সম্পাদকীয়

গরিবের মসিহা সাজা!

একই অঙ্গে কত রূপ! কখনও ফকির, কখনও চাওয়ালার ছেলে, কখনও বা চৌকিদার। এবার নতুন রূপে ‘ম্যায় গরিব কা বেটা’! আর গরিবের যিনি বেটা তিনি গরিবের দুঃখকষ্ট বুঝবেন না, মর্মে মর্মে তা অনুভব করবেন না তা কি হয়? তাঁর কাজই হল সেই দুঃখ অনুভব করে সমাজের সর্বস্তরের মানুষের কল্যাণসাধন করা। কিন্তু বড্ড দেরি করে ফেলেছেন সেই দায়িত্বপালনে। তাতে কী? ভোট তো দোরগোড়ায়। তাই বছর বছর সে-কথা ভুলে থাকলেও ভোটের সময়ে এই আম জনতাই তাঁর আসল ভরসা। সেই জরুরি কথাটি অবশ্য ভুলে যাননি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। আর তাই ’২৪-এর ফাইনাল ম্যাচ লোকসভা ভোটের আগে অস্ত্র করলেন ‘গরিবি’-কেই। জন্মদিনের আড়ম্বরে ভেসে গিয়ে দরিদ্র মানুষের মসিহা হয়ে নতুন স্লোগান তুললেন, ‘ম্যায় গরিব কা বেটা’। তাঁর জমানায় গরিবের সংখ্যা উত্তরোত্তর বাড়লেও তাঁদেরই তুরুপের তাস করতে এখন মরিয়া দিল্লীশ্বর। তাঁর চৌকিদারি নজর ‘ফাঁকি’ দিয়ে দেশের কোটি কোটি টাকা নিয়ে দেশ ছেড়েছে বেশ কয়েকজন কেষ্টবিষ্টু। ফলে চৌকিদারের স্লোগানে এখন আর কাজ হবে না। চাই নতুন কিছু। সবচেয়ে সহজলভ্য ‘গরিবিই’ তাই এবারের ভোটের অস্ত্র। অবশ্য অস্ত্রটি নতুন নয়। আগেও এর প্রয়োগ বিভিন্ন সময়ে নানাভাবে করেছেন এদেশের একাধিক শাসক। প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী গরিবি হঠাও অর্থাৎ গরিবমুক্ত দেশ গড়ার ডাকও দিয়েছিলেন। দেশ যে গরিব মুক্ত হয়নি তা মোদির প্রধান প্রতিপক্ষ কংগ্রেসের বক্তব্যেই স্পষ্ট। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী মোদি সব অর্থেই ব্যতিক্রম। তিনি চমকে বিশ্বাসী, প্রচারে পারদর্শী। তাই ভোটের ময়দানে নিজেকেই ‘ম্যায় গরিব কা বেটা’ হিসেবে তুলে ধরলেন! সামনেই পাঁচ রাজ্যে বিধানসভার ভোট। সেই লক্ষ্যে তাঁর তল্পিবাহক বিজেপি শুরু করেছে ‘সেবাপক্ষ’। পিতৃপক্ষ, দেবীপক্ষ, কৃষ্ণপক্ষ, শুক্লপক্ষ—এসবই মানুষের জানা। মোদি জমানায় নয়া আঙ্গিকে এল ‘সেবাপক্ষ’। কাদের সেবা? এই সাড়ে ন’বছরের রাজত্বে যাঁদের কথা কোনওদিন ভাবা হয়নি, যাঁরা ছিলেন সবচেয়ে অবহেলিত শ্রেণি, তাঁদের জন্যই কল্যাণমূলক কাজের উদ্দেশ্যে এই সেবাপক্ষ। মোদি সরকারের এবং প্রধানমন্ত্রীর নিজের গরিবদরদি ইমেজ তুলে ধরতে হাতে কলমের কারিগরদের ‘বিশ্বকর্মা’ সম্মানও দেওয়া হল। আত্মপ্রচারের ঢাক বাজল। প্রধানমন্ত্রী বললেন, ‘আমার সরকারই গরিবের জন্য ভাবে। আমিই গরিবের গ্যারান্টার।’ দেশের চৌকিদার কি তাহলে সেই দায়িত্ব ছেড়ে এবার হলেন গরিবের গ্যারান্টার? ভোট বড় বালাই।
প্রশ্ন হল, তিনি গরিবের কেমন গ্যারান্টার যে ২৩ কোটি মানুষ দারিদ্র্যসীমার নীচে চলে গিয়েছে! ৮৩ শতাংশ দেশবাসীর উপার্জন কমেছে। অথচ দু’বছরে ধনকুবেরের সংখ্যা ১০২ থেকে বেড়ে হয়েছে ১৬৬। ২০২২ সালে শুধু তাঁর ঘনিষ্ঠ এক শিল্পপতি গোষ্ঠীর সম্পত্তির পরিমাণ বেড়েছে ৪৬ শতাংশ। গেরুয়া স্তাবককুলের দাবি হল, মোদি জমানায় ‘বিকাশ’-এর গাড়ি দুরন্ত গতিতে ছুটছে। এ কেমন বিকাশ যে জি-২০ সম্মেলনের সময় গরিব ঢাকতে একের পর এক বস্তি ঢেকে তা লোকচক্ষুর আড়াল করতে হয়? গরিবের গ্যারান্টার কি জবাব দেবেন, মাথাপিছু আয়ে ১৮৯টি দেশের মধ্যে ভারতের স্থান কেন পিছনের সারিতে, ১৪১তম স্থানে? প্রতিবেশী বাংলাদেশও তো ভারতকে পিছনে ফেলে দিয়েছে। এখানেই শেষ নয়, মোদি জমানায় ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য যে অনেকখানি বেড়েছে তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ বিভিন্ন সমীক্ষা রিপোর্ট। সবচেয়ে ধনী ১০ শতাংশের হাতের রয়েছে মোট সম্পদের ৮০ শতাংশ, অথচ এঁদের থেকে জিএসটি আদায় হয় মাত্র ৩-৪ শতাংশ! উল্টোদিকে, ভারতের মোট সম্পদের মাত্র ৩ শতাংশ রয়েছে আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া ৫০ শতাংশের হাতে, যদিও এঁদের থেকেই মোট জিএসটি-র ৬৪ শতাংশ আদায় হয়। এসবের পরেও ‘গরিবি’ কে সামনে রেখে সেই মোদিই মধ্যপ্রদেশে গিয়ে বললেন, ‘আমি ‘গরিবের বেটা’।
দামি গাড়ি, দামি স্যুট এসবই তাঁর নিত্যসঙ্গী। তা নিয়ে ‘নিন্দুকেরা অভিযোগও তোলেন মাঝেমাঝে। মোদি-সরকারের একাধিক দপ্তরে দুর্নীতি নিয়ে রিপোর্ট দিয়েছে খোদ সরকারি সংস্থা ক্যাগ। এসব নিয়ে রা কাড়েন না প্রধানমন্ত্রী। ‘গরিবের বেটা’ হয়ে দরিদ্র মানুষের ব্যথা বোঝেন না। প্রশ্ন তো অনেক আছে। কেন তাঁর জমানায় ভারতে রান্নার গ্যাসের দাম বিশ্বে সর্বাধিক। পেট্রলের দাম তৃতীয় সর্বোচ্চ, ডিজেল অষ্টম সর্বোচ্চ? আসলে এসব আশু সমস্যা সমাধানে তাঁর ধ্যান নেই। বেকারি, লাগামছাড়া মূল্যবৃদ্ধি, জিএসটির প্যাঁচ ইত্যাদি নানাক্ষেত্রে ব্যর্থতার কারণে তাঁর সরকারের জনপ্রিয়তা তলানিতে। সেই ব্যর্থতা ঢাকতে এখন মানুষের আবেগকে কাজে লাগানোর কৌশল নিয়েছেন। এভাবেই ভোট বৈতরণী পেরতে চাইছেন মোদি। বোঝাতে চাইছেন ‘আমি তোমাদেরই লোক’। কিন্তু ভুক্তভোগী গরিব মানুষের মন কি পাবেন? ক্ষত মেরামতের কাজটি বোধহয় অত সহজ হবে না।
14Months ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

কাজকর্মে সুনাম বাড়বে। জ্ঞাতির চক্রান্তে সম্পত্তি সংক্রান্ত ক্ষেত্রে সমস্যা হতে পারে। উচ্চশিক্ষায় শুভ ফল লাভের...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৩.৮৫ টাকা৮৫.৫৯ টাকা
পাউন্ড১০৬.১০ টাকা১০৯.৮৬ টাকা
ইউরো৮৭.৯১ টাকা৯১.৩০ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
8th     December,   2024
দিন পঞ্জিকা