সম্পাদকীয়

সবার জন্য উন্নত শিক্ষার উদ্যোগ

মহাকাশ বিজ্ঞানে ভারত অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানসহ জ্ঞানবিজ্ঞানের অন্যান্য শাখাতেও ভারতের বিচরণ আজ অবাধ বলা চলে। এই প্রশ্নে আর কোনও উন্নয়নশীল দেশ ভারতের ধারেকাছে নেই। এমনকী, বহু উন্নত দেশও ভারতকে এজন্য সমীহ করে। নিঃসন্দেহে, প্রতিটি ভারতবাসীর জন্য এ এক গর্বের মুহূর্ত। কিন্তু শিক্ষার সার্বিক চিত্র এর পাশে রাখলে আমাদের মুখটা নিচু না-হয়ে পারে না। উন্নয়নের প্রাথমিক শর্ত হল একটি শিক্ষিত সমাজ। সাত বছর বয়সি ছেলেমেয়ে এবং তার ঊর্ধ্বের সকলে লিখতে ও পড়তে সক্ষম হলে তাদের ‘সাক্ষর’ বলে ধরা হয়। যথার্থ শিক্ষিত সমাজ গড়তে হলে সাক্ষরতার হার ১০০ শতাংশই হওয়া বাঞ্ছনীয়। সাক্ষরতার হার বৃদ্ধির জন্য ভারতের লড়াই শুরু হয়েছে কয়েক দশক আগেই। কিন্তু পূর্ণসাক্ষর দেশ হয়ে উঠতে পারিনি আমরা। ২০১১ সালের পর আর জনগণনা হয়নি। তার এক দশক বাদে, ২০২১ সালে কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থা ন্যাশনাল স্ট্যাটিস্টিকাল অফিসের (এনএসও) এক সমীক্ষা রিপোর্ট অনুসারে, ভারতে সাক্ষরতার সার্বিক হার ৭৭.৭০ শতাংশ। সাক্ষরতার হার পুরুষের মধ্যে ৮৪.৭০ শতাংশ এবং মহিলাদের মধ্যে ৭০.৩০ শতাংশ। পূর্ণসাক্ষর হয়ে ওঠার থেকে কত যোজন দূরে আমাদের অবস্থান, এই ছবি সেটাই পরিষ্কার করে দেয়। একই সঙ্গে দেখিয়ে দেয় লিঙ্গবৈষম্যের আঘাতটা ‘মহান’ ভারতে এখনও কতটা নির্মম!
শিক্ষাখাতে এ যাবৎকালের মধ্যে, চলতি অর্থবর্ষেই সবচেয়ে বেশি বাজেট বরাদ্দ করা হয়েছে—১,১২,৮৯৯.৪৭ কোটি টাকা। অঙ্কটা ১,০৪,২৭৭.৭২ কোটি টাকা ছিল পূর্ববর্তী বছরে। কিন্তু দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন এবং শিক্ষামন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান যে নির্মম সত্যটা চেপে গিয়েছেন সেটা হল, শিক্ষাখাতে বাজেট বরাদ্দ জিডিপির ২.৯ শতাংশেই থমকে রয়েছে। এর পাশাপাশি থাকে সরকারি অর্থের অপব্যয়, খরচে বেনিয়ম ও অস্বচ্ছতা এবং আঞ্চলিক বৈষম্য। তার ফলে বহু প্রান্তিক এলাকায় স্কুল নেই। স্কুল থাকলেও তার পরিকাঠামো পাঠদানের উপযুক্ত নয়। পড়ুয়া-শিক্ষকের অনুপাত দুর্ভাগ্যজনকভাবে কম। পরিস্রুত পানীয় জল, স্বাস্থ্যকর  শৌচাগার, বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট সংযোগ ইত্যাদির কথা বহু স্কুলের কাছে এখনও বিলাসিতা। প্রাথমিক স্কুলের অনুপাতে উচ্চ প্রাথমিক এবং উচ্চ বিদ্যালয়ের সংখ্যা অপ্রতুল। এরপর কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগের অসামঞ্জস্যও প্রকট। সব মিলিয়ে যা হওয়ার সেটাই হয়, লক্ষ লক্ষ ছেলেমেয়ে স্কুলের চৌকাঠ পেরতে পারে না। স্কুলে প্রবেশ করেও পড়া শেষ হয় না একটা বড় অংশের। স্কুলছুট ছেলেমেয়েদের অনেকই হারিয়ে যায় শিশুশ্রমের বাজারে কিংবা অন্ধকার জগতে। গ্রাম ভারতের ছেলেমেয়েদের সামনে উচ্চ শিক্ষায় প্রবেশের সুযোগ অত্যন্ত কম। অথচ, দেশের সংবিধান এবং আন্তর্জাতিক সনদ মেনে এই দেশই তৈরি করেছে সবার জন্য শিক্ষার আইন। এর ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হচ্ছে গরিব, নিম্ন মধ্যবিত্ত এবং গ্রাম-মফস্‌স঩লের পরিবারগুলোর। সরকারি ব্যবস্থার এই লজ্জাজনক ব্যর্থতার সূত্রেই উত্থান ঘটছে বেসরকারি শিক্ষাক্ষেত্রের। কর্পোরেট পুঁজিও উৎসাহিত হচ্ছে প্রাথমিক থেকে উচ্চ শিক্ষা পর্যন্ত প্রায় সর্বত্র বিপুল বিনিয়োগে। কিন্তু দেশের অর্ধেকের বেশি পরিবারের পক্ষে এই পাঁচতারা মহোৎসবে যোগদান অসম্ভব। 
এজন্যই জরুরি শিক্ষা সংস্কার। মোদি সরকার জাতীয় শিক্ষানীতি ঘোষণা করেছে বটে, কিন্তু তা নিয়ে দেশের নিরপেক্ষ শিক্ষামহলের আপত্তির দিকগুলো ভাববার মতোই। তাই পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে রাজ্যের জন্য পৃথক শিক্ষানীতি গ্রহণ করতে হয়েছে। সেখানে তাৎপর্যপূর্ণভাবে জোর দেওয়া হয়েছে একাধিক বিষয়ের উপর: শিশুদের অঙ্গনওয়াড়ি, অষ্টম শ্রেণি থেকে সেমেস্টার চালু এবং মাধ্যমিক পরীক্ষা বহাল রেখে ২০২৬ সাল থেকে সেমেস্টার সিস্টেমে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা গ্রহণ। শিক্ষকদের ক্ষেত্রেও আসছে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন: নতুন শিক্ষকদের পাঁচ বছর গ্রামের স্কুলে পড়াতে হবে এবং সেটা বাধ্যতামূলকভাবে। তাঁদের জন্য নয় প্রোমোশন নীতিও ঘোষিত হয়েছে। বাংলার সুন্দরবন, জঙ্গলমহল এবং চা-বাগান এলাকা তুলনামূলকভাবে শিক্ষাদীক্ষায় পিছিয়ে রয়েছে। তাই এই এলাকাগুলিতে শিক্ষার বিস্তারে বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। মহাকাশ গবেষণার সাফল্যকে দীর্ঘমেয়াদে সার্থক করতে হলে উপযুক্ত শিক্ষা সংস্কারও জরুরি। তাই রাজ্যের উদ্যোগ স্বাগত। দেখতে হবে এই নীতি যেন দ্রুত এবং সফলভাবে রূপায়িত হয়। প্রতিটি পদক্ষেপে স্বচ্ছতা বৃদ্ধির সঙ্গে বাড়াতে হবে বাজেট বরাদ্দও। রাজ্যের পাশে দাঁড়াতে কেন্দ্রীয় সরকারকেও বাধ্য করতে হবে। পূর্ণসাক্ষর ভারতে সবার জন্য উন্নত শিক্ষার দ্বার উন্মুক্ত হওয়াই প্রকৃত উন্নয়নের প্রথম ও প্রধান শর্ত।
12Months ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

কর্মস্থলে জটিলকর্মে অনায়াস সাফল্য ও প্রশংসালাভ। আর্থিক দিকটি শুভ। ক্রীড়াস্থলে বিশেষ সাফল্য।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৩.১০ টাকা৮৪.৮৪ টাকা
পাউন্ড১০৮.৬৪ টাকা১১২.১৯ টাকা
ইউরো৯১.৫৩ টাকা৯৪.৭৩ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
14th     September,   2024
দিন পঞ্জিকা