নিজস্ব প্রতিনিধি, বিধাননগর: কেবল ল্যান্ডিং পলিসি থেকে ডেটা সেন্টার, তথ্য-প্রযুক্তির উপযোগী পরিকাঠামোর আমূল উন্নয়ন হয়েছে। নিউটাউনে গড়ে উঠছে সিলিকন ভ্যালিও। সেখানে তথ্য-প্রযুক্তি ক্ষেত্রে ৭৫ হাজার কর্মসংস্থান হবে। উত্তর-পূর্ব ভারত এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার গেটওয়ে হল কলকাতা। তাই ইনফোসিসকে সামনে রেখে বাংলায় আরও বিনিয়োগের আহ্বান জানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার নিউটাউনে ইনফোসিসের ডেভেলপমেন্ট সেন্টার উদ্বোধনে তিনি বলেন, ‘আজ ঐতিহাসিক দিন—শুধু ইনফোসিসের নয়, সকলের জন্যই, এমনকী, আইটি ক্ষেত্রেও। কলকাতার এই ডেভেলপমেন্ট সেন্টার নতুন গৌরব সৃষ্টি করবে। এই সেন্টার অন্য কোম্পানিদেরও আকর্ষণ করবে।
আরও বিনিয়োগ হবে। উন্নয়ন হবে। শিল্প হবে। তার জন্য আপনারা যা চান, আমাদের সরকার সেই সমস্ত সুবিধা দেবে।’
নিউটাউন অ্যাকশন এরিয়া-৩ হাতিশালায় তৈরি হয়েছে ইনফোসিসের ৩ লক্ষ ২০ হাজার বর্গফুটের ডেভেলপমেন্ট সেন্টার। বিনিয়োগ করা হয়েছে ৪২৬ কোটি টাকা। এখানে চার হাজারের বেশি আইটি কর্মী কাজ করতে পারবেন। এদিনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের শুরুতেই বাংলায় রাজ্য সঙ্গীত গাওয়া হয়। অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী ছাড়া ছিলেন ইনফোসিসের চিফ ফিনান্সিয়াল অফিসার (সিএফও) জয়েশ সঙ্ঘরাজকা, মন্ত্রী সুজিত বসু, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, মুখ্যমন্ত্রীর প্রধান আর্থিক উপদেষ্টা অমিত মিত্র, রাজ্য পুলিসের ডিজি রাজীব কুমার প্রমুখ। এই প্রকল্পে সহযোগিতা করায় রাজ্য সরকার এবং মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন ইনফোসিসের সিএফও। ওইসঙ্গে রাজ্যের আইটি মানচিত্রকে আরও সমৃদ্ধ করে তোলার প্রয়াসকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।
শিল্পে শুধু সাহায্যের আশ্বাসই নয়, শিল্পতালুকে যাতে কোনোভাবেই অশান্তি না-ছড়ায়, তার আগাম বার্তাও দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। ইনফোসিসের এই ডেভেলপমেন্ট সেন্টারটি ভাঙড় এলাকার অন্তর্গত। মঞ্চের সামনেই বসেছিলেন ভাঙড়ের পর্যবেক্ষক তথা ক্যানিং পূর্বের বিধায়ক শওকত মোল্লা। তাঁর নাম ধরে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এখানে সমস্ত দিক দিয়ে সাহায্য ও সহযোগিতা করতে হবে। এবং সবসময়ের
জন্য। কোনও বিশৃঙ্খলা চলবে না। সকলে যেন শান্তিপূর্ণভাবে কাজ করতে পারেন, তা নিশ্চিত করতে হবে।’ তিনি পুলিস-প্রশাসনের উদ্দেশে বলেন, ‘এই এলাকাটি বিধাননগর, কলকাতা ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার সীমানায়। তাই কাজ করতে হবে সেইমতো সমন্বয় রেখেই।’
বাংলার তথ্য-প্রযুক্তি শিল্প সম্পর্কে বলতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এখানকার ওয়ার্ক কালচার দুর্দান্ত। বাংলায় ২২০০ আইটি কোম্পানি কাজ করছে। ‘আমরা ২২ আইআটি পার্কও করেছি। আমরা বেঙ্গল সিলিকন ভ্যালিও করছি। ২০০ একর জমিতে তা হবে। ২৭ হাজার কোটির বিনিয়োগ করা হচ্ছে। আইটি ক্ষেত্রে নিয়োগ হবে ৭৫ হাজার। ২৮টি কোম্পানি ইতিমধ্যেই জমি নিয়েছে’। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলা বাংলা গান্ধীজি, নেতাজি, রবীন্দ্রনাথের মাটি। বাংলার মেধা ভারতের মধ্যে ১ নম্বর। আমাদের বাংলার ছেলেমেয়েরা সারা পৃথিবীতেই দক্ষতার সঙ্গে, সুনামের সঙ্গে কাজ করছেন। আপনাদের এখানে চার হাজার মানুষ কাজ করবেন, এটা গর্বের ব্যাপার। এই নিউটাউন-রাজারহাট খুবই সুন্দর। নিউটাউনে অনেক নতুন বিশ্ববিদ্যালয় হয়েছে। ব্রডব্যান্ড পলিসি, ডেটা সেন্টার, সমুদ্র উপকূলে কেবল ল্যান্ডিং পলিসি সহ অনেক পরিকাঠামোর কাজ করেছি। ইনফোসিস এবং অন্য সংস্থাগুলিও এই সুবিধা নিতে পারবে। পরিকাঠামো আরও বাড়ছে। এখানে আগে লোডশেডিং হতো, এখন সেই সমস্যা নেই। দেউচা পাচামি হলে বাংলায় বিদ্যুৎ আরও সস্তা হবে।’