সুব্রত ধর, শিলিগুড়ি: রাস্তার দু’পাশে দালান বাড়ি। আবাসন। এবার পুজোয় এহেন কলেজপাড়ায় তৈরি হচ্ছে শান্তিনিকেতনের আদলে গ্রাম। রবীন্দ্রনাথের মূর্তি, বাঁশ, কাঠ, প্লাইবোর্ড ও রং দিয়ে সেই গ্রাম গড়ছে কলেজপাড়া পুজো কমিটি। তাদের থিমের নাম-‘লাল মাটির, লালনকথা’। অন্যদিকে, নারী স্বাধীনতা নিয়ে পুজো মণ্ডপ তৈরি হচ্ছে সুভাষপল্লিতে। বাঁশ, খড়, তালপাতা, মাটির হাঁড়ি, কাঠের বাক্স দিয়ে মণ্ডপ নির্মাণ করা হচ্ছে। পুজো পরিচালনায় সঙ্ঘশ্রী। বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবিতাকে হাতিয়ার করেই তাদের এই ভাবনা। থিমের নাম- ‘থাকব না কো বদ্ধ ঘরে, দেখব এবার জগৎটাকে’। সংশ্লিষ্ট দু’টি পুজো মণ্ডপই পরিবেশবান্ধব উপকরণ দিয়ে গড়া হচ্ছে।
শিলিগুড়ি শহরের অন্যতম অভিজাত এলাকা কলেজপাড়া। এখানেই মেয়র গৌতম দেবের বাড়ি। তিনি কলেজপাড়া পুজো কমিটির অন্যতম পৃষ্ঠপোষক। গত বছর পুজোয় তারা ‘আনন্দ মেলা’ থিম করে চমক দিয়েছিল। এবার তারা শান্তিনিকেতনের গ্রাম তৈরি করছে। বাঁশ, কাঠ, প্লাইবোর্ড দিয়ে মণ্ডপের কাঠামো তৈরি করা হচ্ছে। মণ্ডপে থাকবে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মূর্তি, একাধিক মাটির মডেল, বাউল শিল্পীর ছবি। মণ্ডপের ভিতরের ও বাইরের দেওয়ালে টেরাকোটার নকশা, রঙের কাজ দেখা যাবে। পুজো কমিটির কোষাধ্যক্ষ সায়ন চৌধুরী বলেন, এবার পুজোর ৭৪ তম বর্ষ। মণ্ডপে শান্তিনিকেতনের পঠন-পাঠনের পরিবেশ, সোনাঝুড়ির হাটের দৃশ্য, বাউলগানের পরিবেশ নিখুঁতভাবে ফুটিয়ে তোলা হবে। এজন্যই থিমের নামকরণ করা হয়েছে- ‘লাল মাটির, লালনকথা’। যা পরিকল্পনা ও রূপায়নে স্থানীয় শিল্পী জয়দীপ সরকার। মণ্ডপে থাকবে টেরাকোটার কাজের তৈরি দশভুজা। পরিবেশবান্ধব এই মণ্ডপে দর্শনার্থীদের কিছুক্ষণ দাঁড়াতেই হবে। এবার পুজোর বাজেট সাড়ে ১২ লক্ষ টাকা।
এর পাশেই আরএকটি অভিজাত এলাকা সুভাষপল্লি। শহরের আর একটি থিম পুজো হয় এখানে। পরিচালনায় সঙ্ঘশ্রী ক্লাব। গত বছর পুজোয় তারা কাচ দিয়ে ‘ভাঙতে ভাঙতে সৃষ্টি’ এই থিমে মণ্ডপসজ্জা করে নজর কেড়েছিল। বেশকিছু পুরস্কারও পায়। এবার তারা বাঁশ, কাঠ, খড়, তালপাতা, একাধিক মাটির মডেল, পাখির মডেল দিয়ে মণ্ডপসজ্জা করছে।
মণ্ডপশিল্পী তাপস পাল বলেন, খড়ের গেট, বিশাল খাঁচা, গাছ, হাঁড়ি দিয়ে সিলিং তৈরি করা হবে। ডানাওয়ালা মেয়ের মডেল, অসংখ্য পাখির মডেল, বাসা থাকবে। এজন্য ৩৫ কুইন্টাল খড়, ৮০০ মাটির হাঁড়ি ও ৩৫০টি তালপাতা লাগবে। কাঠের বাক্স দিয়ে তৈরি করা হয়েছে ৭০টি পাখির ঘর। ক্লাবের সম্পাদক সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, স্বাধীনভাবে পাখিরা উড়ে বেড়াচ্ছে। তাদের মতো একটি মেয়েও স্বাধীনভাবে উড়তে চাইছে। অর্থাৎ, নারী স্বাধীনতার বার্তা দিতেই পুজোর ৫৮ তম বর্ষে এই ভাবনায় মণ্ডপ গড়া হচ্ছে। এজন্যই থিমের নাম- ‘থাকব না কো বদ্ধ ঘরে, দেখব এবার জগৎটাকে’। মণ্ডপে মানানসই আলো ও আধুনিক প্রতিমা থাকবে। পরিবেশবান্ধব এই মণ্ডপ এবার দর্শনার্থীদের ভাবিয়ে তুলবে।