সুদেব দাস, আরামবাগ: অতিবৃষ্টির কারণে গত বছর বাদাম চাষে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছিল। বাদামের রঙের উজ্জ্বলতা হারিয়ে কালো হয়ে গিয়েছিল। তাই খোলাবাজারে চাহিদা থাকলেও, ভালো মানের বাদামের জোগান দিতে পারেননি চাষিরা। পুজোর পরে আরামবাগ মহকুমাজুড়ে শুরু হবে বাদাম চাষ। তবে এবার ভালো ফলন পেতে এখন থেকেই বাদাম চাষে বাড়তি জোর দিচ্ছেন চাষিরা। এমনকী অনেক ব্যবসায়ী চাষের জমিতে গিয়ে আগাম বীজ বুকিং করে রাখছেন। চাষিদের অনেকেই বলেছেন, এখন যে বাদাম বীজ চাষ হচ্ছে, সেই বীজ থেকে আগামী দু’টি মরশুমে ফলন পাওয়া যাবে। তাই বাজারে চাহিদা অনুযায়ী বীজের জোগান দেওয়া ও গুণগত মান বৃদ্ধিই মূল লক্ষ্য। এই দুটি বিষয়ের উপর জোর দিয়ে চলছে বাদাম বীজ চাষ। আরামবাগ মহকুমা কৃষি আধিকারিক (প্রশাসন) সজলকুমার ঘোষ বলেন, মূলত মহাকুমার ছ’টি ব্লকের মধ্যে পুরশুড়া ও আরামবাগ ব্লকে বাদামের চাষ বেশি হয়। মহাকুমায় মোট প্রায় ৮০ হেক্টর জমিতে এবছর বাদাম বীজ চাষ হচ্ছে। এছাড়া দুই মরশুমে প্রায় ২৫০ হেক্টর জমিতে বাদাম চাষ হয়। কিন্তু গত বছর উম-পুনের মতো প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে বাদাম চাষের জমিতে জল জমেছিল। ফলে চাষিদের ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়েছে। সেই বিপর্যয় কাটিয়ে নতুন করে ফলন কীভাবে বৃদ্ধি করা যায় তা নিয়ে দপ্তরের তরফে চাষিদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া বাদাম চাষ হয় এমন জমি যাতে ফেলে রাখা না হয়, সেই বিষয়েও নজর দেওয়া হয়েছে।
কৃষিদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, পুরশুড়া ব্লকের পুরশুড়া, পশ্চিমপাড়া, জঙ্গলপাড়া, হাটি এলাকার চাষিরা দীর্ঘদিন ধরে বাদাম চাষের সঙ্গে যুক্ত। খানাকুলের তাঁতিশাল, অরুণ্ডা, আরামবাগের আরাণ্ডি, সালেপুর, মানিকপাট ও গোঘাটের সাওড়া, বালি ও আরামবাগ শহর লাগোয় বেশ কিছু এলাকায় সব্জি চাষের পাশাপাশি বড় অংশের চাষিরা বাদাম চাষের উপর নির্ভরশীল।
আরামবাগের মানিকপাঠ এলাকায় দ্বারকেশ্বর নদের বাঁধের বেশ কয়েক বিঘা জমিতে বাদাম বীজ চাষ করেন স্থানীয় বাসিন্দা উত্তম মালিক, দেবু সাঁতরা, হেমন্ত দাসরা। তাঁরা বলেন, দুর্গাপুজোর পরেই শীতকালীন বাদাম চাষ শুরু হবে। এখন সেই বাদাম বীজ চাষ করছি। জুলাইয়ের শেষে চাষ শুরু হয়েছিল। চাষের জন্য সময় লাগে প্রায় আড়াই মাস। এই বীজ থেকে পরবর্তী চাষের ফলন বাড়াতে সার দেওয়া হয়েছে। বর্ষার জল জমলেও এই চাষের কোনও ক্ষতি হয় না। এবছর বাজারে বাদাম বীজের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এই বীজ পাইকারি ৭০-১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হবে। অনেক ব্যবসায়ী ইতিমধ্যে জমিতে এসে ফলন দেখে বীজ বুকিং করে যাচ্ছেন। এক বিঘা জমিতে সব মিলিয়ে চাষের খরচ হচ্ছে প্রায় আট হাজার টাকা। মহকুমা কৃষিদপ্তরের কর্তাদের দাবি, মহকুমাজুড়ে বাদাম চাষ অর্থকরী ফসল হিসেবে জনপ্রিয় হয়েছে। বর্ষাতেও বাদাম বীজ চাষ করে চাষিরা ধানের চেয়ে বেশি লাভবান হচ্ছেন। নিজস্ব চিত্র