পুজো ২০২৪

উত্তরের ঐতিহ্যে দেবীপক্ষের সূচনা হয় কৈনাগত থেকেই
দীপককুমার রায় (উপাচার্য, রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়)

দেবীদুর্গা উত্তরবঙ্গের লোকায়ত ঐতিহ্যে দেবী নামেই পরিচিত। দেবী ঠাকুরবাড়ি, দেবীডাঙ্গা, দেবীহাটি, দেবীবাড়ি, দেবীনগর  ইত্যাদি  স্থান নামের মধ্যে নিহিত আছে দেবী শব্দের ব্যঞ্জনা। এই দেবী উত্তরের সাধারণ ঘরের কন্যা, কৈলাস থেকে নেমে আসেন মর্ত্যলোকে। বৃহত্তর রাজবংশী সমাজের প্রথা অনুসারে তিনদিন পুজো গ্রহণ করেন। মাত্রা অর্থাৎ নবমী এবং যাত্রা অর্থাৎ দশমীতে পুজো দেওয়ার রীতি। কেউ কেউ মনে করেন মাত্রাতে পুজো করেন বনেদি রাজবংশী সমাজ অর্থাৎ জোতদার, জমিদারেরা। যাত্রা বা দশমীতে পুজো করেন সর্বসাধারণ। লোকায়ত ভাবনায় দেবী তিস্তাবুড়ি বা মেচেনি রূপে পরিচিত। তিস্তা নদীর দেবী তিস্তাবুড়ি মেচেনির রূপধারণ করে লোকালয়ে নেমে আসেন। নারীকেন্দ্রিক ব্রতচারণায় মেচেনি গানে তার উল্লেখ আছে। শিব কোচপাড়ায় যান, কোচ রমনীদের সঙ্গে নৃত্যগীত পরিবেশন করেন। বাংলা মঙ্গলকাব্যে বারবার এই রূপ দেখতে পাওয়া যায়। আশ্বিনের দশমীর পরেও রাখাল বালকদের অনুরোধে আরেকদিন বিরাজ করেন উত্তরবঙ্গের লোকায়ত জীবনচর্চায় ভাণ্ডানী রূপে। রাজবংশী সমাজের ভাণ্ডানী পুজো দেবীরই পুজো, যা আদিতে তিস্তা নদীর পাড়ে রাখাল বালকেরা করেছিল বলে জানা যায়। জলপাইগুড়ি জেলার ময়নাগুড়ির গাবুরের বাড়ির ভাণ্ডানী আনুমানিক পাঁচশো বছরের পরিক্রমায় পরিচিতি লাভ করে বার্নিশ ভাণ্ডানী রূপে।
কৈনাগত থেকেই উত্তরের রাজবংশীর সমাজে দেবীপক্ষের সূচনা। ভাদ্রমাসে পূর্ণিমার পরে শুরু হয় ‘মরা চান’, মরা চান থেকে ‘গাজা চান’ অর্থাৎ অমাবস্যার শেষে দীর্ঘ ১৬ চাঁদের ১৬ কলায় পিতৃপুরুষের উদ্দেশ্যে তর্পণ যা কৈনাগত নামে পরিচিত। তারপরেই শেষ তর্পণ মহালয়াতে। ১৬ চাঁদের ১৬ কলায় কৈনাগত শুরু হলেই দেবীর আগমন বার্তায় জেগে ওঠে উত্তরের সমাজ জীবন ও সংস্কৃতি। অতঃপর দেবীপক্ষের সূচনা।
মহালয়া মূলত পিতৃপক্ষের স্মরণ, দেবীর আগমনে অশুভ শক্তির বিনাশ, শুভ শক্তির যাত্রা। তবে দেবীর আগমন বার্তা উঠে আসে কৈনাগতের মধ্যে দিয়ে। লোকবিশ্বাস ১৬ কৈনার সঙ্গে দেবীও মর্ত্যে নেমে আসেন। কোচরাজা বিশ্বসিংহ সরলভাঙ্গা নদীর পাড়ে ফড়িং বলি দিয়ে দেবীর পুজো করেন বলে দরংরাজবংশাবলীতে উল্লেখ আছে। রাজোপাখ্যান অনুযায়ী আনুমানিক ১৫১০সালে বিশু বা বিশ্বসিংহ দেবীর পুজো করেন। সেই সূত্র ধরে সিদলী-বিজনীর দেবীপুজো, বেলতলার দেবী, কোচবিহারের বড়দেবীর পুজো পরম্পরা অনুযায়ী চলে আসছে।
অন্যদিকে জিতুয়া অষ্টমী পালিত হয় ভাদ্রমাসে জিৎবাহনের পুজো উপলক্ষ্যে। জিতুয়ার পরে ৯ কন্যার ৯ ঘটি পিণ্ড দানের রীতি। আবার কৈনাগত  থেকে ১৬ চানে ১৬ ঘটি শ্রাদ্ধ করার রীতি।  পরম্পরাগতভাবে প্রচলিত, শ্রাবণ মাসের ১২ তারিখ থেকে ভাদ্র মাসের ১৩ তারিখ সিং বিয়ে করে ১৬ কন্যাকে নিয়ে ফিরে আসে। সিং আদতে দেবীর আগমন বার্তাকে জানিয়ে দেয়। দেবী পক্ষের পূর্বেই ১৬ কন্যার আগমন দেবীপক্ষের আগমনকে নির্দিষ্ট করে দেয়। লোকবিশ্বাস, সিংয়ের ১৬ কন্যার সঙ্গে বিভিন্ন প্রকারের পাখি মর্তে চলে আসে। তারা ১৬ কন্যার ভার বহন করে তাই পাখিদের মাথায় এই সময় চুল থাকে না। ১৬ দিন ধরে পিতৃ শ্রাদ্ধের পাশাপাশি মহান আলয়ে দেবীর আগমন ঘটে। দেবীর আগমন মানেই এই সময়ে পালাটিয়ার দলপতিরা দেবতার কাছে আত্মসমর্পণ করেন। জীমূত বাহন দেবতার কাছে তাদের প্রার্থনা জানায়। জলপাইগুড়ি জেলার বেলাকোবার গোয়ালডাঙ্গির ডাঙ্গায় প্রতিবছর পালাটিয়া দলের দলপতিরা একত্র হয়ে এই লোকাচার পালন করে। পালাটিয়া, চোরচুন্নি পালা গানের মহড়া দেয় দেবীপক্ষের সময়। কৈনাগতে কন্যার আগমন বার্তা, পিতৃপুরুষের তর্পণ, দেবীর মহান আলয়ে আগমন উত্তরের দেবী পক্ষের পরম্পরা।
মায়ের চক্ষুদান.... জলপাইগুড়িতে পিনাকী শীলের তোলা ছবি।
8d ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

ধর্মকর্মে সক্রিয় অংশগ্রহণে মানসিক তৃপ্তি ও সামাজিক সুনাম। পেশাদার শিল্পীদের শুভ সময়।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৩.১৫ টাকা৮৪.৮৯ টাকা
পাউন্ড১০৮.২৫ টাকা১১১.৮০ টাকা
ইউরো৯০.৭১ টাকা৯৩.৮৮ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
দিন পঞ্জিকা