সম্পাদকীয়

কুর্সির বলি কৃষক

২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী কৃষকদের এই বলে আশ্বস্ত করেছিলেন যে, ২০২২ সালের ভিতরে দেশের কৃষকদের আয় দ্বিগুণ হয়ে যাবে। কিন্তু ‘মোদি ম্যাজিক’ কাজ করেনি, কিংবা অন্যভাবে বলা চলে, কথা রাখেনি তাঁর সরকার। বরং মুদ্রাস্ফীতির বাস্তবটা বিবেচনায় নিলে এই নির্মম সত্যটাই ধরা পড়ে যে, কৃষকের আয় কমে গিয়েছে। তাই বিরোধীরা যখন এটাকে দেশের প্রধানমন্ত্রীর আরও একটা ঐতিহাসিক ‘জুমলা’ (মিথ্যা প্রতিশ্রুতি) বলে কটাক্ষ করে তখন দেশবাসী তাদের ভুল ভাবে না। ভারত সরকারের এনএসও রিপোর্ট ২০১৮ উদ্ধৃত করে, গত বছরের শেষদিকে, সারা ভারত কিষান কংগ্রেসের চেয়ারম্যান সুখপাল সিং খৈরা কেন্দ্রকে এই প্রশ্নে তীব্রভাবে বিদ্ধ করেন। পরবর্তী কয়েক মাসে কেন্দ্রীয় বাজেট পেশসহ অনেক রাজকার্যও চলেছে। কিন্তু অন্নদাতাদের হাল তারপরেও কি ফিরেছে, বিন্দুমাত্র? বিষয়টি বুঝতে একটি ‘ডাবল ইঞ্জিন’ রাজ্যের টাটকা দৃষ্টান্ত রাখাই যথেষ্ট। মহারাষ্ট্রের মারাঠাওয়াড়া অঞ্চলে ‘অমৃতকালের’ গত আট মাসে প্রায় সাতশো কৃষক আত্মঘাতী হয়েছেন! এটা সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারিত কোনও ‘ফেক নিউজ’ নয়। এটাকে একনাথ সিন্ধে, দেবেন্দ্র ফড়নবিশ ও অজিত পাওয়ার নামক ‘ত্রিরত্ন’ কর্তৃক পরিচালিত রাজ্য সরকার এবং নরেন্দ্র মোদি-অমিত শাহ জুটির কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে বিরোধীদের কুৎসা বলেও উড়িয়ে দেওয়ার অবকাশ নেই। কারণ যে সরকারি রিপোর্টে এই মর্মান্তিক চিত্রটি ধরা পড়েছে সেটি তৈরি করেছে স্থানীয় ডিভিশনাল কমিশনারের অফিস। 
একজন মানুষ কখন আত্মঘাতী হয়? জীবনের সব আশা ভরসা শেষ হয়ে গেলে, যখন জীবনের চেয়ে মৃত্যুকেই শ্রেয় সুখকর বা অগ্রবর্তী মনে হয়। সাধারণভাবে এটাই মনে করা হয় যে, কর্পোরেট লাইফ ভীষণ টেনশনের। আকাশের চাঁদ হাতে পাওয়ার মতো করে, বিভিন্ন ফিল্ডে, যেসব মানুষ প্রতিষ্ঠালাভের জন্য ছুটছে, তাদের টেনশন মারাত্মক। এছাড়া কিছু মানুষ পারিবারিক, সামাজিক এবং কর্ম জীবনে অনাবশ্যক হেনস্তার শিকার। এমন নির্যাতন শারীরিক যত না তার চেয়ে বেশি মানসিক। এসব ক্ষেত্রে অল্প কিছু মানুষ আত্মহত্যাও করে বসে। করোনাকাল বোধহয় এই সর্বনাশা প্রবণতায় কিছুটা গতিসঞ্চার করে গিয়েছে। এতে বাঁধ দিতে প্রতি বছর ১০ সেপ্টেম্বর ওয়ার্ল্ড সুইসাইড প্রিভেনশন ডে এবং ১০ অক্টোবর ওয়ার্ল্ড মেন্টাল হেলথ ডে পালন করা হচ্ছে। কিন্তু এমন উদযাপনের লক্ষ্য সাধারণভাবে কোনও কৃষক নন। কৃষকের হাড়ভাঙা খাটুনি এবং নিত্য অভাবের সত্য অনেক পুরনো। তবু তাঁদেরকে হতাশ মানুষের দলে ফেলা যায়নি। বিস্তীর্ণ মাঠঘাট ফসল আর সহজ সরল জীবন বরাবর তাঁদের বাঁচার আনন্দ জুগিয়ে গিয়েছে। সেই বিশ্বাসের দেওয়ালটাও পলকা হয়ে আসছে ক্রমে। কৃষকও আত্মঘাতীদের দলে! 
কারণ কী? আজকের কৃষককে অনেক বেশি ঋণ নিয়ে চাষ করতে হয়। আর পর্যাপ্ত ফসল না-হলেই বিপাকে পড়তে হয় তাঁদের। ফলন নির্ভর করে পর্যাপ্ত বৃষ্টির উপর। ওইসঙ্গে দরকার উন্নত মানের বীজ সার কীটনাশক প্রভৃতি। কিন্তু প্রকৃতির খেয়ালি আচরণ যে বেড়ে চলেছে! বৃষ্টি প্রতি বছর নিয়মমতো হয় না। খরা ও অতিবৃষ্টি কৃষকের এত শ্রম এবং বিপুল ঋণের অর্থের সর্বনাশ করে ছাড়ে। বিপন্ন কৃষকের পাশে দাঁড়াবার কেউ থাকে না। কৃষিঋণ মকুবের ঘোষণা; বিদ্যুৎ ডিজেল বীজ সার কীটনাশকে সরকারি ভর্তুকির প্রতিশ্রুতি; সেচের উন্নতি; ফসল বিমার আশ্বাস—সবই দেখা যায় ভোট কুড়োবার ফিকির মাত্র! মারাঠাওয়াড়ায় কৃষকদের জীবনে সর্বনাশ যে দীর্ঘতর হতে চলেছে, গত জুলাই মাসেই তার স্পষ্ট ইঙ্গিত দিয়েছিলেন রাজস্ব বিভাগেরই এক অফিসার। কিন্তু তারপরেও পরিস্থিতি ঘোরাবার কোনও চেষ্টা হয়েছিল, এমনটা জানা যাচ্ছে না। কাকেই-বা দোষ দেবেন: মহারাষ্ট্রে মানুষের সরকার বলে কিছু চলে কি আদৌ? ২০১৯-এর অক্টোবরে বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকে মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সি ধরে টানাটানির অধিক কী আর হচ্ছে সেখানে? একনাথ সিন্ধেও জানেন না, তাঁর পদের মায়া কবে কাটাতে বাধ্য হবেন তিনি। সবাই জানে, সবটাই নরেন্দ্র মোদি এবং অমিত শাহের নয়া গণতন্ত্রের সৌজন্যে। তাই মহারাষ্ট্রের কৃষকদের জীবনে নেমে আসা এই সর্বনাশের দায় কেন্দ্রীয় শাসক দল বিজেপি এবং মোদি সরকারের উপরেই বর্তায়। বাহবা কুড়নো ছাড়া আর কিছুতেই যাঁরা নেশা অনুভব করেন না, তাঁরা কি এমন দায় গ্রহণ করে সামান্য ব্যবস্থাও নেবেন? তিক্ত অভিজ্ঞতা সেই ভরসা দেয় না।
12Months ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

উপস্থিত বুদ্ধি ও প্রখর অনুমান ক্ষমতার গুণে কার্যোদ্ধার। ব্যবসা, বিদ্যা, দাম্পত্য ক্ষেত্রগুলি শুভ।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৩.১৩ টাকা৮৪.৮৭ টাকা
পাউন্ড১০৮.৩২ টাকা১১১.৮৭ টাকা
ইউরো৯১.২৫ টাকা৯৪.৪৩ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
5th     September,   2024
দিন পঞ্জিকা