সম্পাদকীয়

সত্যের অপলাপ

লোকসভা ভোটের দিন যত এগিয়ে আসছে, নরেন্দ্র মোদির ‘সাফল্যের’ দাবি তত দীর্ঘ হচ্ছে! ইংরেজিতে একটি কথা আছে, যা বাংলা করলে দাঁড়ায়, আক্রমণই রক্ষণের সেরা অস্ত্র। তাঁর প্রায় দশ বছরের শাসনকালের সবটাই অনেকাংশে ব্যর্থতার ইতিহাস। দেশের গরিব, মধ্যবিত্ত মানুষকে ভালো রাখতে ব্যর্থ হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তাঁর আমলে দেশের অর্থনীতি পিছিয়ে পড়েছে। মাথাপিছু আয় কমেছে। মূল্যবৃদ্ধি, বেকারি অতীতের সব রেকর্ড ভেঙেছে। অন্যদিকে, হিন্দুত্ব, বিভাজন, সাম্প্রদায়িক রাজনীতিকে  দুধ-কলা দিয়ে লালন-পালন করে দেশের যুক্তরাষ্ট্রীয় ও ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্র ভাঙতে চাইছে এই সরকার। এত নেতিবাচক ভূমিকা যাঁর, প্রতিদিন যাঁর সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভের আগুনের তাপ ছড়াচ্ছে, তিনিই কি না পাল্টা আক্রমণাত্মক ভূমিকা নিয়ে একের পর এক সাফল্য দাবি করে চলেছেন! সন্দেহ নেই, নির্লজ্জতার এমন প্রদর্শন অতীতে কোনও সরকারের আমলে দেখা যায়নি। ব্যর্থতাকে সম্পূর্ণ আড়াল করে বা উদাসীন থেকে যেকোনও কর্মকাণ্ডকে কীভাবে নিজেদের কৃতিত্ব বলে চালাতে হয় তা এর আগে এমন করে কোনও প্রধানমন্ত্রীই দেখাতে পারেননি। লোকসভা ও কয়েকটি রাজ্যের বিধানসভা ভোট এসে যাওয়ায় এই প্রবণতা কয়েকগুণ বেড়ে গিয়েছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর সাফল্যের সঙ্গে বাস্তব সত্য মেলাতে গেলেই মুখ আর মুখোশ আলাদা হয়ে যাচ্ছে।
রবিবার কয়েকটি বন্দে ভারত ট্রেনের উদ্বোধন করে রেলের যাবতীয় উন্নয়ন তাঁর আমলেই হয়েছে বলে দাবি করেছেন মোদি। বাস্তব হল, মোদির আমলে রেলে কয়েক হাজার পদ শূন্য। কর্মীর অভাবে রেললাইন ও ট্রেনের সংস্কারের কাজ ঠিকমতো হয় না। যাত্রী নিরাপত্তাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে দিব্যি ঠান্ডাঘরে বসে রেল পরিষেবার বিজ্ঞাপন করে চলেছেন কর্তারা! যাত্রী নিরাপত্তা যে কোন তলানিতে তা সম্প্রতি রেল দুর্ঘটনার পরে সামনে এসেছে। কিন্তু দেশের প্রধানমন্ত্রীর কাছে রেলের উন্নয়ন মানে হয়তো উচ্চমূল্যের টিকিটের কয়েকটি ট্রেনের গতি বাড়িয়ে দেওয়া, কিছু স্টেশনের ভোলবদলে দেওয়া। অর্থাৎ কেবলই বাইরের চাকন-চিকন! অথচ রেলের নিত্যযাত্রীদের দুর্দশা, লোকাল ট্রেনের দুরবস্থা দূর করার কোনও নামগন্ধ নেই! কিন্তু প্রধানমন্ত্রী তাঁর স্বপ্নের বন্দে ভারত ট্রেন চালিয়ে হাড় জিরজিরে পরিকাঠামোর রেলের উন্নয়ন দাবি করছেন! তিনি বোঝালেন, রেলে যা উন্নতি হয়েছে সবই তাঁর আমলে। সেই আমিত্ব জাহিরের মরিয়া প্রয়াস। অবশ্য ভোটে জেতার বাসনায় মোদি এবং তাঁর বাহিনী এখন বিজ্ঞানীদের সাফল্যকেও নিজেদের বলে দাবি করতে শুরু করেছেন! সম্প্রতি চাঁদের দক্ষিণ মেরুর মাটি ছুঁয়েছে ভারতের চন্দ্রযান। অন্যদিকে সূর্যের কাছাকাছি পৌঁছতে যাত্রা করেছে আদিত্য এল-১। ইসরোর বিজ্ঞানীদের নিরলস প্রচেষ্টা ও সাফল্যকে বিজেপি ভোট প্রচারের হাতিয়ার করবে বলে ইঙ্গিত মিলেছে। রবিবার ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে তেমনই ইঙ্গিত দিয়েছেন স্বয়ং মোদি। অথচ বাস্তব হল, এই মোদি সরকারই মহাকাশ গবেষণার বাজেট কমিয়ে দিয়েছে। চন্দ্রযান অভিযানে যুক্ত এইচসিএল-এর কর্মীদের অনেকে ১৮ মাস ধরে বেতন না পেয়ে দিল্লির যন্তরমন্তরের সামনে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। মোদির নির্বাচনী প্রচারের আরও হাতিয়ার হতে চলেছে জি-২০ সম্মেলন। কয়েক হাজার কোটি টাকা খরচ করে, চীন ও রাশিয়ার রাষ্ট্রনায়কদের অনুপস্থিতিতে যে সম্মেলন হয়েছে, তা ঘুরেফিরে বিভিন্ন দেশেই হয়ে থাকে। এতেও মোদির কৃতিত্ব দাবি! বরং বিদেশিদের চোখে ধুলো দিতে কীভাবে দিল্লির বস্তি এলাকা সবুজ প্লাস্টিকের চাদরে ঢেকে দিয়ে সত্যকে ধামাচাপা দেওয়া হয়েছিল, তা নিয়ে বিতর্ক হচ্ছে। এর পাশাপাশি মোদিবাহিনীর সর্বোচ্চ চমক মহিলা সংরক্ষণ বিল, যে বিল দেড় দশক পরে কার্যকর হবে। তখন মোদিজি কোথায় থাকবেন কেউ জানে না। অথচ ২৭ বছরের পুরনো সংরক্ষণ বিলকে নতুন মোড়কে সংসদে পেশ করে মহিলাদের অধিকার দেওয়ার দাবি করতে শুরু করেছে মোদিবাহিনী!
এই গিমিকের পাশাপাশি মোদি জমানার আসল সত্যটা হল, গত দশ বছরে মূল্যবৃদ্ধি ও বেকারির নাগপাশে দেশবাসীকে বেঁধে ফেলেছে সরকার। এই সময়ে ডালের দাম ১৩ শতাংশ, গমের দাম ২০ শতাংশ, চালের দাম ১৫ শতাংশ, গুড়ের দাম ২০ শতাংশ বেড়েছে। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক বলছে, মানুষের হাতে সংসার চালানোর টাকা বাড়ন্ত। তাই গয়না বন্ধক রেখে ধার ও ব্যক্তির ঋণ নেওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের দশা বেহাল হওয়ায় শ্রমিকদের কাজে অংশগ্রহণের হার কমেছে। আসলে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি আর দাবির তালিকা যতই দীর্ঘ হচ্ছে ততই বাস্তব পরিস্থিতির সঙ্গে আশমান জমিন ফারাক প্রকাশ্য হয়েছে। এক সমীক্ষা রিপোর্ট বলছে, সাম্প্রতিককালে বেকারত্বের ছবিটা প্রাক-করোনাকালের সময়কালের চেয়েও উদ্বেগজনক। দেশের ২৫ বছরের কম বয়সি স্নাতকদের মধ্যে ৪২.৩ শতাংশ এখনও কাজ বা চাকরি পায়নি। বেকারত্ব, মূল্যবৃদ্ধির মতো গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা সমাধানে নজরই নেই মোদি সরকারের। এসব নিয়ে মোদি-বিজেপি নীরব! শাসকঘনিষ্ঠ শিল্পগোষ্ঠীর আঙুল কীভাবে ফুলে কলাগাছ হল, অথবা মণিপুরের বীভৎসতা—এসব ক্ষেত্রে ঠুলি পরে বসে আছে মোদিবাহিনী। এটাই কৌশল। কিন্তু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, দেশের মানুষ সব দেখছেন, বুঝছেন। তাই সাধু সাবধান।
12Months ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

কাজকর্মে পরিশ্রম ও ব্যস্ততা বৃদ্ধি। ছোট ও মাঝারি ব্যবসায় অগ্রগতি। অর্থাগম যোগটি অনুকূল।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৩.১৩ টাকা৮৪.৮৭ টাকা
পাউন্ড১০৮.৫০ টাকা১১২.০৬ টাকা
ইউরো৯১.০৪ টাকা৯৪.২২ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
5th     October,   2024
দিন পঞ্জিকা