প্রচ্ছদ নিবন্ধ

হারিয়ে যাওয়া পেশার খোঁজে
কালীপদ চক্রবর্তী

 কিছুদিন আগের কথা। পাড়াতুতো দাসদা এসে হাজির। বাড়িতে নাকি ইঁদুরের ভয়ানক উপদ্রব। অবস্থা এমনই যে তাঁকে বাড়ি পর্যন্ত বিক্রি করতে হতে পারে। শুনে ইঁদুর ধরার কল পাতা থেকে আধুনিক নানা ওষুধ ব্যবহারের পরামর্শ দিলাম। হতাশ দাসদা মাথা নেড়ে জানালেন, সব চেষ্টাই করা হয়েছে। ফল মেলেনি। এখন যদি হ্যামলিনের সেই বাঁশিওয়ালার খোঁজ পাওয়া যেত, মনে হয় ভালো হতো। হাসি চেপে বললাম, ‘উপযুক্ত পারিশ্রমিক না পাওয়ায় সেই বাঁশিওয়ালা শুধু ইঁদুর নয়, শহরের শিশুদেরও সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলেন। তবে সে সব বহু আগের কথা। সেই বাঁশিওয়ালা তো আর নেই। এমনকী আগে যাঁরা ইঁদুর ধরার পেশায় নিযুক্ত ছিলেন, তাঁরাও নেই।’ শুনে দাসদা অবাক—‘বলেন কি মশাই! ইঁদুর ধরাও একটা পেশা ছিল নাকি?’ জানানো গেল, পৃথিবীতে এমন অনেক কিছুই ছিল, যা এখন আর দেখা যায় না। কালের গর্ভে বহু ঐতিহ্য, সংস্কৃতির সঙ্গেই হারিয়ে গিয়েছে অনেক পুরনো পেশাও।
ইঁদুর ধরা
 পরমাণু অধ্যায় পেরিয়ে চোখ রাঙাচ্ছে রাসায়নিক, জৈব অস্ত্র। মাথাচাড়া দিয়েছে উষ্ণায়নের মতো সমস্যাও। এসবের অনেক আগে ইঁদুরের আধিপত্যই ছিল মানবজাতির জন্য বড় হুমকি। অনেকের শুনতে হাস্যকর লাগলেও এটা সত্যি যে একসময় রক্তপিপাসু ইঁদুরকে বেশ ভয়ই পেত মানুষ। সেই সব ইঁদুরগুলি ছিল বেশ বড় আকারের। অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষদিকে ব্রিটেনে প্রাদুর্ভাব ঘটে অদ্ভুত বড় আকারের ধূসর বা ‘চিংড়ি’ ইঁদুরের। নামে ‘চিংড়ি’ হলেও সেই ইঁদুরগুলি ছিল অত্যন্ত ভয়ঙ্কর। মাঝে মধ্যে ছোট বাচ্চাদের হাত-পা পর্যন্ত খেয়ে ফেলত তারা। বিপদ বাড়তে বাড়তে শেষ পর্যন্ত তা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে ইঁদুর ধরতে পেশাদারদের নিয়োগ করতে শুরু করেন ব্রিটেনের বাসিন্দারা। শুরু হয় ইঁদুরপিছু অর্থ দেওয়া। এই পেশার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা মূলত ছিলেন সমাজের নিচুতলার মানুষ। অনেকে মনে করেন, সেই সময়ে দরিদ্রদের অনেকেই রাগ প্রশমিত করার জন্য ইঁদুর মারাকে পেশা হিসেবে বেছে নিত। তবে ইঁদুর মারার জন্য তাঁরা একেবারে প্রথাগত পদ্ধতি মেনে চলতেন। কিন্তু একদল প্রশিক্ষিত পুরুষও ছিলেন এই পেশায়। ইঁদুর নিধনে তাঁদের দক্ষতা ছিল দেখার মতো। ইঁদুর ধরা ও মারার ক্ষেত্রে বিশেষ ধরনের কাঁচি ও যন্ত্র ব্যবহার করতেন তাঁরা। ইঁদুরের কামড় থেকে সংক্রমণের ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও অনেকেই এই পেশাকে কেরিয়ার হিসেবে বেছে নিতেন। শুধু তাই নয়, এই পেশার গুরুত্ব এতটাই বেড়েছিল যে রানি ভিক্টোরিয়ার অফিসে জ্যাক বেকেট নামে এক ব্যক্তিকে ‘ইঁদুর ধরা’ বিশেষজ্ঞ হিসেবে নিযুক্ত করা হয়েছিল।
ল্যাম্প লাইটার
 এবার আসি অন্য একটি পেশার দুনিয়ায়। বৈদ্যুতিন আলোর আবিষ্কারের আগে রাজপথে পোস্টে পোস্টে তেলের বাতি ব্যবহার করা হতো। সেই ল্যাম্প বা বাতিগুলিতে তেল দেওয়া এবং জ্বালানোর জন্য নিযুক্ত করা হয়েছিল একদল  মানুষকে। তাঁরা ল্যাম্প লাইটার নামে পরিচিত। এই পেশার সঙ্গে যুক্তদের কাজ ছিল প্রদীপগুলি যথাসময়ে জ্বালিয়ে দেওয়ার। পাশাপাশি সময়ে সময়ে বাতিগুলিতে তেল ভরার দায়িত্বও ছিল তাঁদের উপর। সরকারের তরফে তাঁরা সাধারণত একটি মাসিক চুক্তিতে বেতন পেতেন। বৈদ্যুতিন আলোর উদ্ভাবনের সঙ্গে সঙ্গে ল্যাম্প লাইটারদের এই পেশা পৃথিবী থেকে হারিয়ে গিয়েছে।
ঘুম ভাঙানিয়া
 ঘুমোতে আমরা অনেকেই ভালোবাসি। ঘুমের চেয়ে আরামদায়ক আর কি বা আছে! অবশ্য দেরি করে ঘুম থেকে উঠলে অনেক কাজেরই দেরি হয়ে যায়। বাধ্য হয়ে অ্যালার্ম দিতে হয় মোবাইলে, ঘড়িতে। কিন্তু অ্যালার্ম দেওয়ার সুযোগ যখন ছিল না? ডেকে দেওয়ার কেউ না থাকলে উঠতে তো দেরি হতো নির্ঘাৎ। এই ভাবনা থেকেই জন্ম হয়েছিল একটি পেশার। সঠিক সময়ে মানুষকে জাগানোর দায়িত্ব ছিল কিছু মানুষের কাঁধে। কীভাবে কাজ করতেন তাঁরা? সেই পদ্ধতি ছিল ভারী অদ্ভুত। বাড়ি বাড়ি গিয়ে জানলা বা দরজায় টোকা দিয়ে মানুষকে জাগিয়ে তুলত তাঁরা। এর জন্য ব্যবহার করতেন হালকা বাঁশ বা লাঠি। যতক্ষণ না ওই ব্যক্তি জেগে উঠছেন, ততক্ষণ পর্যন্ত জানলায় টোকা দেওয়ার কাজ চালিয়ে যেতেন ‘নকার’। সপ্তাহান্তে এই কাজের জন্য কিছু অর্থ পেতেন ‘নকার’রা। সময়ে মানুষ যাতে নিজের কাজে যেতে পারেন, সেই কারণে শিল্পবিপ্লবের সময় এই পেশার জন্ম। উৎপত্তিস্থল ব্রিটেন হলেও পরবর্তীতে তা ছড়িয়ে পড়ে আয়ারল্যান্ডেও।
বরফ সংগ্রহ
 ফ্রিজ আবিষ্কারের আগের কথা। সেই সময় খাবার সংরক্ষণের জন্য বরফ ব্যবহার করত মানুষ। আসলে তারা বুঝেছিল, ভবিষ্যতের জন্য খাবার জমিয়ে রাখা অত্যন্ত জরুরি। তার জন্য প্রয়োজন সংরক্ষণ। আর সেই কারণেই হিমায়িত হ্ব্রদ থেকে তুষার সংগ্রহ করতেন একদল মানুষ। বরফগুলিকে বিভিন্ন ধরনের বাক্সে ভরে তাঁরা সেগুলি পৌঁছে দিতেন বাড়ি বাড়ি। দৈনন্দিন বিভিন্ন কাজের পাশাপাশি বাণিজ্যিক প্রয়োজনেও তা ব্যবহার করা হতো। বরফ কাটার কাজটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় অনেকেই এই কাজকে বিপজ্জনক পেশা হিসেবে বিবেচনা করতেন। ফ্রিজ আবিষ্কারের পর ধীরে ধীরে এই চাহিদা কমে যায়।
বিপদ-বার্তা প্রেরক
 শত্রুসেনার বিমান হানা দিচ্ছে জানাতে রেডার ব্যবহার করা হয়—একথা সবাই জানে। কিন্তু যখন এই অত্যাধুনিক রেডার আবিষ্কার হয়নি, তখন ব্যবহার করা হতো অ্যানালগ রেডার। শব্দ-নির্ভর বিশেষ যন্ত্র ও আয়না ব্যবহার করে ও ইঞ্জিনের আওয়াজ শুনে বিমানের অবস্থান নির্ণয় করা হতো। পরবর্তীতে এই ধরনের রেডারের সঙ্গে যাঁরা যুক্ত ছিলেন, তাঁদের পেশাও বর্তমানে বিলুপ্ত।
মৃতদেহ সংগ্রহকারী
 ১৮-১৯ শতকে ব্রিটেন, আমেরিকায় মানবদেহের গবেষণা ও শিক্ষার জন্য মৃতদেহের চাহিদা ছিল খুব বেশি। কিন্তু আইনের রক্তচক্ষুতে সরবরাহ খুব কম ছিল। সেই সময় একদল মানুষ কবরস্থান থেকে তাজা দেহ চুরি করে মেডিক্যাল কলেজগুলিতে ব্যবচ্ছেদের জন্য বিক্রি করত। সে কাজে বাধা পেলে এরা প্রয়োজনে খুন করতেও পিছপা হতো না। ১৮৩২ সালে অ্যানাটমি আইন পাশের পর ওয়ার্ক-হাউস এবং হাসপাতাল থেকে দাবিহীন মৃতদেহ ব্যবচ্ছেদের জন্য ব্যবহার করার অনুমতি দেওয়া হয়। এরপর এই পেশাও বন্ধ হয়ে যায়।
জোঁক জোগাড়
 আচ্ছা, কখনও ভেবেছেন কি যে একসময় জোঁক সংগ্রহ করাও ছিল একটি পেশা! উনিশ শতকে চিকিৎসায় ব্যবহার করার জন্য জলাভূমি এবং পুকুর থেকে জোঁক সংগ্রহ করানো হতো। সেই সময় মানুষ বিশ্বাস করতেন, জোঁক দিয়ে শরীরের খারাপ রক্ত বের করে আনা যায়। রোগ নিরাময়ও ঘটে। এই পেশায় সাধারণত বেশি নামতেন দরিদ্র মহিলা বা ছোটরা। সংগ্রহ করার পদ্ধতিও ছিল অদ্ভুত। যে সব জলাশয় বা পুকুরে জোঁক আছে, সেখানে তারা নামতেন। জোঁক তাদের পায়ে লেগে গেলে তারা উপরে উঠে এসে সেই জোঁকগুলিকে দেহ থেকে টেনে আলাদা করে বাক্সে ভরে রাখত। তবে এভাবে জোঁক জোগাড় করতে গিয়ে সংক্রমণ ও রক্তক্ষরণের মতো সমস্যায় পড়তেন সংগ্রহকারীরা।
14Months ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

মৃৎশিল্পী, ব্যবসায়ী প্রমুখদের বিশেষ কর্মোন্নতি যোগ প্রবল। পেশাদারি কর্মে শুভ ফল প্রাপ্তি। মানসিক চাঞ্চল্য।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৩.০৯ টাকা৮৪.৮৩ টাকা
পাউন্ড১০৯.৪৭ টাকা১১৩.০৪ টাকা
ইউরো৯১.০৬ টাকা৯৪.২৫ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
দিন পঞ্জিকা