বৃহস্পতিবার, 17 জুলাই 2025
Logo
  • বৃহস্পতিবার, ১৭ জুলাই ২০২৫

মূলতত্ত্ব—চৈতন্যময়ী মহাশক্তি

সমস্ত বিশ্বপ্রপঞ্চের যে মূল তত্ত্ব বৈজ্ঞানিকগণ পরোক্ষভাবে অনুসন্ধান করেন, দার্শনিকগণ যুক্তিবিচার দ্বারা প্রতিপাদন করতে চেষ্টা করেন এবং জ্ঞানী ভক্ত মহাযোগিগণ ধ্যানযোগে প্রত্যক্ষ উপলব্ধি করেন, তাঁকে মহাশক্তিময়ী চৈতন্যসত্তা বা ব্রহ্ম বা পরমাত্মা বলা হয়ে থাকে, চৈতন্যময়ী মহাশক্তি বা মহাদেবীও বলা হয়ে থাকে। 

মূলতত্ত্ব—চৈতন্যময়ী মহাশক্তি

সমস্ত বিশ্বপ্রপঞ্চের যে মূল তত্ত্ব বৈজ্ঞানিকগণ পরোক্ষভাবে অনুসন্ধান করেন, দার্শনিকগণ যুক্তিবিচার দ্বারা প্রতিপাদন করতে চেষ্টা করেন এবং জ্ঞানী ভক্ত মহাযোগিগণ ধ্যানযোগে প্রত্যক্ষ উপলব্ধি করেন, তাঁকে মহাশক্তিময়ী চৈতন্যসত্তা বা ব্রহ্ম বা পরমাত্মা বলা হয়ে থাকে, চৈতন্যময়ী মহাশক্তি বা মহাদেবীও বলা হয়ে থাকে। বস্তুতঃ চৈতন্য ও শক্তির মধ্যে ভেদ নাই। চৈতন্যকে শক্তিমান্‌ ব’লে শক্তির সহিত একটা অবান্তর ভেদ কল্পনা করে দার্শনিক বিচারের জটিলতা সৃষ্টি করা অনেক দর্শনাচার্য্য আবশ্যক বোধ করতে পারেন, এবং এই ভেদের মধ্যে তাঁদের নিত্যমিলনের রহস্য উদ্‌ঘাটনের তাঁরা ঘর্ম্মাক্তকলেবর হয়ে থাকেন। বৈজ্ঞানিকগণ শক্তি ও বস্তু—শক্তি ও শক্তিমানের ভেদ অনেকটা নিরসন ক’রে দিয়েছেন ও দিচ্ছেন। বাস্তবিকপক্ষে শক্তি ও বস্তুর কোন ভেদ নাই। শক্তির ভিতরেই বস্তুর সব পরিচয়। শক্তির ঘনীভূত অবস্থার নামই বস্তু এবং বস্তুর ক্রিয়াহীন অবস্থার নাম শক্তি। বস্তুর তটস্থ লক্ষণ সব বাদ দিলে স্বরূপ লক্ষণ অর্থাৎ শক্তিহীন লক্ষণ শূন্যেই পর্য্যবসিত হয়। বস্তুর ভিতরে যখন্‌ স্বপ্রকাশ জ্ঞানশক্তি বা অনুভব শক্তির এবং স্বতন্ত্র ক্রিয়াশক্তি বা আত্মপরিণামশক্তির পরিচয় পাওয়া যায়, তখনই সেই শক্তিকে চৈতন্যশক্তি এবং তদাধার বস্তুকে চৈতন্যস্বরূপ বলা হয়ে থাকে। “পরাস্য শক্তির্বিবিধৈব শ্রূয়তে, স্বাভাবিকী জ্ঞানবলক্রিয়া চ”—ইহা চৈতন্যস্বরূপেরই বাস্তব লক্ষণ।
শক্তি পরিণামময় এই বিশ্বজগতের মূলকারণ বা মূলতত্ত্বকে অভিন্নশক্তি শক্তিমান্‌ চৈতন্যস্বরূপ পরমাত্মা বা ব্রহ্ম বলেও ধারণা করা চলে, কিংবা নিত্যা স্বতন্ত্রা আত্মপ্রকাশ-স্বভাবা চৈতন্যময়ী মহাশক্তি বা মহাদেবী ব’লেও ধারণা করা চলে। পরমাত্মা বা ব্রহ্মই মহাশক্তি, মহাশক্তিই ব্রহ্ম বা পরমাত্মা। বৈদিক ও বৈদান্তিক পরিভাষায় এই মূল তত্ত্বকে ব্রহ্মবস্তু বা পরমাত্মা বলে ধারণা, ধ্যান ও উপাসনা করাই সাধারণ নিয়ম, এবং তাঁর স্বরূপভূতা মহাশক্তিকে নিত্য তদাশ্রিতা ব’লে নির্দ্ধারণ করা হয়। আগমিক ও তান্ত্রিক ধারায় এই একই অদ্বয় মূল তত্ত্বকে চৈতন্যব্রহ্মস্বরূপিণী মহাশক্তি মহাদেবী মহামায়ারূপে ধারণা, ধ্যান ও উপাসনা করা সাধারণ বিধি। সেই মূল তত্ত্বকে বিশ্বজনক বলাও যে কথা, বিশ্বজননী বলাও সেই কথা, কারণ সেখানে লিঙ্গভেদের কোন প্রশ্নই নাই। লিঙ্গভেদে শুধু তৎপ্রসূত প্রাণিজগতে সমগ্র কার্য্যজগতের অভেদভূমি। মূলকারণের স্বরূপে কোন লিঙ্গভেদ অকল্পনীয়; পুরাণাদিতে ও উপাসক সম্প্রদায়সমূহের মধ্যে উভয় ধারারই মিলন হয়েছে। ব্রহ্মতত্ত্বকেও তাঁরা নানারূপে নানা নামে নানাভাবে ইন্দ্রিয়-মন-বুদ্ধির অগোচর ভূমি থেকে আমাদের অতি নিকটে হৃদয়ের সামনে নামিয়ে এনে উপস্থিত করেছে; মহাশক্তি সত্ত্বকেও তেমনি করেছে। দার্শনিক যুক্তিতেও তাদের উপাসনা আরাধনা পূজার্চ্চনা ধ্যানধারণা ও উপলব্ধি কোন বিঘ্ন উৎপাদন করে নাই।


মহানামব্রত ব্রহ্মচারীর ‘সপ্তশতী সমন্বিত চণ্ডীচিন্তা’ থেকে

রাশিফল