পুজো ২০২৪

 মহালয়া
নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী

ছোটবেলায় যখন পূর্ববঙ্গের গ্রাম্য জীবন কাটিয়েছি, তখন ঘরের পাশেই নদী বয়ে যেত। পিতাঠাকুরকে দেখতাম—তিনি প্রতিদিনই নদীর কোমর-জলে দাঁড়িয়ে তর্পণ করতেন। সেখানে মহালয়ার দিনটা আমার কাছে পৃথক কিছু ছিল না। তবে বিশেষ এইটুকু দেখতাম যে, এই দিনটাতে জ্ঞাতিগুষ্টির আরও কয়েক জন নদীতে নেমে তর্পণ করতেন। কিন্তু এই পার্থক্যের কারণটা আমার সেই ছোটবেলায় কিছু বুঝিনি, এমনকী মহালয়া নামটাও যে আমার কাছে খুব পরিচিত ছিল, তাও নয়। কিন্তু পূর্ববঙ্গ থেকে সেই কলকাতায় এলাম, তখন আমার পিতার মনে একটা অদ্ভুত আনন্দ দেখলাম—কেন না, তিনি গঙ্গায় তর্পণ করতে পারছেন। ব্যাপারটা আরও জমে উঠল যখন আমার খুড়তুতো দাদা আমাদের বাড়িতে এসে আমাদের বাড়ির বড় রেডিওর একটা জাল অ্যান্টেনা ছাদে লাগাতে গেলেন। তিনি বললেন কাল মহালয়া, ভোর ৪টের সময় হবে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের ‘মহিষাসুরমর্দিনী’।
আমি যতদূর জানি— বীরেন্দ্রকৃষ্ণের মহিষাসুরমর্দিনী বেতারে আসার দিনটি নিয়েও পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়েছিল। কখনও পুজোর আগে ষষ্ঠীর দিন, কখনও পঞ্চমীর দিন বীরেন্দ্রকৃষ্ণ তরঙ্গায়িত হয়েছেন আকাশবাণীতে, কিন্তু অবশেষে মহালয়ার দিনটা ছিল মাস্টার-স্ট্রোক— এতটাই এটা সময়োচিত হয়ে উঠেছিল, যাতে একটি বিরহ-তিথি পর্যবসিত হতো উৎসবের অন্বেষণায়। অবশ্য অন্য তিথিগুলির থেকে মহালয়া তিথির একটা তফাতও আছে। পিতা-মাতা কিংবা যাঁরাই প্রয়াত হয়েছেন, তাঁদের শ্রাদ্ধ, সপিণ্ডকরণের পরের বছর থেকে নির্দিষ্ট প্রয়াণ-তিথিতে তর্পণ করাটা শাস্ত্রমতে বিধেয় ছিল। এতে যে বাড়িতে প্রয়াতজনের সংখ্যা বেশি ছিল সেখানে অধস্তন বংশধরের পক্ষে অনেকগুলি তিথিতে স্নান-তর্পণ করাটা অনেক সময়েই বেশ কঠিন হয়ে পড়ত। এইসব সমস্যায় মহালয়া তিথিটা ছিল শাস্ত্রীয় কৃপা-করুণার নিঃশর্ত ছাড়পত্র। মহালয়া তিথিতে সমস্তরকম শ্রাদ্ধ-তর্পণ করা যায়। যে মানুষ কোনও নির্দিষ্ট তিথিতে তর্পণ করার সময় সুযোগ পায় না, সে মহালয়ার তিথিতে তর্পণ করে দোষ মুক্ত হতে পারে। এটাই মহালয়ার বিশেষত্ব।
আমি বারবার বলবার চেষ্টা করেছি যে, সেকালে যে সব স্মার্ত বিধান চালু হয়েছিল, তার বেশির ভাগই তৎকালীন সমাজের ইচ্ছা এবং মানসিকতা থেকেই তৈরি হয়েছিল। শ্রাদ্ধ মানে শ্রদ্ধা প্রকাশ করা। কিন্তু শ্রদ্ধা প্রকট করে তোলার জন্য যে ঘটা ও আড়ম্বর শ্রাদ্ধের মধ্যে তৈরি হয়েছিল, সেটা বড়লোক যজমানের আড়ম্বরী ভাবনা। আর ব্রাহ্মণের দান লাভের ইচ্ছায় তৈরি হয়েছিল। আর সাধারণ ক্ষেত্রে পিতার জমি জিরেত এবং সম্পত্তির উত্তরাধিকার লাভও কিন্তু অনেক সময়েই ঋদ্ধ শ্রাদ্ধকার্যের অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। এই শ্রাদ্ধকার্যের পরম্পরা হল সপিণ্ডকরণ এবং তারপর থেকে পিতামাতার মৃত্যু-তিথি পালন। যদিও এই তিথিতেও একটা শ্রাদ্ধকর্ম করাটাই বিধেয় কিন্তু উত্তরাধিকারীর সময়, অর্থ ও স্মৃতির বিড়ম্বনায় শ্রাদ্ধকর্মটা যেহেতু আর করা হয়ে ওঠে না, তাই তর্পণ করার পথটা প্রশস্ত হয়ে উঠেছে খুব তাড়াতাড়ি।
তর্পণ মানে তৃপ্ত করা, খুশি করা। এখনকার দিনে কয়েক বছর আগে প্রচলিত হয়েছে ‘ফাদার্স ডে’ আর ‘মাদার্স ডে’। যাঁরা বেঁচে থাকতেই বাবা-মাকে ভুলে যাচ্ছেন, তাঁদেরই জন্য এই বিশ্ব ব্যবস্থা চালু হয়েছে। আমাদের বিশ্বাস, তর্পণের সময় প্রয়াত পিতা-মাতা নেমে আসেন ছেলের হাতের জল পাওয়ার জন্য। এই যে তর্পণ, যা প্রতিদিন বিধেয়, সেটা যদি প্রতিদিন করা সম্ভব না হয়, তাহলে সেই বাস্তব বুঝেই বছরে পুরো পনেরোটা দিন ধার্য করেছেন আমাদের শাস্ত্রকারেরা তার নাম পিতৃপক্ষ এবং সেই পিতৃপক্ষেরও কিন্তু একটা অলৌকিক পরিকল্পনা আছে। ধারণা করা হয় যে, জীবিতজনের তিন প্রয়াত পুরুষদের তিনটি জেনারেশন এই পিতৃলোকে থাকেন, তাঁদের আগের সব ‘জেনারেশন’-কে স্বর্গে পাঠিয়ে দেন যমরাজ। কেন না পিতৃলোকের দেখভালের ব্যবস্থা যমরাজের হাতে। পিতৃলোকের এই তিন পুরুষের খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা চমৎকার। পিতামাতার উদ্দেশে আমরা যে পিণ্ডদান করি তাতেই তাঁদের খাওয়া চলে। খেয়াল করে দেখুন, সদ্য প্রয়াত পিতা-মাতাদের উদ্দেশে আমরা যে শ্রাদ্ধ করি, তার এক বছর হল সপিণ্ডকরণ। আমাদের এক বছর পিতৃলোকের একদিন—অর্থাৎ বার্ষিক সপিণ্ডকরণের দিন তাঁর অন্ন-পান দিলাম আমরা। এইভাবে প্রতিটি বার্ষিক শ্রাদ্ধে এই একদিনের অন্ন-পান চালিয়ে গেলে পিতা-মাতারা পরম সুখে আশীর্বাদ করতে থাকেন। তার মধ্যে বাড়তি খাবারও জুটে যায়—অন্নপ্রাশন, উপনয়ন, বিবাহের নান্দীমুখ শ্রাদ্ধে।
লক্ষণীয়, এই সমস্ত প্রকার শ্রাদ্ধতে পিতা-মাতা সহ পূর্ববর্তী তিন পুরুষকেই শ্রাদ্ধপিণ্ড দান করতে হয়, দিতে হয় জল। তাহলে এই যুক্তিটাই সার্থক হল যে, পূর্ববর্তী তিন পুরুষই পিতৃলোকে থাকেন, যাঁদের থাকা-খাওয়ার সুব্যবস্থা করেন সুশাসক যমরাজ। যদিও এই খাওয়া-দাওয়ার ‘স্পনসরশিপ’ প্রয়াত বংশপুরুষদের উত্তরাধিকারী জীবিত বংশধরদের হাতেই। ফলত এই যে পিতৃলোকের শ্রাদ্ধতর্পণ সেটার অন্তিম স্থান হল মহালয়া। যার সঙ্গে চোদ্দোটি পিতৃপক্ষের দিন জুড়ে আছে।
মহালয়া তিথির এই তাৎপর্য ও মাহাত্ম্য তার আগের চোদ্দো দিনের মধ্যেও অনুসৃত হয়েছে। এই প্রসঙ্গে একটা কৌতুকপ্রদ কাহিনি না বললেই নয়। কথিত আছে— মহাভারত মহাকাব্যের বিখ্যাত চরিত্র কর্ণ, যিনি দানের সময় কাউকে ফেরাতেন না বলে দানবীর কর্ণ নামে খ্যাত হয়েছেন। সেই কর্ণ যুদ্ধকালে অর্জুনের হাতে মৃত্যুবরণ করার পর বীরের সঙ্গতি লাভ করে স্বর্গে গেলেন। স্বর্গে তাঁকে সাভিনন্দনে বরণ করে নিলেন স্বয়ং দেবরাজ ইন্দ্র, মতান্তরে যম। অভিনন্দন-আবাহনের পর্ব শেষ হলে কর্ণকে খেতে দেওয়া হল থালা সাজিয়ে।
কিন্তু সে থালায় খাদ্য হল সোনার তৈরি নানা অলঙ্কার, হীরে-মতি, চুনি-পান্না। কর্ণ এই অদ্ভুত বিপ্রতিপত্তি দেখে দেবরাজের কাছে জিজ্ঞাসু হতেই তিনি বললেন, দেখ বাছা! তুমি এতদিন যত দান দিয়েছ ব্রাহ্মণদের, সেখানে অন্ন-পান, খাবার জিনিস কাউকে কিছু দাওনি, সেই কারণে খাবার হিসেবে তোমাকে সোনাদানা, মণিরত্ন দিয়েছি। বিশেষত পিতৃমাতৃকুলের কারও উদ্দেশে তুমি একটা পিণ্ড পর্যন্ত দাওনি, ফলে তোমার খাবার থালায় শুধু দানের জিনিস, কোনও অন্ন-পান নেই।
কর্ণ বললেন, দেখুন, আমি তো সারা জীবন জানতামই না যে, আমার পিতা-মাতা কে, আমার পিতৃপুরুষের তালিকাতেই বা কারা আছেন? সেখানে আমি পিণ্ড দেব কার উদ্দেশে। ইন্দ্র বললেন, বেশ তো, এখন তো তুমি সব জানো। আর তুমি এত বড় দানবীর বলেই তোমাকে বলছি— তোমাকে আমরা পনেরো দিনের জন্য আবার মর্তে যাওয়ার অনুমতি দিচ্ছি। এই প্রতিপদ থেকে মহালয়া অমাবস্যা পর্যন্ত সময় ধরে তুমি পিতৃপুরুষের উদ্দেশে পিণ্ড দাও। তারপর মহালয়ার পরে ফিরে এসো, তখন এখানেও তোমার সুব্যবস্থা হবে।
কর্ণ ফিরলেন ধরণীতে। পনেরো দিন ধরে পিতৃমাতৃগণের উদ্দেশে শ্রাদ্ধ-তর্পণ করলেন, তারপর যখন ফিরেন স্বর্গলোকে, তখন ইন্দ্র বললেন, তোমার এই পিতৃমাতৃ কর্মের পনেরো দিন এখন থেকে ‘পিতৃপক্ষ’ বলে জগতে পরিচিত হবে এবং এখন তোমার আবাস স্থান হোক এই পিতৃলোক।
আজ থেকে বছর কুড়ি আগের কলকাতা হাইকোর্টে, সমস্ত ইচ্ছুক অফিস কর্মচারীদের জন্য নোটিস পড়ত— যাঁরা ‘Tarpanist’ আছেন, তাঁরা এই চোদ্দো দিন দিনের কোনও একটা সময় একটা ঘণ্টা ছুটি পাবেন পাশের গঙ্গায় তর্পণ সেরে আসার জন্য। অথবা এক ঘণ্টা দেরিতে অফিসে আসতে পারবেন। আর মহালয়ার দিন ছুটি— সেটা পুজোর ‘প্রিলিউড’ হিসেবে নয়, পিতৃতর্পণ করবেন বলেই ছুটি। মহালয়ার গুরুত্ব নাকি এটাই যে, ভগবান ব্রহ্মার নির্দেশে আমাদের প্রয়াতজনেরা সূক্ষ্ম দেহে নেমে আসেন মর্তভূমির পরিমণ্ডলে। এই দিন প্রয়াত পিতা-মাতাদের বিশাল (মহান) সমাবেশ (আলয়, আবাস) অন্তরীক্ষে তৈরি হয় বলেই এদিনটার নাম ‘মহালয়া’। তিথি শব্দটি স্ত্রীলিঙ্গ বলে তিথির বিশেষণে ‘মহালয়’ স্ত্রীলিঙ্গে ‘মহালয়া’ বলে পরিচিত। মহালয়াতে শ্রাদ্ধ করাটা এতই পুণ্যের যে, এই শ্রাদ্ধে নাকি গয়ায় গিয়ে শ্রাদ্ধ করার ফল মেলে। কিন্তু মহালয়ার সার্বিক বিশিষ্টতা হল— তর্পণ। পিতৃপক্ষের অন্তিম তর্পণ।
মহালয়া তিথির আসল স্বরূপ হল অমাবস্যা। অমাবস্যা পিতৃকার্যের জন্য সবচেয়ে প্রশস্ত তিথি। এমনিতে যেদিন শ্রাদ্ধশান্তির দিন পড়ে, তখন যদি প্রবাসী ছেলে বাড়িতে কোনও মতে উপস্থিত হতে না পারে, কিংবা অন্য কোনও অনিবার্য কারণে সে শ্রাদ্ধানুষ্ঠান না করতে পেরে থাকে, তাহলে তিথি-পরবর্তী অমাবস্যায় অথবা যে কোনও অমাবস্যায় পিতৃ-মাতৃ কার্যের সাধারণ নিয়ম আছে।
সেখানে পিতৃপক্ষের শেষ দিনে এই মহালয়া—চিহ্নিত অমাবস্যা, এই তিথিতে শ্রাদ্ধ-তর্পণের ফল অধস্তন পুরুষেরা যেন প্রত্যক্ষ শান্তির মহিমায় অনুভব করেন। বহু মানুষ যদি একত্রে একই বিরহ অনুষ্ঠান করে, তাহলে শ্রাদ্ধ-তর্পণের শান্তিটুকু সর্বজনীন বিশ্বাসে পরিণত হয়। আর তর্পণ এমনই এক অনুষ্ঠান, যেখানে সামান্য পরিশ্রম-শাধিত কর্মও মহালয়ার মন্ত্রগুণে অসামান্য হয়ে ওঠে। তর্পণ মানে তো তৃপ্ত করা, এই তৃপ্তির উপাদান সামান্য তিল আর জল। কিন্তু মহালয়ার দিন পিতৃ-মাতৃপুরুষের প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন তর্পণটুকু যেন ব্যক্তিকেন্দ্র থেকে বিশ্বজনীন হয়ে পড়ে।
একটা তর্পণের নাম হল ভীষ্মতর্পণ। আমরা অনেকেই জানি যে, কুরুকুলে পিতামহ ভীষ্ম নানান রাজনৈতিক সমস্যায় বিবাহই করতে পারেননি, সন্তান লাভ তো দূরের কথা। তাঁর বংশ নেই, সন্তান নেই অথচ তাঁকে ভালোবাসার লোক কম ছিল না। তাঁদের মুখে ভীষ্মের জন্য যে তর্পণটুকু চিহ্নিত হয়েছে, মহালয়া তিথিতে সেই তর্পণ একটা বৈশিষ্ট্য তৈরি করে। এদিন বাবা-মায়ের তর্পণ শেষ করেই কাকা-জ্যাঠা, শ্বশুর-শাশুড়ি, মামাতো-খুড়তুতো দাদা, শালা-সম্বন্ধী সকলের জন্য ভীষ্মতর্পণ করা যায়।
সাংখ্য দর্শনের মতে, প্রকৃতি থেকে এই জগৎ সৃষ্টির প্রথম ব্যক্ত রূপ হলেন ব্রহ্মা। যাঁর দার্শনিক নাম মহান। এই ‘মহান’ থেকেই অহংকার, মন, পঞ্চভূত, ইন্দ্রিয় এই সবকিছু একে একে সৃষ্টি হয়। তেমনই যখন কারও মৃত্যু হয় বা লয় হয় তখন বিপরীত প্রক্রিয়ায় মন সহ সমস্ত ইন্দ্রিয় একে একে পঞ্চভূতে লীন হয়। 
পিতৃপক্ষের শেষ এই দিন মহালয়া দুর্গাপুজোর সঙ্গে যুক্ত কোনও মহোৎসব নয়। বরঞ্চ এটা পিতৃপুরুষের মহোৎসব—কোনও সময় তর্পণ না করলেও মহালয়ার তর্পণে সর্বসিদ্ধি।
5d ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

ধর্মকর্মে সঞ্চীয় অংশগ্রহণে মানসিক তৃপ্তি ও সামাজিক সুনাম। পেশাদার শিল্পীদের শুভ সময়।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৩.১৩ টাকা৮৪.৮৭ টাকা
পাউন্ড১০৮.৫০ টাকা১১২.০৬ টাকা
ইউরো৯১.০৪ টাকা৯৪.২২ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
5th     October,   2024
দিন পঞ্জিকা