শৌণক সুর: মাতৃদুগ্ধ ছাড়া শিশুর সার্থক বিকাশ যেমন সম্ভব নয়, তেমনই মাতৃভাষা ছাড়া যথার্থ শিক্ষা অসম্পূর্ণ। একটি জাতির সর্বাঙ্গীন ইতিহাস, প্রগতি শুধুমাত্র ভাষাই যুগ যুগ ধরে বয়ে নিয়ে যেতে পারে। নিজের মধ্যে ভাবের আদান-প্রদান তো বটেই পাশাপাশি সমগ্র একটি জাতির আদব-কায়দা, ভালো-মন্দের ইতিহাসও রচিত হয় ভাষার মাধ্যমেই। বিশ্বের যে কোনও প্রগতিশীল জাতির মধ্যেই মাতৃভাষার প্রতি কদর দেখা যায়। এছাড়াও দেশে বহুল প্রচলিত থুড়ি ব্যবহৃত ভাষা এবং সর্বোপরি বিশ্বের অধিকাংশ দেশে ব্যবহৃত ভাষা সম্পর্কে জানারও একটা তাগিদ থাকে সকলেরই মধ্যে। যেমন আমাদের দেশে হিন্দির সর্বাধিক ব্যবহার আর বিশ্বে ইংরেজি ভাষার চাহিদা— এই দুটি ভাষার প্রতি আমাদের টান বাড়িয়ে তুলেছে। এ দেশের অনেক নাগরিকই মাতৃভাষা বাদ দিয়ে এই দুটি ভাষা অল্পবিস্তর বলতে এবং লিখতে পারেন।
আমাদের রাজ্যেও বাংলা ভাষার প্রতি বিশেষ অনুরাগ রয়েছে। ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। ১৯৫২ সালের এই দিনটিতে বাংলাকে তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে আন্দোলনরতদের উপর গুলিবর্ষণ করা হয়েছিল। বাংলা ভাষার জন্য লড়াই করতে গিয়ে প্রাণ হারাতে হয়েছিল অনেককেই। সেদিন থেকে এই দিনটিকে সারা বিশ্বে পালন করা হয় যথাযথ মর্যাদার সঙ্গে। ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর অনুষ্ঠিত ইউনেস্কোর প্যারিস অধিবেশনে একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এ তো গেল বাংলা ভাষার ঐতিহ্যের ইতিবৃত্ত। কিন্তু বর্তমানে অধিকাংশ ভারতবাসীই মাতৃভাষা, হিন্দি এবং ইংরেজি জানার পাশাপাশি আরও বিদেশি ভাষা শিখতে আগ্রহী। এর কারণ কী? বিশেষজ্ঞদের মতে, জেন ওয়াইয়ের যুগে একটা প্রবণতা দেখা দিয়েছে বিদেশে গিয়ে পড়াশোনা বা চাকরি করার। অনেকেই চান সে দেশের সরকারি ভাষা বা বহুল প্রচলিত ভাষা সম্পর্কে জানতে। এর ফলে সে দেশে বসবাসে যেমন সুবিধা হয়, তেমনই সেই দেশের নাগরিকদের সঙ্গে আলাপচারিতাতেও বেশ খানিকটা বাড়তি সুবিধা পাওয়া যায়। এছাড়া অতিরিক্ত ভাষা জানা থাকলে দোভাষী হিসেবে চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রেও অন্যদের থেকে সম্ভাবনা বেশ খানিকটা বেড়ে যায়। শেষ কয়েক বছর ধরেই বিদেশি ভাষা শেখার ঝোঁক বৃদ্ধি পেয়েছে। চাহিদার কথা মাথায় রেখে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ইতিমধ্যেই ফরেন ল্যাঙ্গুয়েজ শেখানোর কাজ শুরু করে দিয়েছে। পড়ুয়াদের বিদেশি ভাষা শেখার আগ্রহ দেখে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়েও শুরু হয়েছে বিভিন্ন ভাষার সার্টিফিকেট, ডিপ্লোমা এবং অ্যাডভান্সড ডিপ্লোমা কোর্স। ভর্তি নিচ্ছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব ল্যাঙ্গুয়েজে অ্যান্ড লিঙ্গুয়েস্টিক্স। বিদেশি ভাষার পাশাপাশি শেখানো হবে একাধিক দেশি ভাষাও। আসুন জেনেনি কোন কোন বিষয়ে পড়ানো হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানো হবে— বাংলা, হিন্দি, সংস্কৃত, ফরাসি, জার্মান, স্প্যানিশ, ইতালিয়ান, পর্তুগিজ, চাইনিজ, জাপানিজ, কোরিয়ান এবং ফাংশনাল অ্যান্ড কমিউনিকেটিভ ইংলিশ। এগুলির মধ্যে বাংলা, ফরাসি, জাপানিজ ভাষায় অ্যাডভান্সড ডিপ্লোমা কোর্স করানো হবে। অন্যদিকে ইতালিয়ান, পর্তুগিজ, চাইনিজ এবং ফাংশনাল অ্যান্ড কমিউনিকেটিভ ইংলিশে সার্টিফিকেট করা যাবে। তবে, এই সবক’টি কোর্সের ক্ষেত্রে মেয়াদ এক বছর হলেও ফাংশনাল অ্যান্ড কমিউনিকেটিভ ইংলিশের ক্ষেত্রে মেয়াদ কিন্তু মাত্র ছয় মাস। সার্টিফিকেট কোর্সের ক্ষেত্রে কোর্স ফি তিন হাজার টাকা। ডিপ্লোমা কোর্সের ক্ষেত্রে চার হাজার টাকা। অ্যাডভান্সড ডিপ্লোমা কোর্সের ক্ষেত্রে সাড়ে চার হাজার টাকা। তবে ফাংশনাল অ্যান্ড কমিউনিকেটিভ ইংলিশের ফি দু’হাজার টাকা। জিএসটি অতিরিক্ত। সপ্তাহে দু’দিন করে ক্লাস হবে। সময় বিকেল ৫টা থেকে রাত ৮টা। যে কোনও শাখার উচ্চমাধ্যমিক পাশরা সার্টিফিকেট কোর্সের জন্য আবেদন করতে পারবেন। তবে ডিপ্লোমা কোর্সের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সার্টিফিকেট কোর্স এবং অ্যাডভান্সড ডিপ্লোমা কোর্সের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ডিপ্লোমা কোর্স পাশ করা আবশ্যক। এই কোর্সের জন্য আবেদন করতে হবে নির্দিষ্ট বয়ানে। বিদেশি নাগরিকদের ক্ষেত্রে রয়েছে ভিন্ন আবেদনপত্র। সেক্ষেত্রে সঙ্গে উচ্চমাধ্যমিক বা সমতুল বিষয়ে পাশের প্রমাণপত্র এবং পাসপোর্টের স্ক্যান কপি দিতে হবে। বিজ্ঞপ্তি বের হওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনফরমেশন কাউন্টার থেকে আবেদনপত্র সংগ্রহ করা যাবে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট http://www.jaduniv.edu.in/ থেকেও ফর্ম ডাউনলোড করা যাবে। সেক্ষেত্রে আবেদনপত্রের সঙ্গে নির্দিষ্ট ফি জমা দিতে হবে ডিমান্ড ড্রাফটের মাধ্যমে। সেই ড্রাফটটি “THE REGISTRAR JADAVPUR UNIVERSITY”-র অনুকূলে কলকাতায় প্রদেয় হতে হবে। প্রয়োজনীয় সমস্ত নথি পাঠাতে হবে- Information counter, Jadavpur University, 188 Raja S.C. Mallick Rd, Kolkata 700032 এই ঠিকানায়। খুঁটিনাটি তথ্যের জন্য ওয়েবসাইট ভিজিট করতে পারেন। এছাড়া আগ্রহীরা সরাসরি ফোন করতে পারেন-(০৩৩) ২৪৫৭-২২২৭ এবং ২৪১৪-৬৬৬৬- এই দু’টি নম্বরে।