নিজস্ব প্রতিনিধি: টবেই ফলানো যাবে ড্রাগন ফ্রুট। ১৮ মাসের গাছেই মিলবে ফল। এমনটাই জানাচ্ছেন উদ্যানপালন আধিকারিকরা।
ক্যাকটাস গোত্রের এই ফল চাষে ঝক্কি নেই বললেই চলে। খরচও কম। পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ ফল। ক্রমেই চাষ বাড়ছে। সবরকম পরিবেশ মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা আছে এই গাছের। বাড়ির ছাদে কিংবা ব্যালকনিতে টবে অনায়াসেই এই ফলের গাছ লাগানো যেতে পারে। আলো-বাতাস আসে এমন জায়গায় টব রাখতে হবে। পরিচর্যার তেমন প্রয়োজন হয় না। জল খুবই কম লাগে। রাসায়নিক সার ছাড়াই চাষ করা যায়। রোগপোকার আক্রমণও তুলনামূলক কম।
উদ্যানপালন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ড্রাগন ফ্রুট ফলানোর জন্য একটু বড় আকারের টব নিতে হবে। জৈবসার দিয়ে তৈরি করতে হবে টবের মাটি। টব যেন হাল্কা থাকে। এজন্য একভাগ মাটি, একভাগ জৈবসার, একভাগ কোকোপিট অর্থাৎ নারকেলের ছোবড়ার গুঁড়ো ও বাকি একভাগ বালি দিয়ে টবের মাটি তৈরি করা যেতে পারে। এতে মাটিতে জল সঞ্চালন ভালো হয়। গাছের গোড়ায় যেন জল না জমে। তাহলে গাছ পচে যাবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ড্রাগন ফলগাছ বেড়ে উঠতে অবলম্বন দরকার। তাই টবের মাঝে একটি শক্ত পাইপ বসিয়ে দিতে পারলে ভালো। গাছের বৃদ্ধি হলে দড়ি দিয়ে ওই পাইপের সঙ্গে বেঁধে দিতে হবে। যে কোনও নার্সারিতে চারা পাওয়া যায়। অবশ্যই চারা দেখে কিনতে হবে। সুস্থ ও নীরোগ চারা দরকার। ১০-১২ ইঞ্চি লম্বা চারা বসাতে পারলে ভালো। মাঝেমধ্যে সর্ষের খোল পচিয়ে দেওয়া যেতে পারে। এটা গাছের দারুণ খাবার। নিমের নির্যাস বা নিমখোলও বিশেষ কার্যকরী।
পুষ্টি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ফলটির মধ্যে অনেক ধরনের ভিটামিন পাওয়া যায়। উল্লেখযোগ্য পরিমাণে রয়েছে ক্যালশিয়াম, আয়রন, ম্যাগনেশিয়াম, ফসফরাসের মতো খনিজ পদার্থ। আছে ফাইবার ও প্রোটিন। ফ্যাট নেই। বিশেষ কদর কম ক্যালোরির জন্য। রয়েছে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট। যা ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়। ফলটির মধ্যে থাকা প্রাকৃতিক উপাদান হজমশক্তি বৃদ্ধিতে সহায়ক। রক্তে সুগারের মাত্রা ঠিক রাখে। সুস্থ রাখে হার্ট। হাড়ের ক্ষয় রোধ করে। ডায়েটারি ফাইবার থাকায় কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। লিভারের জন্যও উপকারি। ড্রাগন ফ্রুটে ভালোমাত্রায় আয়রন রয়েছে। ফলে রক্তাল্পতা দূর করতে সাহায্য করে।
দক্ষিণ দিনাজপুরের উদ্যানপালন আধিকারিক সমরেন্দ্রনাথ খাঁড়া জানিয়েছেন, এর আদি বাস মেক্সিকো। সারাবছর ধরেই ড্রাগন ফ্রুট চাষ করা যায়। তবে এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চারা বসানোর উপযুক্ত সময়। প্রথমবার একটি গাছ থেকে গড়ে ২০টি করে ফল পাওয়া যায়। পরে সংখ্যায় বেশি ফল মেলে। একবার গাছ লাগালে ২০-২৫ বছর টানা ফল পাওয়া যায়। সেভাবে রোগপোকার আক্রমণ না হলেও গোড়াপচা ও কাণ্ডপচা রোগ দেখা যায়। ছত্রাক বা ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণে এমনটা হতে পারে। এতে আক্রান্ত গাছের কাণ্ড প্রথমে হলুদ ও পরে কালো হয়ে যায়। শুরু হয় পচন।
প্রতিকার হিসেবে আক্রান্ত অংশ কেটে ফেলতে হবে। প্রতি লিটার জলে কার্বেন্ডাজিম ১ গ্রাম বা কপার অক্সিক্লোরাইড ৪ গ্রাম ভালোভাবে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। অনেক সময় গাছে বাদামি দাগ দেখা যায়। সময় মতো রোগ দমন না করলে গাছ শুকিয়ে মারা যায়। প্রতিকার কাণ্ডপচা রোগের মতোই। কোনও কোনও সময় জাবপোকা ও দয়ে পোকার আক্রমণ হয়। ম্যালাথিয়ন বা সাইপারমেথ্রিন প্রয়োগে সুফল মেলে।