বিশ্বজিৎ দাস, কলকাতা: অভয়া-কাণ্ডে ১০ দফা দাবি পূরণে অনশনে নেমেছিলেন আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তারদের একাংশ। পাশে দাঁড়াতে (নিন্দুকরা বলেন, আন্দোলনে ইন্ধন বা উস্কানি দিতে) ৮ অক্টোবর থেকে গণইস্তফার পথে হাঁটেন কলকাতা সহ রাজ্যের বিভিন্ন সরকারি মেডিক্যাল কলেজের সিনিয়র চিকিৎসকরা। আর তাতেই তোলপাড় শুরু হয়ে যায় রাজ্যজুড়ে। সাধারণ মানুষ, যাঁরা সত্যিই বিচার চেয়ে রাজপথে নেমেছিলেন, উত্তাপ ছড়িয়ে গিয়েছিল তাঁদের মধ্যে। তাঁরা বোঝেননি, কোথাও ১০৬ জন, কোথাও ৭৭ জন, কোথাও ৩৫ জন—এভাবে রাজ্যজুড়ে প্রায় ৫০০ সিনিয়র ডাক্তার স্রেফ সাদা কাগজে গণইস্তফা দিয়েছেন। আর এই ‘কর্মকাণ্ড’ চলেছে ৮ থেকে ১৪ অক্টোবর পর্যন্ত। আজ, সোমবার, ১১ নভেম্বর। এক মাস পার হতে চলল। মুড়িমিছরির মতো ‘গণইস্তফা’য় শামিল একজন সিনিয়র চিকিৎসকও কিন্তু এর মধ্যে নিয়ম মেনে স্বতন্ত্র ইস্তফা জমা দেননি। স্বাস্থ্যভবন সূত্রেই এই খবর মিলেছে। প্রশ্ন হল, প্রবল করতালিতে সাদা কাগজে সই করে বেরিয়ে আসার যে প্রচার লাইভ হয়েছিল, তার কি গোটাটাই ‘গিমিক’? লোকদেখানো? সরকারকে চাপে রাখার কৌশল? নাকি বিশুদ্ধ আবেগ উৎসারিত প্রতীকী প্রতিবাদ?
আর জি কর, মেডিক্যাল, ন্যাশনাল, পিজি, সাগর দত্ত সহ রাজ্যের বিভিন্ন মেডিক্যালের গণইস্তফা দেওয়া সিনিয়ররা ভালোই জানেন, ইস্তফা দিতে হয় কীভাবে। সমালোচকরা বলছেন, দিস্তা দিস্তা ইস্তফার একটিকেও যাতে গুরুত্ব দিয়ে রাজ্য গ্রহণ না করে, সম্ভবত সেজন্যই কোনও গণইস্তফাপত্র পাঠানো হয় সরাসরি মুখ্যসচিবের কাছে, কোনওটা পাঠানো হয় অধ্যক্ষের কাছে, কোনওটা স্বাস্থ্য অধিকর্তাকে (শিক্ষা) ই-মেল করে, কোনওটা আবার স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের কাছে। প্রধান, অধ্যাপক, সহযোগী ও সহকারী অধ্যাপক—সমস্ত পর্যায়ের সিনিয়র চিকিৎসকদের একাংশ ‘ইস্তফা’ দিয়েছিলেন। আধিকারিকরা বলেন, একটিও ‘ইস্তফা’ নয়। কারণ, নিয়োগপত্র যেমন চাকরিপ্রার্থীর ব্যক্তিগত। ইস্তফাপত্রও তাই। দু’ধরনের ইস্তফা হয়। একটি স্বেচ্ছাবসর বা ভলান্টারি রিটায়ারমেন্ট। ২০ বছর টানা চাকরি এবং ৫০ বছর বয়স হলে তার আবেদন সম্ভব। দ্বিতীয়টি রেজিগনেশন বা ইস্তফা। এক্ষেত্রে সরকারি আবেদনপত্র বা ফর্ম আছে। স্বাস্থ্যদপ্তরের প্রধান সচিবকে উদ্দেশ করে শিক্ষক-চিকিৎসককে ইস্তফার আবেদন করতে হয়। তাতে কবে, কোন অর্ডারে তিনি জয়েন করেছেন, সেই সব জরুরি রেকর্ড থাকবে। তা ‘ডকেট’ বা লিপিবদ্ধ হবে। মেমো নম্বরও বসবে। সার্ভিস বুক মিলিয়ে ‘থ্রু প্রপার চ্যানেল’ সংশ্লিষ্ট মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ তা ‘ফরওয়ার্ড’ করবেন। সেই চিঠি যাবে প্রধান সচিবের কাছে। তিনি মঞ্জুর করলে গৃহীত হবে ইস্তফা। স্বাস্থ্যদপ্তরের ওয়েবসাইটে ইস্তফা সংক্রান্ত নির্দেশও জারি হবে। এতে কমপক্ষে এক মাস সময় লাগে। এইক্ষেত্রে চাকরি সংক্রান্ত কোনও সরকারি সুযোগ-সুবিধা মিলবে না। মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ ডাঃ ইন্দ্রনীল বিশ্বাস, সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ পার্থপ্রতিম প্রধানরা জানিয়েছেন, গত এক মাসে গণইস্তফাকারী সিনিয়র ডাক্তারদের একজনেরও স্বতন্ত্র ইস্তফাপত্র জমা পড়েনি।
অ্যাসোসিয়েশন অব হেলথ সার্ভিস ডক্টর্স-এর রাজ্য সম্পাদক ডাঃ উৎপল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘আন্দোলন থামেনি। চলবে। তেমন পরিস্থিতিতে স্বতন্ত্র ইস্তফাপত্রও জমা পড়বে।’ সার্ভিস ডক্টর্স ফোরামের রাজ্য সম্পাদক ডাঃ সজল বিশ্বাস বলেন, ‘ও ছিল প্রতীকী প্রতিবাদ। তা বলে যেন স্বতন্ত্রভাবে ইস্তফা দিতে রাজ্য বাধ্য না করে!’