বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
শিক্ষা-কেরিয়ার
 

ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের চাকরির ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন
কাউন্সেলিংয়ের আগেই ভেবে ফেলতে হবে পড়ুয়াদের

অর্পণ সেনগুপ্ত: করোনা পরবর্তী বিশ্ব এবং চাকরির জগতে আমূল পরিবর্তন এসেছে। চাকরি আছে। তবে কী কী পড়লে সেই চাকরি মিলবে, তা সবার আগে মাথায় রাখা জরুরি। চাকরির প্রাথমিক শর্ত হল পড়াশোনার ক্ষেত্র বাছাই করা। ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের চাকরির ক্ষেত্রে এই পরিবর্তনটা আরও বেশি। তাই কাউন্সেলিংয়ে অংশ নেওয়ার আগে ছাত্রছাত্রীদের এই বিষয়টা আরও ভালো করে মাথায় রাখার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
বিগত কয়েক বছর ধরেই কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের চাহিদা তুঙ্গে। কিছুটা ব্যাকফুটে সিভিল, মেকানিক্যাল, ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মতো কোর বিষয়গুলি। তবে, এবার সেই চাহিদা কিছুটা হলেও ফিরছে। রাজ্য জয়েন্ট এন্ট্রান্স এগজাম বোর্ডের চেয়ারম্যান মলয়েন্দু সাহা বলেন, ‘সবাই যদি ডেটা সায়েন্স, বিগ ডেটা অ্যানালিসিস, রোবোটিক্সের পিছনে ছোটে, তাহলে তো মুশকিল। মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং কেউ যদি কিছুই না বোঝে, তাহলে কিন্তু রোবোটিক্সও সে বুঝে উঠতে পারবে না।’ জেআইএস গ্রুপের চেয়ারম্যান তরণজিৎ সিং জানিয়েছেন, এ বছর কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের পাশাপাশি কোর বিষয়গুলি নিয়ে উৎসাহ বিগত কয়েক বছরের থেকে বেশি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনা সব ক্ষেত্রেই কাজের ধরন পাল্টে দিয়েছে। সিভিল, আর্কিটেকচার, মেকানিক্যাল—সব ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ক্ষেত্রেই এসেছে নতুন প্রযুক্তি। সাইটে লোক কমানোর জন্য জোর দেওয়া হচ্ছে অটোমেশনে। সেসব প্রযুক্তির সঙ্গেও খাপ খাওয়াতে হবে ছাত্রছাত্রীদের।
তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা টিসিএসের কনসালট্যান্ট সন্দীপন রায় বলেন, ইন্ডাস্ট্রি ডিজিটালাইজেশন এবং অটোমেশনে জোর দিচ্ছে। এখন ইউরোপ, আমেরিকা সহ অধিকাংশ দেশেই করোনার জন্য কম লোক নিয়ে কাজ হচ্ছে। বিভিন্ন নির্মাণ সংস্থা ডিজিটাল থ্রিডি সিমুলেটরের উপর জোর দিচ্ছে। আগে যে কাজ ইঞ্জিনিয়াররা সাইটে গিয়ে কাজ করতেন, তা এখন হচ্ছে ‘ইন হাউস’। গোটা পরিকল্পনাই নির্দিষ্ট সফটওয়্যারের মাধ্যমে হচ্ছে। একেবারে শেষ মুহূর্তে শ্রমিকরা গিয়ে সাইটের কাজ করছেন। তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাগুলি এ ধরনের সফটওয়্যার তৈরির বরাত পাচ্ছে। শুধুমাত্র নির্মাণের ক্ষেত্রে নয়, এই পদ্ধতি অনুসরণ করা হচ্ছে অন্যান্য ক্ষেত্রেও। ধরা যাক কোনও ওষুধ বা ভ্যাকসিনের ডিজিটাল ট্রায়াল করা হবে। প্রয়োজনীয় ভলান্টিয়ার নেই বা ফিজিক্যালি করাটা সময় এবং ব্যয়সাধ্য। তাই, বিভিন্ন মানুষের মেডিক্যাল ডেটা নিয়ে সফটওয়্যারেই তা বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। তার সঙ্গে ডিজিটালি ওষুধ বা ভ্যাকসিনের বিভিন্ন উপাংশগুলিকে নির্দিষ্ট সফটওয়্যারে ফেলে ‘রান’ করানো হচ্ছে। এতে ডিজিটালি একটা ধারণা পাওয়া সম্ভব হচ্ছে, ওই ভ্যাকসিন বা ওষুধটি কোন রোগীর ক্ষেত্রে কার্যকর হবে, আবার কাদের ক্ষেত্রে তা বিপদ ডেকে আনতে পারে। এ ধরনের কাজগুলি করতে সফটওয়্যারের সঙ্গে মেডিক্যাল, ফার্মাসিউটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, বায়োটেক ইঞ্জিনিয়ারিং, মলিকিউলার বায়োলজির লোকজন দরকার হচ্ছে।
করোনা আসার আগে থেকেই এ দেশে তথ্যপ্রযুক্তি সহ কয়েকটি ক্ষেত্রে ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’ পদ্ধতি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। অন্যান্য ক্ষেত্রেও বেড়েছে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার। তাই পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সাইবার প্রতারণা। বিভিন্ন সমীক্ষাতেও তা উঠে এসেছে। তাই সাইবার কম্পিউটার সায়েন্সের সাইবার সিকিওরিটি জানা লোকজনের চাহিদা বাড়ছে। শিল্পের সঙ্গে জড়িত লোকজন জানাচ্ছেন, করোনায় শুধুমাত্র চাঙ্গা হয়েছে তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রটিই। তাদের কাজের বহর আরও বেড়েছে। সেটা ছাত্রছাত্রীদের মাথায় রাখতে হবে। তবে, সব পড়ুয়ারই আত্মবিশ্লেষণের প্রয়োজন রয়েছে। তাঁদের বুঝতে হবে, কোন বিষয়ে পড়াশোনা করলে তিনি সবচেয়ে বেশি সফল হতে পারবেন। যে কোনও বিষয়ই হোক, সেরাদের চাকরি নিয়ে ভাবতে হয় না। কয়েকটি বিষয় নিয়ে এখানে আলোচনা করা হল যেগুলি এই বাজারেও ছাত্রছাত্রীদের ভালো চাকরি দিতে পারে।
 কম্পিউটার সায়েন্স: এর আওতায় চলে আসে সফটওয়্যার এবং হার্ডওয়্যারের বিভিন্ন ক্ষেত্র। তাতে কোডিং, প্রোগ্রামিং, নেটওয়ার্কিং, সাইবার সিকিওরিটি, ডেটা সায়েন্স—সবই রয়েছে। এই ক্ষেত্রে বেতনও অন্যান্য ক্ষেত্রের চেয়ে অনেকটাই বেশি এখনও। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, ইন্টারনেট অফ থিংস, মেশিন লার্নিংয়ের মতো বিষয়গুলির চাহিদা বহুদিনই ছিল। যত দিন যাচ্ছে, তা আরও বাড়ছে। কারণ, গোটা বিশ্বই এখন চলছে এগুলির উপরে।
 এরোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং: ভারতে চাকরির বাজারে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারদের পাশাপাশি ব্যাপক চাহিদা রয়েছে এরোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারদের। আর বিদেশে তো বরাবরই এর চাহিদা বেশি। সঠিক জায়গা থেকে কোর্স করলে বাণিজ্যিক এবং যুদ্ধবিমান তৈরি বা সেগুলির যন্ত্রাংশ নির্মাণের বিভিন্ন দেশীয় এবং বহুজাতিক সংস্থা তাঁদের লুফে নেবে। এমনকী, নাসা, ইএসএ এবং ইসরোর মতো মহাকাশ গবেষণাকেন্দ্রগুলিতেও এঁদের বিপুল চাহিদা রয়েছে। মহাকাশ পর্যটন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এঁদের চাহিদা আরও বাড়বে।
 বায়োটেক ইঞ্জিনিয়ারিং: এ বিষয়টি অনেকটাই বায়োলজিক্যাল সায়েন্সের উপর নির্ভরশীল। পড়ুয়াদের ইমিউনোলজি, জেনেটিক্স, মলিকিউলার বা বায়োলজির মতো বিষয়গুলিও পড়াশোনা করতে হয়। এই ছাত্রছাত্রীদের চাহিদা থাকে বিভিন্ন ওষুধ এবং টিকা তৈরির কেন্দ্র, হর্টিকালচার, অ্যানিম্যাল ফার্ম সহ আরও বিভিন্ন ক্ষেত্রে। যত জনসংখ্যা বাড়বে, তত বাড়বে ওষুধ এবং খাবারের চাহিদা। তার সঙ্গে ক্রমেই গুরুত্ব বাড়বে বায়োটেক ইঞ্জিনিয়ারদের।
 মেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং: স্বাস্থ্যক্ষেত্র বড়সড় পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে চলেছে। চিকিৎসায় যন্ত্রপাতির ব্যবহার বাড়ছে। যত দিন যাবে, তার বহর আরও বাড়বে। একটা সময় বলা হতো, ‘নাড়ি টেপা ডাক্তার’। যুগের সঙ্গে তাঁরা বিলীন হয়েছেন। এখন যে কোনও চিকিৎসকই যান্ত্রিক পদ্ধতিতে রোগনির্ণয়ে ভরসা রাখেন। তাই স্টেথোস্কোপ থেকে শুরু করে অত্যাধুনিক এমআরআই মেশিন— সব কিছু তৈরিতেই এখন ভূমিকা থাকে মেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারদের। এখন জোর দেওয়া হচ্ছে, আরও দ্রুত, আরও নিশ্চিত ডায়াগনোসিস এবং চিকিৎসা সংক্রান্ত যন্ত্রাদি তৈরির উপরে। আর সেখানেই বাজিমাত করবেন মেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়াররা।
  কোর ইঞ্জিনিয়ারিং: সিভিল, আর্কিটেকচার, মেকানিক্যাল এবং ইলেকট্রিক্যালের মতো চিরাচরিত কোর বিষয়গুলির চাহিদা কমতে-বাড়তে থাকে। তবে, এঁদের চাহিদা চিরন্তন। একটা উদাহরণ দিলে বোঝা যাবে— কোনও কারখানার শেড তৈরি করবেন সিভিল ইঞ্জিনিয়াররা, অফিস তৈরি করবেন আর্কিটেক্টরা, তার যন্ত্রাদি তৈরি এবং পরিচালনায় হাত লাগাবেন মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়াররা। অটোমেশন এবং রোবোটিক্সও মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারদের ছাড়া অচল। আর কোনও বড় শিল্প যে বিদ্যুৎ ছাড়া অচল, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তাই ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারদের চাহিদাও ফুরিয়ে যাওয়া একটা অসম্ভব ব্যাপার। এও মাথায় রাখতে হবে, সবাই যেনতেন প্রকারেণ কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে মাথা গলানোর চেষ্টা শুরু করায় বাকি ক্ষেত্রগুলিতে অচিরেই একটি শূন্যতা তৈরি হতে পারে। তাই সবদিক ভেবে সিদ্ধান্ত নিলে লাভবান হবেন পড়ুয়ারা।

10th     August,   2021
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ