বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর

শীতের কামড় থেকে ফসল
বাঁচাতে শেডনেটে পানচাষ 

শেডনেটে পানচাষের মূল সুবিধা বলতে বছর বছর বরজের কাঠামো বদলের প্রয়োজন হয় না। তাছাড়া ঝড়-বৃষ্টির মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে ফসলের ক্ষতির সম্ভাবনা অনেকটাই কম থাকে। শেডনেটের ভিতর সঠিকভাবে আলো ও বাতাস চলাচল করতে পারে, যা পানের বৃদ্ধির পক্ষে সহায়ক।
ড. সমরেন্দ্রনাথ খাঁড়া

ব্রতীন দাস: প্রথাগত পদ্ধতি ছেড়ে এবার শেডনেটে পানচাষে জোর দিচ্ছে উদ্যানপালন দপ্তর। আধুনিক এই প্রযুক্তির ব্যবহারে একদিকে যেমন পানের গুনগত মান ভালো হবে, সংখ্যায় বেশি মিলবে পাতা, তেমনই রোগপোকার হাত থেকে রক্ষা পাবে বরজ। এমনটাই বলছেন উদ্যানপালন আধিকারিকরা। কৃষিভিত্তিক ক্লাস্টারের মাধ্যমে ক্ষুদ্র ব্যবসায় গুরুত্ব দিচ্ছে রাজ্য। এজন্য জেলায় জেলায় কৃষি ও উদ্যানপালন আধিকারিকদের প্রকল্প তৈরি করতেও বলা হয়েছে। মিলবে সরকারি অনুদান। সেক্ষেত্রে শেডনেটে পানচাষ কৃষকদের মুখে হাসি ফোটাতে পারে বলে দাবি বিশেষজ্ঞদের।
এমনিতে বাঁশ, পাটকাঠি দিয়ে পানের বরজের কাঠামো তৈরি করে থাকেন চাষিরা। এতে সমস্যা হল, ফি বছর ওই কাঠামো মেরামতে একটা বড় টাকা খরচ হয়ে যায়। তাছাড়া রোগপোকার দাপটও থাকে বেশি। কড়া শীতে বিশেষ করে উত্তরবঙ্গের মালদহ ও দক্ষিণ দিনাজপুরে যেখানে একটা বিশাল এলাকাজুড়ে পান চাষ হয়, সেখানে ঠান্ডার প্রকোপে ফসলের উৎপাদন মারাত্মকভাবে কমে যায়। ছোট ও হলুদ হয়ে ঝরে পড়ে পাতা। স্বাভাবিকভাবে পানচাষিরা ক্ষতির মুখে পড়েন। শেডনেটে চাষ করলে এসব ঝক্কি কাটিয়ে ওঠা যাবে বলে জানাচ্ছেন উদ্যানপালন বিশেষজ্ঞরা। একইসঙ্গে বিদেশে পানের রপ্তানি বাড়াতে জৈব প্রযুক্তিতে পান চাষের এলাকা বৃদ্ধির দিকে নজর দেওয়া হয়েছে। সেক্ষেত্রে পানের বরজে বেশি মাত্রায় ব্যবহার করতে বলা হচ্ছে ভার্মিকম্পোস্ট।
শেডনেট কী?
এটি পলিথিনের তৈরি নেট বা জাল। সূর্যের আলো আংশিক আটকে ছায়া তৈরি হয়। শুধু তাই নয়, কুয়াশা, শিলাবৃষ্টি, ঠান্ডা, গরম, শিশির প্রভৃতি থেকে ফসলকে রক্ষা করা যায়। শেডনেটে পূর্ব-পশ্চিম দিকে চারটি জানলা রাখতে হয়। কংক্রিটের খুঁটির উপর শেডনেট তৈরি করা যেতে পারে। তাতে শক্তপোক্ত হয়। তবে কৃষক চাইলে বাঁশের কাঠামোর উপরেও শেডনেট করতে পারেন। এতে অবশ্য তুলনামূলক কম দিন টেঁকসই হয়। শেডনেট তৈরির জন্য সরকারি অনুদান পাওয়ারও সুযোগ রয়েছে। যাঁরা প্রথমেই বেশি খরচ করে শেডনেট করতে চাইছেন না, তাঁদের জন্য উদ্যানপালন দপ্তরের পক্ষ থেকে শেডনেট রোল দেওয়া হচ্ছে। তাতেও অনেকটা সুফল মিলবে।
দক্ষিণ দিনাজপুরের উপ উদ্যানপালন অধিকর্তা ড. সমরেন্দ্রনাথ খাঁড়া জানিয়েছেন, শেডনেটে পানচাষের মূল সুবিধা বলতে বছর বছর বরজের কাঠামো বদলের প্রয়োজন হয় না। তাছাড়া ঝড়-বৃষ্টির মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে ফসলের ক্ষতির সম্ভাবনা অনেকটাই কম থাকে। শেডনেটের ভিতর সঠিকভাবে আলো ও বাতাস চলাচল করতে পারে, যা পানের বৃদ্ধির পক্ষে সহায়ক। মাইক্রো ইরিগেশন বা ক্ষুদ্র সেচের মাধ্যমে উৎকৃষ্ট মানের পাতা পাওয়া যায়। পানের পাতা আকারে বড়, উজ্জ্বল রং হওয়ায় বাজারে দামও পাওয়া যায় ভালো। সবচেয়ে বড় কথা, রোগপোকার উপদ্রব অনেক কম হয়। ফলে প্রাথমিকভাবে খরচ একটু বেশি পড়লেও তাঁরা চাষিদের শেডনেটে পানচাষের পরামর্শ দিচ্ছেন।
সারা বছরই পানের লতা লাগানো যায়। তবে বর্ষার সময় চাষ শুরু করতে পারলে ভালো। শেডনেটে ৫০ সেমি দূরত্বের সারিতে ২৫ সেমি অন্তর পানের লতা লাগানোর সুপারিশ করছেন উদ্যানপালন আধিকারিকরা। এতে মোটামুটিভাবে ২০০ বর্গমিটার এলাকায় দেড় হাজারের মতো পানের লতা লাগানো যেতে পারে। তাঁদের দাবি, শেডনেটের ভিতর দিয়ে সূর্যালোক প্রবেশ করতে পারে ২৫ শতাংশ। কিন্তু কুয়াশা ঢুকতে পারে না। এতে ছত্রাকের সমস্যা কমে যায়। যার কারণে হেমচিতি রোগ হয় না। মুর্শিদাবাদে প্রায় এক হাজার হেক্টর জমিতে পানের বরজ রয়েছে। আগে চাষিরা বেশিরভাগই প্রথাগত পদ্ধতিতে চাষ করতেন। কিন্তু প্রতি বছর বরজের কাঠামো মেরামতের খরচ জোগাতে গিয়ে তাঁরা চোখে দেখতে পারতেন না লাভ। অবশেষে উদ্যানপালন দপ্তরের পরামর্শে প্রথমে কয়েকজন চাষি শেডনেটে পান চাষ শুরু করেন। সরকারি অনুদান পেয়েছেন তাঁরা। উদ্যানপালন দপ্তরের পক্ষ থেকে তাঁদের কারিগরি সহায়তাও দেওয়া হয়েছে। প্রচলিত পদ্ধতিতে চাষ করলে এক বিঘা জমি থেকে সারা বছরে গড়ে প্রায় ৭ লক্ষ ৬৪ হাজার পান পাতা পাওয়া যায়। তা বিক্রি করে আয় হয় ২ লক্ষ ১৬ হাজার টাকার মতো। কিন্তু শেডনেটে চাষ করলে পান পাতার সংখ্যা বাড়ে। বিক্রি করে আয় হয় প্রায় আড়াই লক্ষ টাকা। শীতে তাপমাত্রার হেরফেরে হেমচিতি রোগ দেখা দিতে পারে পান বরজে। একবার যদি এই রোগ বরজে থাবা বসায়, তা হলে মুখ থুবড়ে পড়েন চাষি। হেমচিতি রোগে পান পাতায় কালো ছোপ দেখা যায়। এর পর পাতা হলুদ হয়ে ঝরে পড়ে। এই রোগ থেকে রেহাই পেতে উদ্যানপালন আধিকারিকরা চাষিদের শেডনেটে পানচাষের পরামর্শ দিচ্ছেন। একইসঙ্গে তাঁদের সুপারিশ, কোনও বরজে হেমচিতি রোগ ঠেকাতে বর্ষার পর ট্রাইকোডার্মা ভিরিডি ও সিউডোমোনাস মাটিতে মিশিয়ে গাছের গোড়ায় দেওয়া যেতে পারে। এছাড়া প্রতি লিটার জলের সঙ্গে ৫ গ্রাম মাত্রায় মিশিয়ে স্প্রে করা যেতে পারে গাছে। এর ১৫ দিন পর স্প্রে করতে হবে অনুখাদ্য মিশ্রণ গ্রেড ২। প্রতি লিটার জলে দেড় গ্রাম মাত্রায়। দেড় মাসের মাথায় স্প্রে করতে হবে থায়োফিলেট মিথাইল। এটির মাত্রাও এক লিটার জলে দেড় গ্রাম। খুব ঠান্ডা পড়লে ফাইটোনাল প্রতি দশ লিটারে ৩ মিলিগ্রাম দিয়ে পান পাতায় স্রেরা করলে হেমচিতি রোগ কিছুটা হলেও আটকানো সম্ভব।  

25th     November,   2020
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ