সম্পাদকীয়

গেরুয়া কোপে ‘গণতন্ত্র’

একেই বলে গোড়া থেকে উপড়ে ফেলা। তাঁর আমলে ‘দেশের গণতন্ত্র বিপন্ন’ বলে আসমুদ্রহিমাচল সোচ্চার। গত ন’বছরের প্রায় প্রতিদিনই সামাজিক-রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে কীভাবে গণতন্ত্র ধর্ষিত হচ্ছে, তার চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসছে সংবাদ মাধ্যমে, মানুষের মুখে মুখে। কিন্তু এত গোলযোগ সইতে পারেন না ‘ভগবান’ নরেন্দ্র মোদি। এবার তাই কোনও রাখঢাক না-করে গোড়া থেকেই গণতন্ত্রের গাছটি কেটে ফেলা হল। মোদি সরকারের অধীন এনসিইআরটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে, দশম শ্রেণির স্কুল পাঠ্যে গণতন্ত্র বিষয়ক যে তিনটি অধ্যায় রয়েছে, ছাত্রছাত্রীদের তা আর পড়ার দরকার নেই! সেইসঙ্গে বিজ্ঞানের কিছু গুরুত্বপূর্ণ অনুচ্ছেদও বাদ দেওয়া হয়েছে পাঠ্যক্রম থেকে। আসলে মোদি, অমিত শাহদের রাজনৈতিক লক্ষ্য খুব পরিষ্কার, দেশের বহুত্ববাদের যে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত তার বিপরীতে এক ধর্ম, এক ভাষা, এক চিন্তা, এক ভাষ্য, এক মতের শৃঙ্খলে মানুষকে বেঁধে ফেলা। সোজা কথায়, হিন্দুত্ববাদী একদলীয় গণতন্ত্র ও একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠা করা। এই আধিপত্যবাদে ভিন্ন মত, স্বাধীনতা, নিরপেক্ষতা বলে কিছু থাকতে পারে না। অতএব, লক্ষ্যে পৌঁছতে দশম শ্রেণির সামাজিক বিজ্ঞানের বই থেকে বাদ গিয়েছে তিনটি অধ্যায়, যেখানে গণতন্ত্র ও বৈচিত্র্য, স্বাধীনতার সময়ে বিভিন্ন জনপ্রিয় আন্দোলন ও ‘গণতন্ত্রের সঙ্কটের’ ইতিহাস রয়েছে। এই সিদ্ধান্তকে ধিক্কার জানালে অবাক হওয়ার কিছু নেই। প্রধানমন্ত্রী অবশ্য পোড়খাওয়া অভিনেতার মতো অবাক করেই চলেছেন! কী বিদেশে, কী দেশের মাটিতে ভারতের গণতন্ত্র নিয়ে বলতে উঠলেই তিনি নিজের মুখটা ঢেকে ফেলেন ‘মুখোশে’। সেই মুখোশের আড়াল থেকে ভাবলেশহীনভাবে বলে চলেন, ভারতের গণতন্ত্র হল ভারতবাসীর ডিএনএ। ভারত গণতন্ত্রের জননীস্বরূপ। গণতান্ত্রিক আদর্শেই আমরা এক পরিবার। দেশ আজ যা কিছু হাসিল করেছে তার পিছনে রয়েছে মানুষ ও গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলির ক্ষমতা। অথচ বাস্তব সত্য হল, মোদির ‘গণতন্ত্রে’ সংসদ, নির্বাচন কমিশন, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক, সিবিআই-ইডির মতো একাধিক স্বাধীন সংস্থা একনায়ক প্রধানমন্ত্রীর যেন লেজুড়বৃত্তি করে চলেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মোদির এই ‘নতুন ভারত’-এর আদর্শে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে গড়েপিঠে নিতে চাইছে বিজেপি-সঙ্ঘ পরিবার। স্কুলস্তর থেকেই সেই অনুশীলন শুরু হয়েছে। বেছে নেওয়া হচ্ছে ১১ থেকে ১৮ বছর বয়সের পড়ুয়াদের। এর আওতায় পড়ছে প্রায় তেরো কোটি কোমলমতি ছাত্রছাত্রী!
গণতন্ত্রের সঙ্গে নির্বিচারে বলি দেওয়া হচ্ছে ইতিহাস, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, সমাজবিদ্যা ও বিজ্ঞানকেও। শুধু স্কুলের উঁচু ক্লাস নয়, একেবারে পঞ্চম, ষষ্ঠ শ্রেণি থেকেই পাঠ্যক্রম কাটছাঁট করে ‘বিষ’ ঢুকিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। বছরের গোড়ায় ডারউইনের বিবর্তনবাদ তত্ত্ব বাদ দিয়ে দেওয়া হয়েছে। তারও আগে ইতিহাস বই থেকে বাদ পড়েছে মুঘল যুগ। গান্ধী হত্যাকারী নাথুরাম গডসের হিন্দুত্ববাদী পরিচয়, আরএসএসকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা, গুজরাত দাঙ্গার ঘটনা, দেশভাগ, ঠান্ডাযুদ্ধ, দারিদ্র্য-শান্তি-উন্নয়নের মতো বিষয় দশম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির বই থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। নিচু ক্লাসের সিলেবাস থেকে বাদ পড়েছে খাদ্য, তার উৎস, গণতন্ত্রের মূল কথা, জলবায়ু ও বন্যপ্রাণী বিষয়ক অনুচ্ছেদ। আর এবার গণতন্ত্রের সঙ্গে কাটা পড়ল বিজ্ঞানের মৌলগুলির চরিত্র ও বৈশিষ্ট্য সংক্রান্ত পর্যায় সারণি অধ্যায়। বাদ গিয়েছে শক্তির উৎসের মতো গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ও। সরকারের অধীনস্থ সংস্থার মতে, এসব বিষয় হল সিলেবাসের বোঝা, তাই বাদ দেওয়া হয়েছে। অথচ আধুনিক বিশ্বে প্রতিটি দেশের কাছে জলবায়ু ও পরিবেশ নানাভাবে চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভারতও এর নেতিবাচক প্রভাব থেকে মুক্ত নয়। অথচ এই দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের প্রায় সব অধ্যায়ই বাদ পড়েছে পাঠ্যক্রম থেকে! উদ্দেশ্য স্পষ্ট, আসলে যতই ছেলেমেয়েরা কম জানবে ততই শাসকের সুবিধা।
এদেশে গণতন্ত্র নিয়ে বিজেপি যে প্রচারই করুক, প্রধানমন্ত্রী যে কল্পিত কাহিনিই শোনান—আন্তর্জাতিক মহলে তার কোনও মূল্য নেই। বরং মোদি জমানায় ভারতের গণতন্ত্র যে কার্যত খাদের কিনারায় এসে দাঁড়িয়েছে সেই তথ্য উঠে এসেছে বিভিন্ন সমীক্ষায়। যেমন, রির্পোটার্স উইদাউট বর্ডার্স’ সংস্থার প্রকাশিত গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভ সংবাদ মাধ্যমের সূচকে ২০১৬ সালে ভারতের স্থান ছিল ১৩৩। সেটা ২০২১ সালে নেমে গিয়েছে ১৪২-এ। গতবছর ভারতের স্থান আরও নেমে দাঁড়িয়েছে ১৫০তম স্থানে। আবার ২০২১ সালে আমেরিকার সংস্থা ‘ফ্রিডম হাউস’ ভারতকে ‘মুক্ত গণতন্ত্র’-এর তকমা থেকে ছেঁটে ‘আংশিক মুক্ত গণতন্ত্র’-এর সারণিতে রেখেছে। মোদি সরকারের মুখে ঝামা ঘষে দিয়ে এই সংস্থা ২০২১ সালে বলেছে, গণতান্ত্রিক সূচকে দু’ধাপ নেমে ভারতের স্থান হয়েছে ৫৩ নম্বরে। ভারত এক ‘নির্বাচনভিত্তিক স্বৈরতন্ত্রে’ পরিণত হয়েছে। এসব তথ্য, পর্যালোচনা অবশ্য শুনতে পান না দেশের ‘হীরক রাজা’। গণতন্ত্রকে দু’পায়ে মাড়িয়ে তিনি নিজের ঢাক পিটিয়েই চলেছেন!
15Months ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

কর্মস্থলে জটিলকর্মে অনায়াস সাফল্য ও প্রশংসালাভ। আর্থিক দিকটি শুভ। ক্রীড়াস্থলে বিশেষ সাফল্য।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৩.১০ টাকা৮৪.৮৪ টাকা
পাউন্ড১০৮.৬৪ টাকা১১২.১৯ টাকা
ইউরো৯১.৫৩ টাকা৯৪.৭৩ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
14th     September,   2024
দিন পঞ্জিকা