হরিহর ঘোষাল, মেদিনীপুর: একটা সময় সবং থেকে বিপুল পরিমাণ পান রপ্তানি হতো ইংল্যান্ডে। বছর চারেক আগে তাতে ছেদ পড়ে। সালমোনেলা নামে এক ধরনের ব্যাক্টেরিয়ার প্রকোপ দেখা দেয় পানে। তার জেরে সবংয়ের পান তো বটেই, এ রাজ্যের পান নেওয়া বন্ধ করে দেয় ইংল্যান্ড। সেই হারানো বাজার ফিরে পেতে এবার সবংয়েরই একদল চাষি সম্পূর্ণ জৈব পদ্ধতিতে পান চাষের উদ্যোগ নিয়েছেন। তাঁদের পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস দিয়েছে ব্লক কৃষিদপ্তর। ইতিমধ্যেই একটি সোসাইটি গঠন করেছেন সবংয়ের পানচাষিরা। যার নাম ‘অল ইন্ডিয়া এক্সপোর্ট কোয়ালিটি বেটল লিফ ফার্মার্স ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি। সোসাইটিতে প্রাথমিকভাবে ২০ জন চাষি নাম নথিভুক্ত করিয়েছেন। ব্লক কৃষি আধিকারিক অশোককুমার মাল বলেন, সালমোনেলা ব্যাক্টেরিয়ার কারণে ইংল্যান্ড পান নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। এক্সপোর্টারদের মাধ্যমেই আমরা বিষয়টি জানতে পারি। তাই বেশ কয়েকজন চাষিকে চিহ্নিত করে জৈব পদ্ধতিতে পানচাষ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এজন্য কেঁচোসার সহ বিভিন্ন উপকরণ দিতে চাষিদের সাহায্য করা হবে। আমরা চাই, এই এলাকায় পানচাষের গুণগত মান আরও ভালো হোক। যদি এই পদ্ধতি মেনে চাষ করে ফের ইংল্যান্ডের বাজার ধরা যায়, তাহলে এলাকার পানচাষিরা উপকৃত হবেন। আগামী দিনে এই এলাকার আরও বহু পানচাষি এই পদ্ধতি মেনে চাষের দিকে ঝুঁকবেন। সবংয়ের পান একসময় ইংল্যান্ডের বাজার দখল করেছিল। সবং থেকে এক্সপোর্টারদের হাত ধরে কলকাতার এয়ারপোর্ট হয়ে ইংল্যান্ডে পাড়ি দিত পান। ২০১৬ সাল নাগাদ সবংয়ের পানে সালমোনেলা ব্যাক্টেরিয়া পাওয়া যায়। এরপর ইংল্যান্ড এই পান নেওয়া বন্ধ করে দেয়। এখন সৌদি আরব আর মালয়েশিয়ায় পান রপ্তানি করা হয়। ইংল্যান্ডে ভালো বাজার থাকা সত্ত্বেও এক্সপোর্টাররা সেখানে এদেশের পান রপ্তানি করতে পারছেন না। গত দু’-তিন বছর ধরে সবংয়ের মোহার পূর্বসাইয়ের এক্সপোর্টার বিশ্বনাথ খাটুয়া সৌদি আরব, মালওয়েশিয়ায় এই এলাকার পান রপ্তানি করেন। বিশ্বনাথবাবু বলেন, বিদেশে পান রপ্তানি করার সময় কলকাতার ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করাতে হয়। তারপর প্যাকেটজাত করে লেভেলিংয়ের পর তা রপ্তানি হয়। কয়েক বছর আগে পর্যন্ত ইংল্যান্ডে এই দেশের পানের বড় বাজার ছিল। কিন্তু, সালমোনেলা ব্যাক্টেরিয়ার কারণে আর ওরা পান নেয় না। সম্পূর্ণরূপে জৈব পদ্ধতিতে পানের পরিচর্যা করতে পারলে গুণগত মান অনেক ভালো হবে। সালমোনেলার মতো ব্যাক্টেরিয়ার আক্রমণের সম্ভাবনাও কম থাকবে। বিদেশে ভালো দাম পাওয়া যাবে। ইংল্যান্ডের বাজারও ফের আমাদের সামনে খুলে যাবে। ব্লক কৃষিদপ্তর এই বিষয়ে উদ্যোগী হয়েছে। বহু পানচাষি এই পদ্ধতি মেনে চাষ করতে রাজি হয়েছেন। প্রয়োজনে চাষিদের আমরা সবরকমভাবে সাহায্য করব। সোসাইটির চাষিরা সব নিয়ম মেনে চাষ করলে সমস্ত পানই বিদেশে রপ্তানি করা যাবে। ফলে, চাষিদের পান বিক্রির জন্য চিন্তা করতে হবে না। চাঁদপুরের পানচাষি জগদীশ মাইতি, জয়দেব শাসমলের বক্তব্য, জৈব পদ্ধতিতে পানচাষ করতে আমরা রাজি। সেই কারণে সোসাইটিতে নাম নথিভুক্ত করেছি। কিন্তু, আমাদের প্রশিক্ষণের প্রয়োজন। এই পদ্ধতি মেনে চাষ করে পানের দাম ভালো পাওয়া গেলে আমাদের কোনও আপত্তি নেই। ফাইল চিত্র