প্রাকৃতিক উপায়ে সৌন্দর্য রক্ষার কথা প্রাচীন আয়ুর্বেদ বিজ্ঞানের বিভিন্ন সংহিতায় ‘বর্ণপ্রসাদক’ (মঞ্জিষ্ঠা, সারিবা, পদ্মক, চন্দন ইত্যাদি) গন, মুখালেপ অর্থাৎ ফেসপ্যাক ও একক ঔষধি (কুমকুম, তুলসী, ঘৃতকুমারী ইত্যাদি) হিসেবে বর্ণিত রয়েছে। বর্তমান ব্যস্ততম জীবনযাত্রায় রোদ, ধুলো ও দূষণের প্রভাব থেকে রেহাই পেতে প্রাকৃতিক উপায়ে ফেসপ্যাক দ্বারা ত্বকের পরিচর্যা এক বিকল্পহীন পন্থা।
ত্বকের কালচে ছোপ প্রতিরোধে কলার ফেসপ্যাক: আয়ুর্বেদ দৃষ্টিকোণে কলা মধুর, শীত, স্নিগ্ধ, বৃংহন অর্থাৎ পুষ্টিকারক, পিত্তহর। এতে ভিটামিন বি এবং সি, স্টার্চ, পটাশিয়াম, অ্যালবুমিনয়েড ইত্যাদি বর্তমান। পাকা কলার ফেসপ্যাক বিশেষত সানবার্ন ও ত্বকের কালচে ভাব দূর করতে বেশ উপকারী। রুক্ষ ত্বকের ক্ষেত্রে অর্ধেক কলার সঙ্গে একটু মধু মিশিয়ে নেওয়া চলে।
ত্বকের উজ্জ্বলতা বজায় রাখতে কমলালেবুর ফেসপ্যাক: আয়ুর্বেদ মতে কমলালেবুর খোসা, গুঁড়ো একটু দই ও মধু সহযোগে ফেসপ্যাক বানিয়ে ব্যবহার করলে ত্বকের উজ্জ্বলতার পাশাপাশি এটি সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির ক্ষতিকারক প্রভাব থেকে ত্বককে রক্ষা করে।
ট্যান দূর করতে টম্যাটো ফেসপ্যাক: টম্যাটোয় প্রচুর ভিটামিন সি, ভিটামিন ই, ভিটামিন বি সিক্স, নিয়াসিন, ফোলেট, আয়রন, কপার ইত্যাদি বর্তমান। টম্যাটোর ফেসপ্যাক মূলত ত্বকের ট্যান তুলতে ও ত্বকের জেল্লা ফেরাতে কার্যকর।
ত্বকের তারুণ্য বজায় রাখতে পেঁপের ফেসপ্যাক: ত্বকের কোমলতা ও মসৃণতা ফেরাতে খাঁটি মধু ও পেঁপের পেস্ট অদ্বিতীয়। যারা রুক্ষ, শুষ্ক ও নির্জীব ত্বকের সমস্যায় ভুগছেন তারা কাঁচা পেঁপের পেস্টের সঙ্গে অল্প পরিমাণে মধু মিশিয়ে মুখে মাখুন। মিনিট পনেরো পর ঠান্ডা জলে ধুয়ে ফেলুন। এতে ত্বক মোলায়েম ও লাবন্যযুক্ত থাকে।
শুষ্ক রুক্ষ ত্বকের যত্নে তরমুজের ফেসপ্যাক : তরমুজ শীত গুণযুক্ত, দাহনাশক ফল। এতে ভিটামিন এ, বি সিক্স, ভিটামিন সি ইত্যাদি বর্তমান। তরমুজে জলের পরিমাণ অধিক মাত্রায় থাকায় এই ফেসপ্যাক ত্বকের রুক্ষতা দূর করতে বেশ উপকারী।
ত্বকের জৌলুস রক্ষায় শসার ফেসপ্যাক: শসা ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখার পাশাপাশি ত্বকের অতিরিক্ত তৈলাক্ত ভাব, রুক্ষতাজনিত শুষ্কতা, ত্বকের জৌলুসহীনতায় এক বিকল্পহীন ফল। শসাকে ব্লেন্ড করে নিয়ে একটু ঘৃতকুমারী অর্থাৎ অ্যালোভেরা মিশিয়ে ফেসপ্যাক বানিয়ে নিয়মিত ব্যবহার করা যায়। এটি প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজার হিসেবে কাজ করে।
ত্বকের পুষ্টিতে আম-মুলতানি ফেসপ্যাক: ত্বকের নির্জীব ভাব দূর করতে আম ব্লেন্ড করে পরিমাণ মতো মুলতানি মাটি মিশিয়ে পেস্ট করে নিন। এরপর সামান্য হলুদ গুঁড়ো মিশিয়ে সপ্তাহে এক থেকে দু’বার ব্যবহার করুন।
কালচে ছোপ এড়াতে অ্যাভোকাডো ও লেবু: লেবু অম্লরসপ্রধান, আন্টিব্যাকটেরিয়াল গুণসমৃদ্ধ ভেষজ। এতে ভিটামিন সি ও সাইট্রিক অ্যাসিড আছে। ত্বকের কালচে ছোপ, বলিরেখা ও তৈলাক্ত ত্বকের সমস্যা নিরাময়ে লেবু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অ্যাভোকাডোর মসৃণ পেস্ট করে পরিমাণমতো লেবুর রস মিশিয়ে প্যাক হিসেবে কিছুদিন ব্যবহার করলে কালো ছোপের সমস্যা থেকে রেহাই পাওয়া যায়, এক্ষেত্রে এড়িয়ে চলুন অতিরিক্ত রোদ।
সাধারণ ত্বকের জন্য ভেষজ ফেসপ্যাক: ১ চামচ মুলতানি মাটি, ১/২ চামচ চন্দন গুঁড়ো, সামান্য পরিমাণ হলুদ একসঙ্গে গোলাপ জলের সঙ্গে মিশিয়ে প্যাক তৈরি করে নিন। হালকা গরমজলে তুলো ডুবিয়ে মুখ পরিষ্কার করে প্যাকটি লাগিয়ে ২০-২৫ মিনিট অপেক্ষা করুন ও শুকিয়ে গেলে ধুয়ে ফেলুন। হলুদ ত্বকের নিস্তেজ ভাব দূর করে উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনে।
সংবেদনশীল ত্বকের জন্য আপেল ও হলুদ ফেসপ্যাক: হলুদ ত্বকজ বিকারনাশক, ব্রণনাশকারী ও বর্নপ্রসাদক। সংবেদনশীল ত্বক বলতে কিছু মাখলেই জ্বালাভাব, ফুসকুড়ি হয়ে থাকে তারা ব্লেন্ড করা আপেলের সঙ্গে একটু হলুদ গুঁড়ো মিশিয়ে ব্যবহার করলে উপরিউক্ত সমস্যা থেকে রেহাই মেলে। মানসিক অস্থিরতা, টেনশন, অনিদ্রা, কোষ্ঠকাঠিন্য ইত্যাদির ফলে ত্বকে নানারকম সমস্যা দেখা দেয়। এক্ষেত্রে নিয়মিত যোগব্যায়াম ও পর্যাপ্ত ঘুম, মাত্রানুযায়ী জল পান করা উচিত। সবশেষে বলি আয়ুর্বেদ মতে ‘সৌন্দর্য’ জিনিসটা শরীর ও মনের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত এবং এটির পূর্ণতা এক অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। সঙ্গে অতিরিক্ত ভাজাভুজি খাদ্য, প্যাকেটজাত খাদ্যদ্রব্য, ঠান্ডা পানীয় যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলুন।
লেখক কেন্দুয়া সুস্বাস্থ্য কেন্দ্র, হবিবপুর, মালদার কমিউনিটি হেলথ অফিসার (আয়ুশ)