বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর

এই বোস সেই বোস নয়

মৃণাল শীল: আমরা দেশনায়ক সুভাষচন্দ্র বসুর ছাত্রাবস্থার একটি ঘটনার সঙ্গে সকলেই পরিচিত। সেটি হল, প্রেসিডেন্সি কলেজের ইতিহাসের এক ইংরেজ অধ্যাপক ওটেন সাহেব এক বাঙালি ছাত্রকে বিনা কারণে অপমান করেন। এই ঘটনার প্রতিবাদে সরব হয় গোটা প্রেসিডেন্সি কলেজ। যার পুরোভাগে ছিলেন সুভাষ। এরপর কিছু ছাত্রের হাতে প্রহৃত হন ওটেন। সেই ঘটনার জেরে সুভাষকে কলেজ থেকে বহিষ্কারও করা হয়। ঘটনাটি ঘটে ছিল ১৯১৯ সালে। এই ঘটনার ঠিক পাঁচ বছর আগে এই প্রেসিডেন্সি কলেজেই পদার্থবিজ্ঞানের এক অধ্যাপক হ্যারিসন সাহেব ঠিক একই রকম একটি ঘটনা ঘটিয়ে ছিলেন। সেই ঘটনার প্রতিবাদের নেতৃত্বও দিয়েছিলেন আর এক ‘বোস’। তবে পরবর্তী কালে তিনি সুভাষচন্দ্রের মতো প্রত্যক্ষ স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশ না নিলেও বহু ক্ষেত্রেই ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন। এই বোস হলেন ভারত তথা বিশ্বের অন্যতম বিশিষ্ট পদার্থবিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বসু।
ছোটবেলা থেকেই সঙ্গীতের প্রতি তাঁর এক অদ্ভুত আকর্ষণ ছিল। নিজেও খুব ভালো এসরাজ আর বাঁশি বাজাতে পারতেন। ছাত্রাবস্থায় হেদুয়ার ধারে সত্যেন্দ্রনাথের বন্ধুদের আড্ডার মূল আকর্ষণ ছিলেন হরিৎকৃষ্ণ। কারণ, এই হরিৎকৃষ্ণ সত্যেন্দ্রনাথের অনুরোধে একের পর এক রবীন্দ্রসঙ্গীত গেয়ে শোনাতেন। পরবর্তীকালে সত্যেন্দ্রনাথ তখন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, তিনি হঠাৎ জানতে পারলেন তাঁর এক ছাত্র খুব ভালো সেতার বাজায়। সেই ছাত্রটিকে ডেকে তিনি বললেন, ‘তোমার বাজনা শোনাও।’ উত্তরে ছাত্রটি বলল, ‘স্যার আমি তো আমার যন্ত্রটা আনিনি, আমি না হয় পরে একদিন আপনার বাড়ি গিয়ে শুনিয়ে আসব।’ কিন্তু সত্যেন্দ্রনাথ সেসব শুনলেনই না। তিনি ছাত্রটিকে নিজের ঘরেই বসিয়ে রাখলেন তারপর অন্যদের দিয়ে আনালেন তাঁর সেতারটা, সেই সঙ্গে আনালেন একজন তবলা বাদককেও। এরপর, দু’জনকেই বসিয়ে দিলেন নিজের টেবিলে।
সত্যেন্দ্রনাথের বিয়ের সময় তাঁর দাবিও ছিল খুব অদ্ভুত। তাঁর বন্ধুবান্ধবের সংখ্যা ছিল বিশাল। ১৯১৪ সালে যখন ঊষাবতী দেবীর সঙ্গে বিয়ে হয়, সেই সময় তিনি ঊষাবতী দেবীর বাবা যোগীন্দ্রনাথ ঘোষকে বলেছিলেন যে, বিয়েতে তিনি কোনওভাবেই টাকা-পয়সা পণ হিসাবে নিতে পারবেন না। তবে তাঁর একশোজন বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে যাবেন বরযাত্রী হিসাবে। বোস-আইনস্টাইন তত্ত্বের জনক হিসাবে সত্যেন্দ্রনাথের নাম গোটা পৃথিবী বিখ্যাত। খুব সহজ ভাষায়, তার আবিষ্কৃত এই তত্ত্ব অনুযায়ী, একাধিক কণা যাদের আলাদাভাবে চেনা অসম্ভব এবং যাদের মধ্যে কোন মিথস্ক্রিয়া (Interaction) নেই, তারা তাপগতীয় সাম্যাবস্থায় (Thermodynamic equilibrium) সহজলভ্য শক্তিস্তর গুলিতে বিন্যস্ত থাকতে পারে এবং এই কণাগুলিকে বলে বোসন। আসলে তার এই তত্ত্বটা নিয়ে একটা মজার ঘটনা আছে। একবার কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক আলোচনা সভায় আমন্ত্রিত হয়েছিলেন বিখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানী পল ডির‌্যাক। ডির‌্যাককে আনার জন্য সত্যেন্দ্রনাথ তার কয়েকজন ছাত্রকে নিয়ে একটা গাড়ি করে গিয়েছেন দমদম বিমানবন্দরে। ডির‌্যাকের সঙ্গে আছেন তাঁর স্ত্রী ম্যান্সি। ফেরার সময় সত্যেন্দ্রনাথ ছাত্রদের গাড়ির পিছনে বসতে বলে ডির‌্যাক ও তাঁর স্ত্রীকে নিয়ে উঠলেন গাড়ির সামনে। পথে যেতে যেতে ডির‌্যাক বললেন, ‘মিস্টার বোস, আমার মনে হয় গাড়িটা আমাদের জন্য খুব ছোট হয়েছে, আপনার ছাত্ররা গাড়ির পিছনে ভালো করে বসতে পারছে না।’ উত্তরে কৌতুক করে সত্যেন্দ্রনাথ বলেছিলেন, ‘আমার ছাত্ররা সব বোসন, ওরা ওই জায়গাতেই নিজেদের বিন্যস্ত করে নেবে।’ 

12th     January,   2020
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ