শনিবার, 14 জুন 2025
Logo
  • শনিবার, ১৪ জুন ২০২৫

সাইবার প্রতারকদের খপ্পরে পড়ে বিপথগামী, বাবা-মা’য়ের অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তুলে নিখোঁজ ছেলে, রহস্য

কম্পিউটার সায়েন্সের পড়ুয়া হয়েও এড়াতে পারলেন না সাইবার প্রতারকদের ফাঁদ। বাবা-মায়ের কষ্টার্জিত কয়েক লক্ষ টাকা খুইয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে গেলেন যুবক।

সাইবার প্রতারকদের খপ্পরে পড়ে বিপথগামী, বাবা-মা’য়ের অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তুলে নিখোঁজ ছেলে, রহস্য

নিজস্ব প্রতিনিধি, পুরুলিয়া: কম্পিউটার সায়েন্সের পড়ুয়া হয়েও এড়াতে পারলেন না সাইবার প্রতারকদের ফাঁদ। বাবা-মায়ের কষ্টার্জিত কয়েক লক্ষ টাকা খুইয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে গেলেন যুবক। যাওয়ার আগে একটি চিরকুট রেখে গিয়েছেন বাড়িতে। তাতে লেখা, ‘সরি বাবা-মা। আমি একটি প্রতারণার চক্করে পড়ে তোমাদের অনেক টাকা নষ্ট করে ফেলেছি। অন্যান্যদের থেকেও টাকা নিয়েছি। আমাকে মাফ করে দাও। আমার আর কোনও রাস্তা নেই।’
পুলিস সূত্রের খবর, গত ১৭ মে দুপুর থেকে নিখোঁজ পুরুলিয়া শহরের ডুলমির বাসিন্দা সৌভিক মিশ্র। সৌভিক ভুবনেশ্বরের কিআইআইটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। সৌভিকের বাবা দমন মিশ্র ও মা দীপ্তি মিশ্র দু’জনেই শিক্ষকতা করেন। সম্ভ্রান্ত পরিবারের যুবকের এহেন কীর্তি দেখে হতভম্ব পাড়া প্রতিবেশীরা। সৌভিকের বাবা দমনবাবু বলেন, গত ২২ এপ্রিল সেমিস্টারের পরীক্ষা শেষ হলে ছেলে বাড়িতে আসে। তারপর ও বাড়িতেই ছিল। কিন্তু এমন ঘটনা ঘটিয়ে ফেলবে আমরা তা কল্পনা ও করতে পারিনি। ঘটনার পর থেকে দু’চোখের পাতা এক করতে পারছেন না সৌভিকের মা। কেঁদে কেঁদে চোখের জল কার্যত শুকিয়ে গিয়েছে তাঁর। তিনি বলছিলেন, ছেলে যেমন স্বাভাবিক থাকে, সেরকমই ছিল। শনিবার দুপুরে আমার কাছে এসে জানতে চাইল, মা তোমার রান্না শেষ হতে আর কতক্ষণ লাগবে? আমি বললাম আর চার-পাঁচ মিনিট। ও বলল, মা তুমি ভাত বারো। আমি এক্ষুনি আসছি। তারপর থেকে আর বাড়িতে ফেরেনি। 
শনিবার দুপরের পর থেকে খোঁজাখুঁজি শুরু হয় সৌভিকের। ততক্ষণে উদ্ধার হয়েছে চিরকুট। সন্ধ্যায় তা নিয়ে টামনা থানার দ্বারস্থ হয় সৌভিকের পরিবার। বাবা-মায়ের ব্যাঙ্ক ব্যালেন্স চেক করার পরামর্শ দেন পুলিস আধিকারিকরা। তখনই দেখা যায়, দু’জনের অ্যাকাউন্ট থেকে মোট আড়াই লক্ষ টাকা গায়েব হয়ে গিয়েছে। সৌভিকের বাবা বলেন, প্রতারণার ফাঁদে পড়ে গত ১৬ ও ১৭ তারিখে সৌভিক আমাদের অ্যাকাউন্ট ব্যাবহার করে অনলাইন ট্রাঞ্জাকশন করেছে। ওর বন্ধুদের থেকেও অল্প বিস্তর টাকা ধার করেছিল। পুলিস মনে করছে, এত টাকা খুইয়ে বাড়িতে আর মুখ দেখানোর মতো মানসিক অবস্থায় ছিল না সৌভিক। সেই কারণেই বাড়ি থেকে পালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সে। তবে, পালিয়ে যাওয়ার আগে মোবাইল ফোনটিও বাড়িতে দেখে গিয়েছে। ওই যুবকের খোঁজে তল্লাশি শুরু করেছে পুলিস।
কী রকম প্রতারণার ফাঁদে ফেঁসেছিল ওই যুবক? সাইবার বিশেষজ্ঞদের কথায়, স্বল্প টাকা ইনভেস্ট করে খুব কম সময়ের মধ্যেই বেশি ফেরত পাওয়া যাবে, এরকম স্ক্যামারদের পাল্লায় পড়েছিলেন ওই যুবক। কোনও ভুয়ো ওয়েবসাইটের মাধ্যমে টাকা ইনভেস্ট করতে থাকে সে। এই ধরনের কেসে প্রতারকরা শুরুর দিকে ভালো টাকা রিটার্ন দেয়। তাতেই লোভ বাড়তে থাকে। বিনিয়োগও বাড়তে থাকে। তারপর আর সেই টাকা ফেরত পাওয়া যায় না। ওই যুবকের পরিবারের একটাই দাবি, যা হয়েছে, হয়েছে। আমরা ক্ষমা করে দিচ্ছি। ঘরের ছেলে যেন এবার ঘরে ফিরে আসে।