অনলাইন শিক্ষাই পরম লক্ষ্য নয়। ক্যাম্পাসে এসে ল্যাবরেটরি ব্যবহার করার পাশাপাশি শিক্ষকদের সঙ্গেও কথাবার্তা বলার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। তাই সেটাই লক্ষ্য রেখে আমাদের এগতে হবে। পেশাদার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলির সংগঠন আপাইয়ের (অ্যাসোসিয়েশন অব প্রফেশনাল অ্যাকাডেমিক ইনস্টিটিউশনস) তরফে আমরা উদ্যোগ নিয়েছি, যে কোনও জায়গার ছাত্রছাত্রী যাতে তাদের বাড়ির কাছের প্রতিষ্ঠানের ল্যাবরেটরি ব্যবহার করতে পারে, সেই ব্যবস্থা করতে। এতে আর কোনও বাধা থাকবে না। ধরা যাক, একজন কলকাতার ছেলে মালদহের কোনও প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করে। তবে, গণপরিবহণ বন্ধ থাকায় শুধুমাত্র অনলাইন ক্লাস করতে বাধ্য হচ্ছে। সে যদি নিজের বাড়ির কাছের কোনও কলেজের ল্যাবরেটরির পরিকাঠামো কখনও ব্যবহার করতে চায়, তাহলে নির্দিষ্ট পদ্ধতির মাধ্যমে গিয়ে তা সে পারবে। কারণ শুধুমাত্র অনলাইন নয়, প্রয়োজনে ব্লেন্ডেড (অনলাইন ও অফলাইন) পদ্ধতিতেই ভরসা রাখতে হবে। তবে, তা রাজ্য সরকারের অনুমতি সাপেক্ষ।
ছাত্রছাত্রীদের বলব, খুব মাথা ঠান্ডা রেখে বিষয় বাছাই করতে হবে। তুমি কীসে ভালো, তা তোমাকেই বুঝতে হবে। এ বিষয়ে অভিভাবকরা সন্তানদের উপর আস্থা রাখুন। কারও যদি দ্রুত চাকরি পাওয়ার বিষয়টি মাথায় থাকে, তাহলে চাকরির বাজারের হাল-হকিকতও জেনে রাখতে হবে। যারা এখন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভর্তি হচ্ছে, চার বছর বাদে কোন বিষয়টি চাহিদায় থাকবে, সেটা তাদের মাথায় রাখা জরুরি। এ বছর ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের আসন ৩৩ হাজারের কিছু বেশি। কলেজগুলি কোর বিষয়গুলিতে আসন কমিয়ে কম্পিউটার সায়েন্স এবং তথ্যপ্রযুক্তিতে তা বাড়িয়েছে। তবে, একটা সময় কোর বিষয়গুলিতেই শূন্যতা তৈরি হবে। তখন কিন্তু সিভিল, মেকানিক্যাল বা ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের পেশাদার খুঁজতে হাহাকার পড়বে। সেই বুঝে তারা যেন সিদ্ধান্ত নেয়। তবে, সিভিল হোক বা মেকানিক্যাল, ছাত্রছাত্রীরা যদি চিরাচরিত বিষয়গুলির সঙ্গে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, রোবোটিক্স, মেশিন লার্নিংয়ের মতো পেপারগুলি রাখে, তাহলে তাদের চাকরি পেতে সুবিধা হবে। করোনা সত্ত্বেও চাকরির বাজার কিন্তু আশাব্যাঞ্জক। খুব ব্যতিক্রমী ক্ষেত্র ছাড়া চাকরি পাওয়া ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা কমই। এমবিএ, বিবিএ-র মতো কোর্সেও চাকরি ভালোই হয়েছে। আর এবছর থেকে ছবিটা আরও ইতিবাচক দিকে এগবে বলেই আশা করছি।
এ বছর কাউন্সেলিংয়ে রিপোর্টিং সেন্টারের বিষয়গুলি তুলে দেওয়ার ফলে মাসখানেক সময় বাঁচবে। তাই এআইসিটিই নির্ধারিত সময়ের অনেক আগে, সেপ্টেম্বর থেকেই বহু কলেজ ক্লাস শুরু করে দিতে পারবে। বিশেষ করে ইন্ডাকশন, দুর্বল বিষয়গুলি ঝালিয়ে নেওয়ার কাজ চলবে। করোনার জন্য ছাত্রছাত্রীদের বলব, রাজ্যের প্রতিষ্ঠানগুলিতেই ভর্তি হতে। বরং বাড়ির কাছাকাছি প্রতিষ্ঠানগুলিতে ভর্তি হতে পারলে আরও ভালো। কারণ, করোনা পরিস্থিতি কোন দিকে এগয়, তা এখনই বলা যাচ্ছে না। কলেজগুলির আসন পূরণ নিশ্চিত করতে তৃতীয় কাউন্সেলিংয়ের পরে ৫০ শতাংশ আসন জেইই-মেইন পরীক্ষার্থীদের থেকে নেওয়ার অনুমতি দিয়েছে উচ্চশিক্ষা দপ্তর। এআইসিটিই-ও নতুন নীতি এনে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে মাঝপথে নতুন বিষয় যাওয়ার ব্যাপারে নিয়ম শিথিল করেছে। আগের ক্রেডিট স্কোর ধরে রেখেই প্রয়োজনে বিষয় বিন্যাসে পরিবর্তন আনা যাবে। তাই ছাত্রছাত্রীরা সিনিয়র পড়ুয়াদের থেকে, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের থেকে জেনে, ক্যাম্পাস ভিজিট করে কোথায় ভর্তি হতে চায়, সে বিষয়ে ওয়াকিবহাল হয়ে থাকুক। কারণ, কেরিয়ারের উন্নতিতে সঠিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বাছাই খুবই গুরুত্বপূর্ণ। টিসিএস, আইবিএমের মতো প্রতিষ্ঠান শিল্পের চাহিদা অনুযায়ী আমাদের কিছু কোর্স ডিজাইন করে দিচ্ছে। কোর্স শেষে সিংহভাগই সেসব প্রতিষ্ঠানে চাকরি পাচ্ছে। শিল্পমুখী পেশাদার কোর্স করলে চাকরি নিয়ে ভাবতে হবে না।
লেখক আপাইয়ের সাধারণ সম্পাদক ও সিস্টার নিবেদিতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য।