বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
বিনোদন
 

সুজয়ের চেনা ছন্দে বাজিমাত করিনার
সিনেমার সমালোচনা: জানে জান  

টাইটেল কার্ড বলে দেবে, সুজয় ঘোষ পরিচালিত ‘জানে জান’ ছবিটি জাপানি লেখক কেইগো হিগাশিনোর জনপ্রিয় উপন্যাস ‘দ্য ডিভোশন অব সাসপেক্ট এক্স’ অবলম্বনে তৈরি। আম ভারতীয় দর্শক এর আগে ‘দৃশ্যম’ ছবির সূত্রে এই লেখক ও তাঁর নভেলের নাম শুনে থাকলেও থাকতে পারেন। তবে দৃশ্যমজনিত উন্মাদনা না থাক, নেটফ্লিক্সের এই ছবি কিন্তু ধারেভারে একেবারেই কম নয়। করিনা কাপুরের ওটিটি ডেবিউয়ে এই ওজনটার দরকার অবশ্যই ছিল। সঙ্গে অভিনয়ের দুই মহারথী জয়দীপ আহলওয়াত এবং বিজয় বর্মাকে নিয়ে থ্রিলারের পুরনো মেজাজে ফিরে গিয়েছেন সুজয়। 
গল্পটা ভীষণই চরিত্রনির্ভর। চরিত্রই দর্শককে টেনে নিয়ে যাবে কাহিনির অন্দরে। যেখানে দর্শক দেখতে পাবেন কালিম্পঙের কাফে মালকিন মায়া ডিসুজাকে (করিনা কাপুর)। সিঙ্গল মাদার, স্মার্ট মায়ার চোখের তলার ভাঁজ বলে দেবে তার জীবনে অনেক ঝড়ঝাপটা। কিন্তু তাতে কী? মায়ার একঝলক দৃষ্টি কালিম্পঙের হঠাৎ বৃষ্টির পরে ওঠা রোদ্দুরের মতোই ঝকঝকে। যে দৃষ্টিতে আকণ্ঠ মজে থাকে নরেন (জয়দীপ আহলওয়াত), পাহাড়ি স্কুলের অঙ্কের টিচার। প্রতিটি দৃশ্যে মুগ্ধ করেছেন জয়দীপ। অসম্ভব নিয়ন্ত্রিত অভিনয়। প্রতিটি ফ্রেম শুষে নিয়েছেন যেন। কাকে ছেড়ে কাকে দেখব? পুলিস অফিসার করণের চরিত্রে বিজয় বর্মাও টানটান অভিনয় দিয়ে থ্রিলারের আমেজ ধরে রেখেছেন নিখুঁত নৈপুণ্যে। গ্ল্যামার ছাড়া করিনাকেও দেখার মতো। চোখের তারায় তিনি অভিনয়কে রাখতে জানেন, মনে করিয়ে দিয়েছেন ‘গীত’ বা ‘চামেলি’র চরিত্রাভিনেত্রী।  
ছবিতে মায়া ডিসুজার ফেলে আসা জীবনের স্বামী অজিত হঠাৎ একদিন হাজির হয় কালিম্পঙে। যার উপস্থিতি মায়ার জীবনে কাঁটার মতো। মেয়েকে যে করে হোক ওই স্বামীর নজর থেকে বাঁচাতে হবে, তার জন্য মায়া একাগ্র। একাকী মায়ের এই লড়াইয়ে করিনা একরোখা। অতীতের গল্প যতটা সংক্ষেপে সেরে পরিচালক সোজা ঢুকে গিয়েছেন খুনে। তারপর খুন আর খুনিকে আড়ালের গল্পে। যে গল্পে খুনিকে খুঁজতে পাহাড়ি শহরে হাজির হয় পুলিস করণ। ঠিক এরপর থেকেই গোটা ছবি জুড়ে মায়া-নরেন-বিজয়ের অবাধ বিচরণ একটি মুহূর্তের জন্যও নিশ্চিন্তে বসে থাকতে দেয় না দর্শককে। থ্রিলার অথচ সারাক্ষণই নিচু তারে বাঁধা। প্রতি মুহূর্তের সাসপেন্স নয়, এছবির সম্পদ অদ্ভুত ঢিমে তালের চলন। নীলাভ ফ্রেমের যে চলনে ঠান্ডা মাথার অঙ্কের শিক্ষক ক্যারাটের শৈল্পিক দুনিয়ায় হারিয়ে যান যে কোনও সময়। অসহায় নরেনের প্রথম ভালোবাসা অঙ্ক। মায়া ডিসুজার প্রতি নিজের ভালোলাগা আড়াল করার চেষ্টা সে করে আপ্রাণ। সম্মাননীয় ‘টিচার’ মুহূর্তের অসাবধানতায় কখনও হয়ে যায় ঠাট্টার পাত্র। নরেন আর করণ পুরনো বন্ধু। বন্ধুত্বের সহজ সমীকরণ সত্ত্বেও কী একটা যেন বিঁধে থাকে দু’জনের মধ্যে। বন্ধুর সন্ধানী চোখ খুনিকে খুঁজছে বন্ধুর মধ্যে। বন্ধু নিজের মতো গল্প বিছিয়ে দিচ্ছে, গুলিয়ে দিচ্ছে সবটা। 
এ গল্পে ‘হু ডান ইট’ প্রথম থেকেই স্পষ্ট। ছবি জুড়ে মাথায় ঘোরে আদৌ কি আসল খুনিকে হাতে পাবে পুলিস? বয়ান-প্রতিবয়ানের ভাষ্যে পুলিসরূপী করণ যেমন সিরিয়াস তেমনই তার ব্যক্তিত্বের উল্টো পিঠে মায়ার প্রতি আসক্তি, আর সেটা ঝেড়ে ফেলার একরোখা চেষ্টা, বিজয় ফুটিয়েছেন দুর্দান্ত। 
কিছুদিন আগে ‘লাস্ট স্টোরিজ’-এ সুজয়ের গল্প দেখে হতাশ হয়েছিলেন যাঁরা, তাঁদের বলব, ‘জানে জান’ মাস্ট ওয়াচ। শুধু কয়েকটা প্রশ্ন রয়ে যায়, ছবিতে প্রথম যে খুনটা হল, সেই লাশটা কোথায় গেল শেষপর্যন্ত? কালিম্পঙে রেলস্টেশন কোথায়? এই খুঁতগুলো মনোযোগী দর্শকের চোখ এড়াবে না। 
অন্বেষা দত্ত

26th     September,   2023
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ