা হয়েছে হিসেবের খাতা থেকে। কোনও সভ্যসমাজে এমনটা হতে পারে কি? প্রশ্ন উঠেছে। ঋণের টাকা ফেরত পাওয়া যাবে না জেনেও ব্যাঙ্কগুলি এক্ষেত্রে কোনও চাপের কাছে নতিস্বীকার করে ধার দিয়েছে কি না সেই মারাত্মক ও সঙ্গত প্রশ্নটিও উঠেছে। একথা সবাই জানে, ব্যাঙ্কের নিজস্ব কোনও অর্থ নেই। এই ১৪০ কোটি দেশে বহু মানুষ সঞ্চয়ের উদ্দেশ্যে ব্যাঙ্কে টাকা জমা রাখেন। পাশাপাশি ব্যাঙ্কের মাধ্যমে প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ টাকার লেনদেন হয়। তার মানে, এই টাকা আসলে আম আদমিরই। সেই টাকা কেউ বা কারা আত্মসাৎ করে নেবে এবং সুবোধ বালকের মতো ব্যাঙ্ক ‘অনাদায়ী’-র তকমা দিয়ে তা খাতা থেকে মুছে দেবে—এটা কি অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে না? আসলে এক শ্রেণির অসৎ ব্যবসায়ীকে বাঁচাতে মোদি জমানায় এমন ঘটনার বাড়বাড়ন্ত যেন অতীতের সমস্ত সীমা লঙ্ঘন করেছে। অনেকেরই আশঙ্কা, আসন্ন লোকসভা ভোটে ঋণ খেলাপিদের অনেকের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হয়তো ‘চাঁদা’ হিসাবে আসবে। তারই বিনিময়ে কি এই ‘ছাড়’ দেওয়ার ব্যবস্থা? 
চোখ বোলানো যাক একটি তথ্যে। মোদি জমানায় ২০১৪ সাল থেকে এ পর্যন্ত বিভিন্ন ব্যাঙ্ক তাদের ঋণের খাতা থেকে ১৪ লক্ষ ৫৬ হাজার কোটি টাকার হিসেব মুছে ফেলেছে। এর মধ্যে উদ্ধার হয়েছে মাত্র ২ লক্ষ ৪ হাজার কোটি টাকা। বাকি টাকা আর কোনও দিন ফেরত পাওয়া যাবে না। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, মনমোহন সিংয়ের জমানায় এভাবে মুছে ফেলা (রাইট অফ) অর্থের পরিমাণ ছিল ২ লক্ষ ২০ হাজার কোটি টাকা। এই তথ্য দিয়ে মমতা সরকারের অর্থদপ্তরের প্রধান মুখ্য উপদেষ্টা অমিত মিত্রের দাবি, মোদি জমানায় ইচ্ছাকৃত ঋণ খেলাপের পরিমাণ ৩ লক্ষ ৩৪ হাজার কোটি টাকা। এই তালিকার শীর্ষে থাকা ৫০ জন ঋণ নিয়ে ফেরত দেয়নি ৮৭ হাজার ২৯৫ কোটি টাকা। এই ইচ্ছাকৃত ঋণ খেলাপির হার গত দু’বছরে বেড়েছে সাড়ে ৩৮ শতাংশ। প্রশ্ন হল, ভোটের আগে গরিবের গ্যারান্টার সাজতে যিনি মরিয়া, সেই প্রধানমন্ত্রী মোদির জমানাতেই ঋণ খেলাপির সংখ্যা উত্তরোত্তর বেড়েছে। আর অনাদায়ী ঋণের পরিমাণে বাড়ার কারণে ব্যাঙ্কগুলির আর্থিক হালও সঙ্গীন হয়েছে। মোদি সরকারের কর্পোরেট তোষণ নীতির মাশুল দিতে হচ্ছে আম জনতাকে। ঋণ খেলাপিদের কেউ কেউ দেশ ছেড়ে পালিয়েও গিয়েছে। এদের কেশাগ্র স্পর্শ করেনি কেন্দ্রের সরকার। সাধারণ মানুষের কষ্টার্জিত অর্থ এভাবে লোপাট হয়ে গেলেও কেন্দ্র থেকেছে নীরব দর্শকের ভূমিকায়!
উল্লেখ করার মতো বিষয় হল, এই বিপুল পরিমাণ অর্থ নয়ছয়ের শীর্ষে রয়েছে মেহুল চোকসির সংস্থা। এই কীর্তিমান দীর্ঘদিন বিদেশে। তাঁর সংস্থার কাছে ব্যাঙ্কের প্রাপ্য ৮৭৩৮ কোটি টাকা। তালিকায় আরও অনেকে আছে। মজার বিষয় হল, এই ধরনের ঋণ খেলাপিদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া যায় তার গাইড লাইনও রয়েছে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের। কিন্তু সব কি আদৌ মানা হয় বা হচ্ছে? ফলে ব্যাঙ্ক থেকে কোটি কোটি টাকা ঋণ নিয়ে কিছু মানুষ বা সংস্থা দিব্যি পার পেয়ে যাচ্ছে! কারণ তাদের মাথায় হয়তো ‘রাষ্ট্রগুরুর’ হাত রয়েছে। সঙ্গত কারণেই তাই অমিতবাবু বলেছেন, এত অনুৎপাদক সম্পদ উদ্ধার হওয়ার বদলে উধাও হওয়ায় ব্যাঙ্কের লোকসান হচ্ছে। সেই বোঝা আখেরে বইতে হচ্ছে আম জনতাকে। এর পিছনে কি রয়েছে ত্রুটিপূর্ণ ঋণ দেওয়ার নীতি, নাকি ব্যাঙ্কের উপর চাপ? ২০৪৭ সালে তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি হওয়ার স্বপ্ন যিনি দেখাচ্ছেন তাঁর জমানাতেই ঋণ খেলাপিদের বাড়বাড়ন্ত। ৫ লক্ষ কোটি ডলারের অর্থনীতি হওয়ার স্বপ্নও এখন পিছনের সারিতে। মোদি জমানায় দেশের বাণিজ্য ঘাটতি বিপুলভাবে বেড়েছে, বৈদেশিক ঋণ আকাশ ছুঁয়েছে। এই ত্র্যহস্পর্শে আশঙ্কার ঘনঘটার মধ্যে পরিকল্পিতভাবেই গেরুয়াবাহিনী শোনাচ্ছে ‘উচ্চাশা’র কথা! কারণ ‘অমৃতকাল’ চলছে! অমৃতের ফল ভোগ করছে মুষ্টিমেয় কিছু ঋণ খেলাপি কর্পোরেট। আম জনতার জন্য পড়ে থাকছে গরলটুকুই।
12Months ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

মৃৎশিল্পী, ব্যবসায়ী প্রমুখদের বিশেষ কর্মোন্নতি যোগ প্রবল। পেশাদারি কর্মে শুভ ফল প্রাপ্তি। মানসিক চাঞ্চল্য।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৩.০৯ টাকা৮৪.৮৩ টাকা
পাউন্ড১০৯.৪৭ টাকা১১৩.০৪ টাকা
ইউরো৯১.০৬ টাকা৯৪.২৫ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
দিন পঞ্জিকা